ঢাকা সোমবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ১৫ বৈশাখ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

আরও দাম বাড়ার আশায় পেঁয়াজ ছাড়া হচ্ছে না বাজারে

আরও দাম বাড়ার আশায় পেঁয়াজ ছাড়া হচ্ছে না বাজারে

ফরিদপুরে দাম আরো বাড়ার আশায় সামর্থ্যবান কৃষক, ব্যবসায়ী ও ফড়িয়া সবাই ধরে রাখছে পেঁয়াজ। মৌসুম শেষ না হলেও বাজারে বাড়ছে পেঁয়াজের দাম। ৮ দিনের ব্যবধানে কেজিতে বেড়েছে ২০-২৫ টাকা। পেঁয়াজের মৌসুম এখনো শেষ হয়নি। তার আগেই দাম বাড়তে শুরু করেছে। বাজারে দাম আরও বাড়বে, সেই আশায় সামর্থ্যবান কৃষক, ফড়িয়া, ব্যবসায়ী সবাই সাধ্যমতো পেঁয়াজ ধরে রাখছেন, সুবিধামতো সময়ে ছাড়ছেন অল্প অল্প করে। আর এতেই মোকামে বাড়ছে পণ্যটির দাম, যার প্রভাব পড়ছে পাইকারি ও খুচরা বাজারে। ফরিদপুরে মমিন খার হাটের পেঁয়াজ বিক্রেতা ইউসুফ আলী ১২ এপ্রিল দেশি পেঁয়াজ বিক্রি করেন ৪০ টাকা কেজিতে। বাছাই করা ভালো মানের পেঁয়াজ তখন ছিল ৪৫ টাকা। গত রোববার সকালে গিয়ে দেখা যায়, তিনি ৬০ টাকা কেজিতে পিয়াজবিক্রি করছেন। অবশ্য এই বাজারে কোনো কোনো দোকানি ৬৫ টাকা কেজিতেও পেঁয়াজ বিক্রি করছেন। ইউসুফ বলেন, হঠাৎ করে কী হলো, পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম হুহু করে বেড়ে গেছে। কাস্টমারকে এর জবাব দিতে দিতে হয়রান হয়ে যাচ্ছি। শুধু এই বাজারেই নয় পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ফরিদপুরের পাইকারি ও খুচরা প্রায় সব বাজারে।

ফরিদপুর পাইকারি বাজারে পাইকারিতে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ২০০০-২২০০ টাকা মন অর্থ্যাৎ ৫০-৫৫ টাকা কেজি। কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে, এদিন বিভিন্ন পাইকারি বাজারে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৪৮-৫৩ টাকায়, যা ঠিক এক সপ্তাহ আগে ছিল ২৫-৩০ টাকা কেজি। পেঁয়াজের দাম বাড়ার কারণ হিসেবে পেঁয়াজচাষি, ব্যবসায়ী ও আড়তদারেরাও প্রায় একই রকম তথ্য দিয়েছেন। তারা জানান, জমিতে এখন আর কোনো পেঁয়াজ নেই। সব পেঁয়াজ ঘরে উঠে গেছে। এসব পেঁয়াজের বেশির ভাগই সামর্থ্যবান কৃষক নিজেরা ও মজুতদারেরা কিনে সংরক্ষণ করছেন। পাশাপাশি ভবিষ্যতে দাম আরও বাড়বে, এমন আশায় তারা বাজারে কম পরিমাণে পেঁয়াজ আনছেন। এসব কারণে পেঁয়াজের মৌসুম হওয়া সত্ত্বেও বাজারে পণ্যটির দাম বেড়ে গেছে। ফরিদপুরের আড়তদার মো. শাহিন শিকদার বলেন, ফরিদপুর পাইকারি বাজারে সবচেয়ে বেশি পিয়াজ আসে সালথা, ভাঙ্গা, নগরকান্দা, মধুখালি ও বোয়ালমারী উপজেলা থেকে। ভারতের পেঁয়াজ বন্ধ থাকায় জুন-জুলাইতে পেঁয়াজের দাম বাড়বে এমন আশায় সেখানকার সামর্থ্যবান কৃষক, মৌসুমি ব্যবসায়ীরা মাচায় পেঁয়াজ সংরক্ষণ করছেন। তাই হাট-বাজার, আড়তগুলোতে পেঁয়াজের সরবরাহ কম, তাই দাম বেশি। যার প্রভাব বাজারে পড়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ১৫ দিনের ব্যবধানে ফরিদপুরের পাইকারি বাজারে মণপ্রতি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে প্রায় ৫০০ টাকা। গত শনিবার ফরিদপুরের অন্যতম বড় পেঁয়াজের বাজার বোয়ালমারী উপজেলার ময়েনদিয়া বাজারে প্রতি মণ পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ৮৫০ থেকে ২ হাজার ১০০ টাকায় (কেজি ৪৮ থেকে ৫২ টাকা)। অবশ্য পেঁয়াজের দাম বাড়ায় খুশি অনেক কৃষক। ফরিদপুর সালথার পেঁয়াজচাষি ইমরান হোসেন বলেন, ‘আমি মোট ১০০ শতক জমিতে চাষ করেছিলাম। মৌসুমের শুরুতে আমাকে পেঁয়াজ বিক্রি করতে হয়েছে ১০০০ থেকে ১২০০ টাকা মণ অর্থাৎ ২৫-৩০ টাকা কেজি। এই দামে পেঁয়াজ বিক্রি করে কৃষকের লোকসান হয়। এখন দাম বাড়ায় কৃষক লাভের মুখ দেখছে। যদিও প্রান্তিক কৃষকের হাতে এখন খুব একটা পেঁয়াজ নেই। লোন ও কীটনাশক দোকানের বকেয়া মেটাতে নগদ টাকার জন্য উৎপাদিত পেঁয়াজের বড় অংশই বিক্রি করে দিয়েছেন তারা।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে, দেশীয় কৃষকের কথা চিন্তা করে বর্তমানে পেঁয়াজের আমদানি অনুমোদন (ইমপোর্ট পারমিশনআইপি) দেওয়া বন্ধ রয়েছে। সর্বশেষ গত ৩১ মার্চ পর্যন্ত আইপি দেওয়া হয়। কৃষি মন্ত্রণালয়ের হিসেবে দেশে প্রতিবছর ৩৫ লাখ টনের বেশি পেঁয়াজ উৎপাদিত হয়, যার ৮০-৮৫ শতাংশই মার্চ-এপ্রিল মৌসুমে। তবে ২৫ শতাংশ নানাভাবে নষ্ট হওয়ায় দেশে বছর শেষে ৬-৭ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি করতে হয়।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত