টাঙ্গাইলে গত তিন দিনে জেলায় তাপমাত্রার উর্ধ্বমুখীপ্রবণতা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। ফলে চলমান গরমে জনজীবনে দুর্ভোগ নেমে এসেছে। হাসপাতালগুলোতে হিট স্ট্রোক, ডিহাইড্রেশন এবং উচ্চ রক্তচাপজনিত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।
টাঙ্গাইল আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এ কার্যালয়ে দিনে দুইবার অর্থাৎ বিকাল ৩টা ও সন্ধ্যা ৬টায় আবহাওয়ার পরিমাপ নির্ধারণ করা হয়। গতকাল বুধবার বিকাল ৩টায় দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা নির্ধারিত হয়েছে ৩৭.০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এরআগে মঙ্গলবার তাপমাত্রা ছিল ৩৪.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সোমবার টাঙ্গাইলে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩২.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এই তিন দিনে টানা প্রায় ৪.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বৃদ্ধিকে স্বাভাবিক বলছেন না আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা।
আবহাওয়াবিদদের মতে, এটা দেশের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহেরই প্রভাব। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকা, রাজশাহী, যশোর, কুষ্টিয়া, টাঙ্গাইল ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলগুলোর ওপর দিয়ে এখন একটি গ্রীষ্মকালীন উচ্চচাপ বলয় কাজ করছে- ফলে দিনের বেলায় সূর্যের তীব্রতা বাড়ছে এবং তাপমাত্রাও দ্রুত ঊর্ধ্বগামী হচ্ছে।
আবহাওয়া অফিস জানায়, বঙ্গোপসাগরের উপর কোনো নিম্নচাপ না থাকায় এবং বর্ষাকালীন বায়ুপ্রবাহ সক্রিয় না হওয়ায় দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল থেকে গরম ও শুষ্ক বায়ু বইছে। ফলে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। পাশাপাশি বাতাসে আর্দ্রতা কম থাকায় গরম আরও বেশি অনুভূত হচ্ছে। আগামী কয়েকদিন টাঙ্গাইলসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এই তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে। তবে ২৫ এপ্রিলের পর কিছু কিছু এলাকায় হালকা বৃষ্টি হতে পারে- যা পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক করতে পারে। সরেজমিনে টাঙ্গাইল শহর এবং আশপাশের উপজেলাগুলোতে বুধবার গরমে জনজীবনে স্থবিরতা লক্ষ্য করা গেছে। এদিন সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত রাস্তাঘাটে মানুষের চলাচল অনেকটাই কম ছিল। যারা জরুরি প্রয়োজনে বাইরে বের হচ্ছেন তাদের অধিকাংশই মাথায় কাপড় বা ছাতা ব্যবহার করছেন। প্রচণ্ড গরমে রিকশাচালক, দিনমজুর ও শ্রমজীবী মানুষজন সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন।
টাঙ্গাইল সদর উপজেলার দিনমজুর শফিকুল ইসলাম, মাজহার মিয়া, রিকশা চালক আয়েন উদ্দিন, রহিম বক্স, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালক আজমীর জামান, আব্দুল মজিদ, রাফসান মাহমুদসহ অনেকেই জানান, গত দুইদিন ধরে এমন গরম পড়ছে যে দুপুরের পর কাজ করতে পারেন না। শরীর ঝিম ঝিম করে- ঘামে কাপড় ভিজে যায়। কিন্তু না খাটলে তো পরিবারের মুখে আহার তুলে দেওয়া হবে না। তাই কষ্ট হলেও পরিশ্রম করছেন।
টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক খায়রুল হাসান জানান, প্রচণ্ড গরমের কারণে হাসপাতালগুলোতে তাপজনিত রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। এরমধ্যে হিট স্ট্রোক, ডিহাইড্রেশন এবং উচ্চ রক্তচাপজনিত রোগী রয়েছে। এসব সমস্যা নিয়ে বর্তমানে সমস্যা প্রতিদিন গড়ে ২০-৩০ জন রোগী ভর্তি হচ্ছেন। প্রচণ্ড তাপপ্রবাহে শিশু ও বয়স্করা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছেন।
তিনি জানান, গরম থেকে বাঁচতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এরইমধ্যে কিছু দিকনির্দেশনা দিয়েছে। এই সময়ে পর্যাপ্ত পানি পান করা, সরাসরি রোদে না যাওয়া, হালকা ও সুতির কাপড় পরিধান করা এবং শিশু ও বয়ষ্কদের বিশেষ যত্ন নেওয়া জরুরি। টাঙ্গাইল আবহাওয়া অধিদপ্তরের উচ্চ পর্যবেক্ষক মো. জামাল উদ্দিন জানান, বর্তমানে দেশের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এটি আগামী ২৪-৪৮ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে। এরপর উত্তর-পূর্বাঞ্চলে কিছুটা বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। তবে টাঙ্গাইলে তৎক্ষণাৎ স্বস্তির আশা করা যাচ্ছে না।
টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. আব্দুল্যাহ আল মামুন জানান, জেলা প্রশানের পক্ষ থেকে স্কুলের শিশুদের এই গরম থেকে রক্ষা করতে প্রতিষ্ঠানগুলোকে সতর্কতা অবলম্বন করতে বলা হয়েছে। চলমান এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার্থীদের বিষয়ে একটু বেশি সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।