কাউখালীতে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভবন নির্মাণকাজে অনিয়মের অভিযোগ ১৭ বছর পর মামলা করেছে দুদক। গত সোমবার পিরোজপুর আদালতে তিন প্রকৌশলীসহ ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারীর বিরুদ্ধে আদালতে মামলা হয়েছে।
মামলার বাদী পিরোজপুর দুদক কার্যালয়ের উপ-সহকারী পরিচালক মোয়াজ্জেম হোসেন সম্রাট। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন পিরোজপুর দুদক কার্যালয়ের উপ-পরিচালক আমিনুল ইসলাম। মামলার আসামি করা হয়েছে পিরোজপুরের স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সাবেক সহকারী প্রকৌশলী বজলুর রহমান খান, বরিশাল স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী দুলাল চন্দ্র সরকার, পিরোজপুর স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সাবেক উপসহকারী প্রকৌশলী শৈলেন্দ্র নাথ মন্ডল এবং ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান নূরী এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী নাসির উদ্দিন লিটুকে।
মামলা ও স্থানীয় সূত্র জানা যায়, পিরোজপুরের কাউখালী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভবন ১৮ বছর আগে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। পরে ২০০৮ সালে স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর টেন্ডারের মাধ্যম বরিশালের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স নূরী এন্টারপ্রাইজকে প্রায় ৬ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়ে তিনতলা বিশিষ্ট হাসপাতাল ভবন নির্মাণ করার জন্য ওয়ার্ক অর্ডার দিলে প্রতিষ্ঠানটি কাজ শুরু করেছিল। নুরী এন্টারপ্রাইজ কাজ শুরু করেই না না অনিয়ম শুরু করে এক পর্যায় সামান্য কিছু কাজ করে বাকি কাজ ফেলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অতিরিক্ত বিল উত্তোলন করার অপচেষ্টা চালায়। জানা গেছে ক্ষমতার অপব্যবহার করে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজশে অসৎভাবে ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নতিকরণ প্রকল্পের স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের ও পিডি ভবন এবং ১০০০ বর্গফুট ও ৮৮০০ বর্গফুটের পৃথক দুটি আবাসিক ভবনের নির্মাণকাজ করার কথা যাহা ২০০৮ সালের ২৫ জুন চুক্তি সম্পাদন হয়ে ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে শেষ করে হস্তান্তরের কথা ছিল। নূরী এন্টারপ্রাইজ চুক্তি মোতাবেক ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনে ৮ ফুট গভীরতা করে কাজ শুরু করার কথা থাকলেও ৪ ফুট করেই কাজ শুরু করেন। ২০ মিলি রডের পরিবর্তে ১৬ মিলি, ১৬ মিলির পরিবর্তে ১২ মিলি রড ব্যবহার করেন। এমনকি ফাউন্ডেশনের গভীরতা কোন কোন স্থলে ছয় ফুটের স্থলে চার ফুট, ৮ ফুটের স্থলে চার ফুট গভীর করে ফাউন্ডেশন এর কাজ করেন। এছাড়াও প্রকৌশল অধিদপ্তরের সঙ্গে ঠিকেদারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী কোনো কাজই করেননি। অথচ ৬৩ লাখ ১৯ হাজার ৯৮৩ টাকার কাজ করে ১ কোটি ৩৪ লাখ ৩৫ হাজার ৭৬২ টাকার বিল উত্তোলন করে আত্মসাৎ করার অপচেষ্টা করে ছিল। অপরদিকে এই কাজ অসমাপ্ত রেখেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চলতি বিল নিয়ে চলে যাওয়ায় তাদের করা অবকাঠামগুলো কোনো কাজে আসেনি। বরং সরকারি অর্থ অপচয় করা হয়েছে। ভবনের কাজ সমাপ্ত না হওয়ায় কাউখালী লক্ষাদিক মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
এ ব্যাপারে পিরোজপুর স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী তানজিলা ফেরদৌস জানান পিরোজপুরে তিনি নতুন যোগদান করেছেন মামলা হয়েছে কি না- এ বিষয় কিছুই জানা নেই।
মলার বাদী পিরোজপুর দুদক কার্যালয়ের উপসহকারী পরিচালক মোয়াজ্জেম হোসেন সম্রাট বলেন অধিকতর তদন্ত শেষ রাষ্ট্রীয় সম্পদের ক্ষতিসাধন ও আত্মসাৎ-এর অপচেষ্টার অভিযোগে ৪০৯/৪২০/৫১১/১০৯ ধারাসহ ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি দমন প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারার অপরাধী।