চা এর রাজধানী হিসেবে পরিচিত মৌলভীবাজার জেলায় দীর্ঘ খরার পর গত এক সপ্তাহ থেকে স্বস্তির বৃষ্টি হওয়ায় প্রকৃতি যেন প্রাণশক্তি ফিরে পেয়েছে। মৌসুমের প্রথম এই বৃষ্টি পর চা বাগানের উঁচু নিচু টিলায় থোকা থোকা চা-গাছ ও বৃক্ষরাজীতে নতুন কচি পাতা বের হতে শুরু করেছে। প্রকৃতি সবুজ রং এ সেজে ওঠেছে। আর চা গাছে নতুন দুটি পাতা ও একটি কুঁড়ি গজায় চা বাগানগুলোতে কর্ম চাঞ্চল্য ফিরে এসেছে। এতদিন বড় চা বাগানগুলো কৃত্রিমভাবে পানি স্প্রে করে চা গাছে কঁচি পাতা গজানোর চেষ্টা করেও ততটা সক্ষম হয়নি তা মাত্র কয়েকদিনের কাঙ্ক্ষিত বৃষ্টি যেন আর্শীবাদ হয়ে এসেছে। জেলার শ্রীমঙ্গল, কুলাউড়া, কমলগঞ্জ, রাজনগর, বড়লেখা, জুড়ি ও সদর উপজেলায় প্রায় ৯১টি চা বাগান রয়েছে। দীর্ঘদিনের খরায় বিবর্ণ হওয়া চা গাছে দেখা দিয়েছে (গজিয়েছে) নতুন কুঁড়ির। টানা তাপপ্রবাহের পর গত তিন-চারদিনের বৃষ্টিতে নতুন কুঁড়ি ও সবুজ পাতা গজিয়েছে। চলতি মাসের শুরুর দিকে তীব্র তাপে বিবর্ণ হয়ে গিয়েছিল বাগানের অধিকাংশ চা গাছ। অনেক চা বাগানে শুরু হয়েছিল লাল রোগের প্রাদুর্ভাব।
চা উৎপাদন শুরুর মৌসুমেই জেলার ৯১টি চা বাগানগুলোতে কমে যায় চায়ের উৎপাদন। তবে গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিপাতে প্রকৃতিতে পরিবর্তন ঘটতে শুরু করেছে। চা বাগান কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে গত বুধবারের টানা বৃষ্টি হওয়ায় বাগানগুলো রক্ষায় কৃত্রিম পানি দেওয়ার প্রয়োজন ফুরিয়ে এসেছে। চলতি বছরে চায়ের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১০৩ মিলিয়ন কেজি। ২০২৩ সালে ১০৩ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদন হয়েছিল। আর ২০২৪ সালে হয় ৯৩ মিলিয়ন কেজি, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১০ শতাংশ কম ছিল। এবারও মৌসুমের শুরুতেই খরায় চা উৎপাদন ব্যহত হওয়ার শঙ্কা দেখা দেয়। এরই মধ্যে মার্চের শুরু থেকে জেলার বিভিন্ন চা বাগানে নতুন বছরে চা পাতা চয়ন শুরু হয়েছে। প্রকৃতিনির্ভর একটি কৃষিজ পণ্য হচ্ছে চা। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে চায়ের উৎপাদন ভালো হয়, এর জন্য প্রয়োজন পরিমিত বৃষ্টি ও সূর্যের কিরণ। প্রায় চার মাস আগ থেকেই চা বাগানের সেকশনগুলোয় চা গাছ ছাঁটাই করার কাজ শুরু করেছিল বাগান কর্তৃপক্ষ। ছাঁটাইয়ের কারণে চা বাগানে চলে এসেছিল অনেকটা শুষ্ক রুক্ষ ভাব। চা বাগানের জন্য সহনীয় তাপমাত্রার সীমা পেরিয়ে গেলে বিপত্তিতে পড়েন বাগান-সংশ্লিষ্টরা। বৃষ্টির অভাবে রুক্ষ বাগানের চা গাছে নতুন পাতার দেখা মিলেনি খুব একটা। এরই মধ্যে বিভিন্ন পোকামাকড়ের আক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় সামান্য যা কুঁড়ি-পাতা ছিল তাও আক্রান্ত হতে শুরু করে। অবশেষে ৪-৫ দিনের স্বস্তির বৃষ্টিতে বাগান কর্তৃপক্ষ ও শ্রমিকরা অনেকটাই আশাবাদী হয়ে ওঠেছেন।
ন্যাশনাল টি কোম্পানির ডিজিএম শফিকুর রহমান (মুন্না) বলেন, বৃষ্টিতে বাগানগুলো যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছে। কাঙ্ক্ষিত বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে ভালো ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া আপাতত বাগান গুলোতে কৃত্রিম পানি দেওয়ার প্রয়োজন হচ্ছে না। খরচও কমে এসেছে। তবে অনাবৃষ্টির কারণে ও তীব্র খরায় মৌসুমের শুরুতেই অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে। এই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে আমাদের সম্মিলিতভাবে চেষ্টা চালাতে হবে। প্রকৃতি সুপ্রসন্ন হলে আশাকরি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হতে পারে।