২০২২ সালের আর্থিক খাত ও আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ
মো. মাঈন উদ্দীন, অর্থনীতি বিশ্লেষক, [email protected]
প্রকাশ : ৩১ ডিসেম্বর ২০২২, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
২০২২ সালের আর্থিক খাতে যা কিছু ভালো পদক্ষেপ ছিল তার চেয়েও তীব্র ছিল সামষ্টিক অর্থনীতিতে অস্বস্তি, নানা সংকট ও মানুষের মাঝে নানা আতঙ্ক। করোনা মহামারি কাটিয়ে ওঠার আগেই বিদায় বছরের শুরুতেই ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। সংকটে আবর্তে থাকা অর্থনীতিতে শুরু হয় নানা টানাপড়েন। হু-হু করে বাড়তে থাকে খাদ্যদ্রব্যের দাম। মূল্যস্ফীতি ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকে। দেখা দেয় জ্বালানি সংকট। কমে যায় রেমিট্যান্স প্রবাহ ও ব্যাংকিং খাতে দেখা দেয় ডলারের সংকট। আমদানি কমে যায়, রিজার্ভের ওপর আঘাত আসে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪৬ বিলিয়ন ডলার থেকে ৩৩ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে। মানুষ সঞ্চয় ভেঙে দৈনন্দিন নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বমুখী দামের সঙ্গে লড়াই করতে থাকে। বছরের শেষে ব্যাংকিং খাত নিয়ে আমানতকারীদের মাঝে ছড়িয়ে পড়ে নানা গুজব, আতঙ্ক। কয়েকটি পত্রিকার খবরে মানুষ ব্যাংক থেকে তাদের সঞ্চিত অর্থ উত্তোলন শুরু করে। ব্যাংক ও আর্থিক খাতে তাদের আমানত কতটা নিরাপদ তা নিয়ে সংশয় ও সন্দেহের মধ্য দিয়ে গেছে বছরটি। এতে প্রভাব পড়ে ব্যাংক আমানতের ওপর। এতে ব্যাংকে কমে যাচ্ছে আমানতের প্রবৃদ্ধি। অক্টোবরে আমানতের প্রবৃদ্ধি কমে ৭ শতাংশে নেমে আসে। অথচ ২০২১ সালের অক্টোবরে আমানতের প্রবৃদ্ধি ছিল ১১ শতাংশ। চলতি বছরে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম অস্বাভাবিক হারে বাড়লেও মানুষের প্রকৃত আয় বাড়েনি। মূল্যস্ফীতি হিসাবে মানুষের প্রকৃত আয় কমে গেছে। মোটা দাগে বলতে গেলে বিদায়ী ২০২২-এ আর্থিক খাত বিশেষ করে মূল্যস্ফীতি, হুন্ডি, অর্থ পাচার, নিত্যপণ্যের উর্ধ্বমুখী, খাদ্য সংকট, ডলার সংকট, শিল্প উৎপাদন হ্রাস, আমদানি পণ্যের এলসি খোলা হ্রাস, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সংকটের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হয়েছে। অর্থ সংকটে আর্ন্তজাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ), এডিবি ও বিশ্বব্যাংকের কাছেও ঋণ চেয়েছে বাংলাদেশ। সর্বশেষ আইএমএফ শর্ত সাপেক্ষে ঋণ প্রদানের সম্মতি প্রকাশ করে। ব্যাংকিং খাতের খেলাপি ঋণ কমানোর জন্য ব্যবসায়ীদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধিকল্পে বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন সার্কুলার জারি করে চলেছে। তথাপিও প্রকৃত খেলাপি ঋণ কমছে না। ব্যাংকগুলোর ঋণ আদায়ের হারও কমে যাচ্ছে। খেলাপি গ্রাহকদের সুবিধা প্রদান করতে গিয়ে ভালো গ্রাহকদের মাঝেও ঋণের টাকা ফেরত প্রদানে অনীহা দেখা দিচ্ছে, যা ব্যাংকিং খাতের জন্য অশনিসংকেত। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী সেপ্টেম্বর ২০২২ পর্যন্ত খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১ লাখ ৩৪ হাজার কোটি টাকা, যার মধ্যে রাষ্ট্র মালিকানাধীন ছয় ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৬০ হাজার কোটি টাকার বেশি। ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি খেলাপি ঋণ বেসিক ব্যাংকের, যা প্রায় ৫৯ শতাংশ। বিডিবিএলের খেলাপি ঋণ ৪০ শতাংশ। এছাড়া জনতা ব্যাংকের ২৮ শতাংশ, অগ্রণী ব্যাংকের ১৯ শতাংশ, রূপালী ও সোনালী ব্যাংকের ১৭ শতাংশ খেলাপি ঋণ।
বছরের শুরুতে ডলারের দামের ওপর পাগলা ঘোড়া ভর করে। ক্ষণে ক্ষণে ডলারের দাম বাড়তে থাকে। টাকার বিপরীতে ডলারের দাম ছাড়িয়ে যায় ১২০ টাকা। খোলা বাজারে ১১২/১১৩ টাকার নিচে ডলার পাওয়া যায় না। যদিও বাংলাদেশ ব্যাংক আমদানিতে কড়াকড়ি আরোপ করে আমদানি খরচ নামিয়ে এনেছে। অবশ্য ব্যাংক রেট, খোলা বাজারের রেট, রেমিট্যান্স খাতের রেট ভিন্ন ভিন্ন হওয়ায় ডলারের রেট নিয়ন্ত্রণে আনা কঠিন। জ্বালানি মূল্য বেড়ে যাওয়ায় বিদ্যুৎ উৎপাদন ও হ্রাস পায়। ফলে বছরের নানা সময় লোডশেডিংয়ে জনগণের কষ্টের অন্ত ছিল না। জ্বালানি সংকটে শিল্প উৎপাদন ও হ্রাস পায়। সরকার খাদ্য সংকট এড়াতে নিত্যপণ্য বাদে প্রায় অধিকাংশ পণ্যের আমাদানি বন্ধ করে দেয়। ব্যবসায়ীরা বলেছেন, জ্বালানি সংকটে উৎপাদন ২৫-৪০ শতাংশ বন্ধ ছিল। জ্বালানি সংকটে প্রায় পুরো বছরটি কঠিন সময়ের মধ্যে অতিক্রম করে। গ্যাস-বিদ্যুৎ সংকটের কারণে বস্ত্র খাত, টেক্সটাইল খাত মারাত্মক সংকটের মধ্য দিন অতিবাহিত করে। সংকটের কারণে ঢাকা, গাজীপুর ও চট্টগ্রামের অনেক কারখানা দিনে ১২ ঘণ্টা বন্ধ থেকেছে। ফলে কারখানাগুলোর উৎপাদন ক্ষমতা ৩০-৪০ শতাংশ ব্যবহৃত হয়েছে।
বিদেশি ঋণের কথা বলতে গেলে বলতে হয় গত ৫ বছরে বিদেশি উৎস থেকে বাংলাদেশের ঋণ দ্বিগুণ হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী সরকারের নেয়া ঋণের চেয়ে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি বেশি হয়েছে। ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে বিদেশি উৎস থেকে দেশের মোট ঋণের পরিমাণ ছিল ৪৫.৮১ বিলিয়ন ডলার। চলতি বছরে (২০২২) সালে জুন শেষ সরকারি বেসরকারি খাত মিলিয়ে বিদেশি ঋণের পরিমাণ। ৯৫.৮৫ বিলিয়ন (৯ হাজার ৫৮৫ কোটি) ডলার ছাড়িয়ে যায়। বাংলাদেশি মুদ্রায় এ ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ১০ লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকার ও বেশি, যা দেশের মোট জিডিপির প্রায় ২২ শতাংশ। এ বিপুল অঙ্কের ঋণের ৭৩ শতাংশ সরকারের, বাকি ২৭ শতাংশ দেশের বেসরকারি খাতের। এদিকে ২০২৩ সাল শেষে বাংলাদেশে বিদেশি ঋণের পরিমাণ ১১৫ বিলিয়ন ডলার ছড়াবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বিদেশি ঋণের বিপরীতে প্রতি বছর সুদসহ প্রায় ২০ বিলিয়ন ডলার বিদেশি ঋণ পরিশোধ করতে হবে। ২০২১ সালে সুদসহ দেশে বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের পরিমাণ ছিল ১১.৭ বিলিয়ন ডলার। চলতি ২০২২ সালে গত বছরের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ বিদেশি ঋণ পরিশোধ করতে হবে। করোনার আগের পাঁচ বছর দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ছিল প্রায় ৭ শতাংশ। জিডিপির এ প্রবৃদ্ধি ধরে রাখার জন্য সরকার ধারাবাহিকভাবে বিনিয়োগ বাড়িয়েছিল। কিন্তু রাজস্ব আয় থেকে প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থান না হওয়ায় দেশি-বিদেশি উৎস থেকে ঋণ নিয়েও বিনিয়োগ করা হয়। ফলে দেশের জাতীয় সঞ্চয় ও বিনিয়োগের মধ্যে বড় ধরনের ব্যবধান তৈরি হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়। বাংলাদেশের জাতীয় সঞ্চয় ২৫.৩ শতাংশ হলেও বিনিয়োগ হয়েছে ৩১ শতাংশ। বিনিয়োগ ও সঞ্চয়ের মাঝে এ ধরনের বড় ব্যবধান অর্থনীতিকে ভারসাম্যহীনতার দিকে ঠেলে দিয়েছে। এদিকে বছরের শুরু থেকেই ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন হওয়ায় প্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্যের দাম বেড়েছে। ফলে বেড়ে যায় খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার। গত আগস্টে এই হার বেড়ে হয় ৯ দশমিক ৯ শতাংশ। জানুয়ারিতে মূল্যস্ফীতি ছিল ৫.৮৬ শতাংশ, ফেব্রুয়ারির শেষে ৬.১৭, মার্চে ৬.২২, এপ্রিলে ৬.২৯, মে মাসে ৭.৪২ ও জুনে হয় ৭.৫৬ শতাংশ। জুলাই এ হয় ৭.৪৮ শতাংশ। আর নভেম্বরে এই মূলস্ফীতির হার দাঁড়ায় ৯ শতাংশের বেশি। মূল্যস্ফীতির এই হার বাস্তবতার বিবর্জিত। যে হারে লাগামহীন হারে পণ্যমূল্য বেড়েই চলেছে, সেই হিসাবে মূল্যস্ফীতি ১২ শতাংশের ওপরে হওয়ার কথা, যা বিশ্লেষকরা মনে করেন।
২০২২ সালের আমদানি-রপ্তানির বাণিজ্যে রেকর্ড পরিমাণ বাণিজ্য ঘাটতি পরিলক্ষিত হয়। আমদানি যে পরিমাণ হয়েছে রপ্তানি তার তুলনায় কম হওয়ায় ঘাটতি দেখা দেয়। এই বছর আমদানি হয়েছে ২ হাজার ৫৫০ কোটি ৫০ লাখ ডলারের পণ্য। গত বছর (২০২১) এই একই সময়ের তুলনায় বেড়েছে ৬.৭২ শতাংশ। আর রপ্তানি হয় ১ হাজার ৫৯১ কোটি ৮০ লাখ ডলারের পণ্য, যা গত বছরের তুলনায় ৮ শতাংশ বেশি। আমদানির চেয়ে রপ্তানি কম হওয়ায় বাণিজ্য ঘাটতি আরও বেড়ে যায়। বৈশ্বিক ঋণ মান নির্ণয়কারী সংস্থা এস অ্যান্ড পি গ্লোবাল রেটিংস সম্প্রতি বাংলাদেশের ঋণমান প্রকাশ করেছে। তাদের মতে বহিঃস্থ খাতের চ্যালেঞ্জের মধ্যে বাংলাদেশের চলতি হিসাব ও বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভের চাপ সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশের নিট বহিঃস্থ ঋণ পরিস্থিতি দুর্বল হয়েছে। দীর্ঘ সময় ধরে যদি পণ্যমূল্য বাড়তে থাকে এবং আমদানি চাহিদা বাড়তে থাকে তাহলে টাকার আরও অবমূল্যায়ন হতে পারে। ফলে অর্থনীতির বহিঃস্থ খাতের আরও অবনতি হতে পারে। বছরের শেষের দিকে আর্থিক খাতের আলোচিত বিষয় ছিল ব্যাংক ঋণের কেলেঙ্কারি। নতুন করে যোগ হয়েছে ইসলামি ধারার ব্যাংকগুলোর ঋণ অনিয়ম। ঋণ অনিয়মের বিষয়টি কয়েকটি জাতীয় দৈনিক ও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে স্থায়ীয় আমানতকারী ও প্রবাসী ও অনিবাসী আমানতকারীদের ভাবিয়ে তোলে। গ্রাহকদের মাঝে ব্যাংক থেকে আমানত তোলার হিড়িক পড়ে যায়। মিডিয়ার মারফতে জানা যায় প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকার আমানত অল্প সময়ে তুলে নেওয়ার খবর। অবশ্য বাংলাদেশ ব্যাংক পরে ব্যাংকে গ্রাহকদের আমানত নিরাপদ ঘোষণা করলে গ্রাহকদের মাঝে অনেকটা স্বস্তি, আস্থা ফিরে আসে। বাংলাদেশ ব্যাংক গ্রাহকদের গুজবে কান না দিতে বলেছে এবং ইসলামী ব্যাংকসহ সব ব্যাংকে গ্রাহকদের আমানত নিরাপদ এ নিশ্চায়তা ঘোষণা দেন। ব্যাংকিং খাতের প্রতি আস্থার ফাটল অতিতে কখনও এমনটি দেখা যায়নি। এতে ব্যাংক ব্যবস্থার বাইরে যাওয়া অর্থের পরিমাণ বেড়ে যায়। বছরের শেষের দিকে রেমিট্যান্সেও কিছুটা ধস নামে। কারণ হুন্ডির মাধ্যমে অবৈধভাবে রেমিট্যান্স আসা বেড়ে যায়। আমাদের দেশে প্রায় ৫১ শতাংশ বৈধ পথে রেমিট্যান্স এলেও প্রায় ৪৯ শতাংশ আসে অবৈধ বা হুন্ডির মাধ্যমে। যদি প্রতি মাসে ১০-১২ বিলিয়ন ডলার বৈধ পথে রেমিট্যান্স আনা যায়, তাহলে আমাদের রিজার্ভ অনেক বেড়ে যেত। বৈধ পথে রেমিট্যান্স আসতে হলে প্রবাসীদের দৌড় গোড়ায় ব্যাংকিং চ্যানেলকে যেতে হবে। তাদেরকে উৎসাহিত করতে হবে। ব্যাংকিং খাতের প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস বৃদ্ধি করতে হবে। বর্তমানে আর্থিক খাতের যে শৃঙ্খলাহীনতার ঘাটতি হয়েছে, তার মূলে রয়েছে জবাবদিহি ও স্বচ্ছতার অভাব। অর্থনীতিতে যে বৈষম্য বিরাজ করছে, তার মূলে রয়েছে সুশাসনের অভাব। সুশাসনবিহীন অর্জন সুষ্ঠু বণ্টনের ক্ষেত্রে বড় বাধা। আমাদের অর্থনীতির চালিকাশক্তির অন্যতম হলো বিকাশমান মধ্যবিত্ত শ্রেণি। ডিজিটাল যুগে বৈশ্বিক জ্ঞান ভান্ডারের সঙ্গে সংযুক্ত মধ্যবিত্ত শ্রেণি শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সেবা থেকে কাঙ্ক্ষিত সুফল না পেলে অর্থনীতি বৈষম্যের শিকার হবে। সমাজে তার ঋণাত্মক প্রভাব দেখা দেবে। দেখা দেবে নানা অস্থিরতা ও অরাজকতা। আমাদের আর্থিক খাতে যে সফলতা ও সম্ভাবনা রয়েছে এবং বর্তমানে সামষ্টিক অর্থনীতিতে অস্বস্তি বিরাজ করছে তা থেকে উত্তরণের জন্য বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে। যেমন ঃ ডলার সংকট, ব্যাংকির খাতের খেলাপি ঋণ আদায়, বিদেশি ঋণ পরিশোধের ধাক্কা ও মেগা প্রকল্পের অর্থ সংস্থানের ঘাটতি, মূল্যস্ফীতির ধাক্কা সামালসহ রপ্তানিতে ভাটার সম্ভাবনা। সিডিপি বলেছে, পণ্য আমদানিতে কর রেয়াতের যে সুযোগ রয়েছে, তা বাতিল করা যেতে পারে। ন্যূনতম বেতন/মজুরি বাড়ানোর পদক্ষেপ নিতে হবে। খাদ্য সংকট এড়াতে অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বাড়াতে হবে। কৃষি খাতে ভর্তুকি অব্যাহত রাখতে হবে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি ক্ষেত্রে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা রয়েছে। এজন্যই নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে বরাদ্দ বাড়াতে হবে। ব্যাংকিং খাতের জন্য গ্রাহকদের আস্থা ও বিশ্বাস বাড়ানোর ব্যবস্থা করতে হবে। বিনিয়োগের সুদের হার বাজার ব্যবস্থার ওপর ছেড়ে দিতে হবে। ঋণ আদায় জোরদার করার জন্য অর্থঋণ আদালতকে যুগোপযোগী ও ঋণখেলাপিদের কঠোর শাস্তি ও সামাজিকভাবে বয়কট করতে হবে। আর্থিক খাতের উন্যতম চ্যালেঞ্জ হলো সুশাসন প্রতিষ্ঠা। এটা প্রতিষ্ঠিত করতে না পারলে প্রবৃদ্ধিও কমে যাবে। টেকনোলজি-ভিত্তিক ব্যাংকিংয়ের বিস্তার ঘটিয়ে সেবার মান বৃদ্ধি করতে হবে। পাশাপাশি সাইবার নিরাপত্তায় জোর দিতে হবে। দক্ষ ও প্রশিক্ষিত জনশক্তি এই খাতের উন্নয়নের চালিকাশক্তি। এই খাতের বিপর্যয় এড়াতে পর্যাপ্ত মূলধন ও তারল্য সংরক্ষণে যত্নবান হতে হবে। গ্রাহকের আমানত সুরক্ষা করতে হবে। অর্থাৎ সঠিক স্থানে, উপর্যুক্ত ডকুমেন্ট ও যাচাই-বাছাই করে বিনিয়োগ করতে হবে। মূলধন, তারল্য ও ঋণ ঝুঁকির বিপরীতে প্রয়োজনীয় প্রভিশন সংরক্ষণ ও গুরুত্বপূর্ণ। গ্রাহকের আস্থা ধরে রাখা ব্যাংকগুলোর জন্য এক বড় চ্যালেঞ্জ। গ্রাহকের চাহিদাগুলোকে গভীরভাবে উপলব্ধি করা ও নতুন ও পুরোনো সব গ্রাহকের সঙ্গে সুসম্পর্ক উন্নয়নে চেষ্টা করা। চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ব্যাংকারদের কৌশল উদ্ভাবনে যত্নবান হওয়া উচিত।