ঢাকা ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

নতুন বছরের নবউদ্দীপনা

সামছুল আলম দুদু এমপি, রাজনীতিক ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য
নতুন বছরের নবউদ্দীপনা

২০২৩ সাল নবউদ্দীপনায় আমাদের স্বপ্নের সোনার বাংলার যাত্রা হলো শুরু। অভূতপূর্ব বিস্ময়কর সাফল্যের সাক্ষী হয়ে ভবিতব্যের স্বপ্নচূড়ায় পৌঁছে যাব অচিরেই। এখানে স্বাধীন বাংলাদেশে থাকবে না হানাহানি, থাকবে না বৈষম্য, দূর হবে যত সব অশান্তি অনবদ্য, ভালোবাসায় ভরে উঠবে বাঙালির সমাজ জীবন। ২০২২ সালে দুটো বড় স্বপ্ন বাস্তবায়ন হয়েছে। একটি পদ্মা সেতু, অন্যটি মেট্রোরেল। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের দিকদর্শনের প্রতিচ্ছবি এ দুটো স্বপ্ন বাস্তবায়ন হওয়ায় বাংলাদেশের মানুষ যেমন আনন্দণ্ডউচ্ছ্বাসে আহলাদিত, তেমনিভাবে গোটা দুনিয়ার কাছে শেখ হাসিনা হয়েছেন অভিনন্দিত। তিনি যে পারেন তা বুঝিয়ে দিয়েছেন অক্ষরে অক্ষরে। আমাদের প্রিয় নেত্রী গণতন্ত্রের মানসকন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনার অসীম সাহস, সততা। সে সঙ্গে মানুষের প্রতি ভালোবাসা তার অগ্রযাত্রাকে ত্বরান্বিত করেছে। ডিজিটাল বাংলাদেশের পর স্মার্ট বাংলাদেশের পথে এক নতুন মাইলফলকের নাম মেট্রোরেল। ইলেকট্রিক গণপরিবহনের নতুন ধারণা বাস্তবায়ন হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে। ২৮ ডিসেম্বর ২০২২ একটি সোনালি ঐশ্বর্যময় দিন। কেননা, এ দিনই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী উত্তরার দিয়াবাড়ি এলাকায় মেট্রোরেলের শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করেন এবং তিনি নিজে সাধারণ নাগরিক মর্যাদায় কাউন্টার থেকে টিকিট কেটে রেলে ভ্রমণ করে এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। ইতিহাসের পাতায় দিনটি চিহ্নিত হয়ে থাকবে এবং আগামী প্রজন্মকে উদ্বেলিত করবে। প্রধানমন্ত্রীর সহযাত্রী হিসেবে তার ছোটবোন রেহানা ছাড়াও সরকারি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতৃবৃন্দ, মন্ত্রিপরিষদের সদস্যবর্গ, সংসদ সদস্য ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ছিলেন। পাশাপাশি কিছু সাধারণ যাত্রীও ছিলেন। এ যেন ভিন্ন রকম অনুভূতি। সমৃদ্ধশীল বাংলাদেশের নতুন সোপান মেট্রোরেল আগামী প্রত্যাশাকে অনেকাংশে বাড়িয়ে দিবে। পরিবহন ব্যবস্থায় নতুন যুগে আমরা প্রবেশ করেছি। আমাদের মেট্রোরেলে এম আরটি ০৬ মডেলের বৈদ্যুতিক ব্যালাস্ট সংযুক্ত করা হয়েছে। যেটা বিশ্বমানের। এর ফলে রেল কোনো সিøপ ছাড়াই চলতে সক্ষম হবে। শব্দ ও কম্পন নিয়ন্ত্রণের আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহৃত হবে এই রেলে। আধুনিক বৈদ্যুতিক এ পরিবহনে বৈদ্যুতিক খরচও কম হবে। প্ল্যাটফর্মগুলোতে যাত্রী নিরাপত্তায় রাখা হয়েছে স্ক্রিন ডোর সিস্টেম। মহিলা যাত্রীদের জন্য রয়েছে ভিন্ন বগি। পুরুষ যাত্রীর সহযোগী মহিলাযাত্রী সব বগিতেই চড়তে পারবে। বৈদ্যুতিক ব্যবস্থায় রয়েছে আধুনিকতা। সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ সচল রাখতে স্বতন্ত্র বিদ্যুৎ প্রকল্পও স্থাপন করা হয়েছে। আকস্মিক বিদ্যুৎ বিভ্রাট হলেও অটোমেটিক চার্জিক বিদ্যুৎ ব্যবস্থার কারণে চলাচলে সমস্যা হবে না। রাজধানীর যানজট নিরসন এবং গ্রিন পরিবেশ রক্ষায় এই রেল কার্যকর ভূমিকা রাখবে। সাশ্রয় হবে কর্মঘণ্টা। আপাতত আগারগাঁও থেকে উত্তরা দিয়াবাড়ি পর্যন্ত ৬টি বগি বিশিষ্ট ১০টি ট্রেন চলাচল করবে। পরবর্তী সময়ে মতিঝিল থেকে উত্তরা পর্যন্ত চালু করা হবে এই মেট্রোরেল। উল্লেখ্য, মেট্রোরেলের প্রথম চালক একজন নারী। মরিয়ম আফিজা নামের এই মহিলা চালক নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কেমিস্ট অ্যান্ড কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করে মেট্রোরেলের চালক হিসেবে কর্মজীবনে প্রবেশ করেন। বাংলাদেশ ও বাঙালির গর্ব মরিয়ম আফিজা নতুন ইতিহাসের অংশীদার হলেন। নারীর ক্ষমতায়ন ও নারী সার্বজনীন অধিকারের আরেক দৃষ্টান্ত স্থাপিত হলো আমাদের দেশে।

উল্লেখ্য, বিশ্বের প্রায় অর্ধশতাধিক দেশে মেট্রোরেলের সেবা চালু রয়েছে। জনবহুল চীনেই ৪৬টি মেট্রো সিস্টেম রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, মালয়েশিয়াতে যুক্তরাজ্যসহ উন্নত অনেক দেশেই এ সিস্টেম রয়েছে। এখন বাংলাদেশও উন্নত দেশের ক্লাবে যুক্ত হলো। ২০১৬ সালের ২৬ জুন এম আরটি-৬ প্রকল্পের নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। সে সময় নিন্দুকেরা এ নিয়ে অনেক সমালোচনা, ঠাট্টা-মশকরা করেছিল। তথাকথিত বুদ্ধিজীবীও এ কাজের প্রশংসা করতে কার্পণ্য দেখিয়ে অসম্ভব বলে মনে করেছিল। টাকার অপচয় এবং দুর্নীতির গন্ধ খুঁজতেও উঠে পড়ে লেগেছিল। আজ তাদের মুখে ছাই পড়েছে। পদ্মা সেতুর ক্ষেত্রেও অণুরূপ প্রতিক্রিয়া ছিল। কিন্তু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সবকিছু উপেক্ষা করে স্বপ্ন বাস্তবায়নে কাজ করেছেন নিরলসভাবে। নিজে এসব কাজের মনিটর করেছেন সর্বক্ষণ। দীর্ঘপথ পরিক্রমায় সাড়ে ৬ বছর পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নতুন আধুনিক এই পরিবহণ ব্যবস্থার উদ্বোধন করে বাঙালি জাতিকে অনন্য গৌরবের অংশীদার করলেন। ৩৩ হাজার ৪৭১ কোটি ৯৯ লাখ টাকা ব্যয়ে উত্তরা থেকে কমলাপুর পর্যন্ত ২১ দশমিক ১৬ কিলোমিটার এই মেট্রোরেল নির্মাণ কাজের অংশীদার জাপানের উন্নয়ন সংস্থা জাইকা। পদ্মা সেতুর মতো মেট্রোরেলের উদ্বোধনেও গোটা জাতি আনন্দণ্ডউচ্ছ্বাসে মেতে উঠছে।

আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তিনি নিজেই একজন কর্মকুশলি নেতা। তিনি উপলব্ধি করেছেন একটি দেশ ও জাতিকে উন্নত শিখড়ে পৌঁছে দিতে হলে প্রথমে চাই যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন। কম সময়ে যোগাযোগ নেটওয়ার্ক তৈরি করতে না পারলে প্রকৃত উন্নয়ন সম্ভব নয়। তাই তিনি গ্রহণ করেন আধুনিক যোগাযোগ প্রকল্প। সে মোতাবেক দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থাকে উন্নত করে চলেছেন। একই সঙ্গে গোটা দেশে বিদ্যুতায়নেও সফলতা দেখিয়েছেন। আজ উন্নত দেশের মতো সারা দেশে বিদ্যুৎ সঞ্চালনে সক্ষম হয়েছেন। দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলেও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি ঘটোছে। আধুনিকতার ছাপ রয়েছে প্রতিটি কাজে। এই তো কিছুদিন আগে গত নভেম্বর ২০২২ পার্বত্য জেলাগুলোতে ১০০টি সেতু নির্মাণ শেষে উদ্বোধন করেছেন তিনি। ৬৪ হাজার গ্রামের ভেতর দিয়ে পাকা রাস্তা নির্মিত হয়েছে। শহর থেকে গ্রামের দূরত্ব বলতে কিছু নেই। প্রতিটি বিভাগীয় শহর থেকে তার গ্রামীণ জনপদে প্রবেশ করতে পারে অতি অল্পসময়ে। কেননা, প্রতিটি গ্রামেই গাড়ি চলতে পারে এমন রাস্তাঘাট তৈরি হয়েছে। দেশের কাঠামোগত উন্নয়নে যে বিস্ময়কর সাফল্য অর্জিত হয়েছে, তাতে এ দেশের মানুষকে আর পেছনে তাকাতে হবে না। মানুষ এগিয়ে যাবে অনবদ্য প্রেরণায়। এ প্রেরণা তৈরি হচ্ছে, আমাদের প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার কর্মস্পৃহার উৎস থেকে। তিনি জুগিয়ে যাচ্ছেন সাহস ও শক্তি। প্রতিটি মানুষ তার নিজস্ব ভাবনার জগতকে করছে প্রসারিত। এই বিগত ৩টি বছর অচেনা মহামারি করোনার সঙ্গে যুদ্ধ করে আসছি এতটুকু ক্লান্ত হইনি­- প্রধানমন্ত্রী সাহস জুগিয়েছেন বলে। অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখতে জীবন-জীবিকার সমন্বিত ধ্যান-ধারণা প্রতিষ্ঠা করতে নতুন নতুন দর্শন উপস্থাপন করেছেন তিনি। কোভিড নিয়ন্ত্রণে এলেও এখনও পুরোপুরি পরাস্ত করতে পারিনি আমরা। শুধু আমরা নই, গোটা বিশ্বও শতভাগ সফল নয়। কোভিড পরিস্থিতির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে- রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, ফলে পৃথিবী মূল্যস্ফীতির কবলে পড়েছে। তারপরও বাংলাদেশের মানুষ অপেক্ষাকৃত ভালো আছে। আমাদের রয়েছে ১৭ কোটি মানুষের ৩৩ কোটি হাত। এই ৩৩ কোটি হাত যদি কর্মে সচল থাকে, তবে কোনো সমস্যাই সমস্যা নয়। ২০২৩ সাল দুর্ভিক্ষের বছর হিসেবে আগাম ঘোষণা দিয়েছে বিশ্ব খাদ্য সংস্থা। কিন্তু আমাদের প্রধানমন্ত্রী এতে শঙ্কিত নন। কারণ বাংলাদেশ একটি উর্বর ভূমিখণ্ড। তিনি বারবার বলছেন, এক ইঞ্চি জমিও যাতে অনাবাদি না থাকে। আমরা যদি আমাদের ভূমি ব্যবহারে সচেতন থাকি, তবে খাদ্য অভাব স্পর্শ করতে পারবে না। সুতরাং ২০২৩ সাল আমাদের বাঙালির জন্য সোনালি স্বপ্নের দ্বার উন্মুক্ত থাকবে।

আমাদের প্রধানমন্ত্রী জনগণের জন্য যা মঙ্গলকর, তিনি সে রকম কর্মসূচি গ্রহণ করে এগিয়ে যাচ্ছেন। আমাদের সবাইকে জীবনযুদ্ধে লড়াই করতে হয়; সমস্যার সম্মুখীন হয়ে সেগুলোকে অতিক্রম করে, জীবনের পরিপূর্ণতা লাভের চেষ্টায়। যুদ্ধের অভিজ্ঞতা আমাদের সামনেই রয়েছে। জীবনযুদ্ধে জয় লাভ করতে নিজেদের শক্তি অর্জন করতে হবে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী নিজে শক্তিমান ও ভয়হীন তাই সব নাগরিককে তিনি শক্তিমান ও ভয়হীন হতে পরামর্শ দেন। নির্ভীক ও শক্তিমান জাতি কখনও পরাজিত হয় না। ১৯৭১ সালে সে প্রমাণ আমরা দিয়েছি। কাজেই নতুন বছরে যে উদ্দীপনায় যাত্রা শুরু হয়েছে, আমরা লক্ষ্যে পৌঁছে যাব দুর্বার গতিতে। মঙ্গলময় শোভাযাত্রার অনবদ্য গতি অব্যাহত থাকবে যুগ-যুগান্তরে।

আলোকিত বাংলাদেশ
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত