প্রকল্প বাস্তবায়নে জটিলতা
সক্ষমতা বাড়াতে হবে
প্রকাশ : ৩১ ডিসেম্বর ২০২২, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
সময়মতো প্রকল্প বাস্তবায়ন কমই হয়ে থাকে। এতে করে নানা জটিলতার উদ্ভব হয়, একই সঙ্গে প্রকল্পের বাজেটও যায় বেড়ে। জনদুর্ভোগও তৈরি হয়। এমন অভিজ্ঞতা রাজধানীবাসীরও বেশ হয়েছে। উড়াল সেতু এবং হালের মেট্রোরেল বাস্তবায়নকালে রাজধানীর ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়, যা নাগরিক অস্বস্তির কারণ হয়। আর বৈদেশিক অর্থপুষ্ট প্রকল্পে সময়ক্ষেপণ ঘটলে দেশের সক্ষমতা নিয়েই প্রশ্ন ওঠে। আটকে থাকে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা। পরিতাপের বিষয় হলো, প্রকল্প বাস্তবায়নের পথে দেশ এখন এমন কিছু সমস্যার মুখোমুখি হয়েছে। চারদিকে যখন ডলার সংকটে হাহাকার চলছে, সেই সময়ে পাইপলাইনে জমেছে বৈদেশিক অর্থের পাহাড়। প্রকাশ, ইআরডির সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, এখন জমা আছে ৫০ দশমিক ৩৪ বিলিয়ন বা ৫ হাজার ৩৪ কোটি মার্কিন ডলার, যা স্থানীয় মুদ্রায় (প্রতি ডলার ১০০ টাকা ধরে) প্রায় ৫ লাখ ৩ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। পাইপলাইনে অর্থের স্ফীতি মানে বৈদেশিক অর্থছাড় কম হচ্ছে, তার মানে প্রকল্পের বাস্তবায়নে ধীরগতি বিরাজমান। অবশ্য দায়িত্বশীলরা বলছেন, বৈদেশিক অর্থের পাইপলাইন বাড়ছে, সেই সঙ্গে অর্থছাড়ও (খরচ) বাড়ছে। তবে আরও বেশি অর্থছাড় বাড়ানো প্রয়োজন। ঘুরেফিরে প্রকল্প বাস্তবায়নে সক্ষমতার বিষয়টি সামনে চলে আসছে, যা অনভিপ্রেত।
প্রশ্ন জাগে, কেন প্রকল্পের কাজ সময়মতো বাস্তবায়নে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে? বিষয়গুলো সংশ্লিষ্টদের অজানা নয়। সূত্রমতে, সার্বিকভাবে সব ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতির বেশ কিছু কারণ নির্ণয় করেছে বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি)। এগুলোর মধ্যে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা ছাড়াই প্রকল্প গ্রহণ এবং প্রকল্প তৈরিতেই দুর্বলতা ও দক্ষতার অভাব অন্যতম। এছাড়া আছে যেনতেনভাবে প্রকল্প তৈরি, বাস্তবায়ন পর্যায়ে কার্যকর তদারকির অভাব, নিয়মিত ও কার্যকরভাবে পিআইসি (প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি) এবং পিএসসি (প্রজেক্ট স্টিয়ারিং কমিটি) বৈঠক না হওয়া। সেই সঙ্গে জমি অধিগ্রহণে জটিলতা এবং দরপত্র প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রতা। পাশাপাশি রয়েছে প্রয়োজনীয় অর্থছাড় না হওয়া, প্রকল্প পরিচালকদের অদক্ষতা, ঘন ঘন প্রকল্প পরিচালক বদলি প্রভৃতি। এছাড়া বৈদেশিক সহায়তাপুষ্ট প্রকল্পে উন্নয়ন সহযোগীদের সময়ক্ষেপণকেও দায়ী করা হয়েছে। আরও আছে বৈদেশিক অর্থায়ন নিশ্চিত না হতেই প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া। এক্ষেত্রে আইএমইডি বলেছে, ২০২০-২১ অর্থবছরে বৈদেশিক অর্থায়ন নিশ্চিত না হয়ে সাধারণত প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয় না। কিন্তু চীন, ভারত এবং সরবরাহকারী ঋণের কিছু প্রকল্পে ছাড় দেওয়া হয়। যার বেশির ভাগই যথাসময়ে বাস্তবায়ন হয়নি। পরবর্তীকালে ঋণ চুক্তির পর আরডিপিপি (সংশোধিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) অনুমোদন দিলে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। ফলে প্রকল্পের মেয়াদ অনেক বাড়াতে হয়েছিল।
যেহেতু সমস্যাগুলো চিহ্নিত, তাই সমাধানও সহজ। সংগত কারণেই প্রকল্প বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রতা অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। স্মর্তব্য, পাইপলাইনের অর্থব্যয় বাড়ানো এ সময়ে অত্যন্ত জরুরি। কেননা, ডলার সংকট মোকাবিলায় এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। বর্তমান পরিস্থিতিতে বৈদেশিক সহায়তাপুষ্ট প্রকল্পের গতি বাড়ালে দু’দিকে লাভ হবে। অর্থাৎ দেশে কিছু ডলার আসবে এবং এই ব্যয়ের কারণে মূল্যস্ফীতিতে তেমন কোনো প্রভাবই ফেলবে না। তথ্যমতে, বাংলাদেশ তার অর্থনীতির সক্ষমতার অনেক কম বৈদেশিক ঋণ নিচ্ছে। তবে গত কয়েক বছরে ঋণ গ্রহণ বেড়েছে। এই ঋণ পরিশোধেরও চাপ বাড়বে আগামী দিনে। এই অবস্থায় প্রকল্প বাস্তবায়ন বাড়ানোর চেষ্টা করতে হবে। তবেই প্রকল্পগুলো কার্যকর সুফল আমরা পাব।