ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

অভিমত

নতুন বছর : পরিবেশ হোক জাগ্রত ও চেতনার

গৌতম কুমার রায়, গবেষক, উদ্ভাবক ও পরিবেশ ব্যক্তিত্ব
নতুন বছর : পরিবেশ হোক জাগ্রত ও চেতনার

সময়ের চাকায় বছর ঘুরে নতুন বছরের আগমন। নতুন বছরের কারণে ঋতুর যে পরিবর্তন সে জন্য পরিবেশের প্রাণিকূলেরও আনন্দ ও আতঙ্ক উন্মাদনার শেষ নেই। সজাগ শক্তিতে প্রকৃতির রূপ ও রসের মোহ লাভের জন্য উন্মুখ প্রাণী সব। আবহমান প্রাণীর অস্তিত্বের সঙ্গে জড়িয়ে আছে প্রকৃতি এবং তার পরিবেশ। মানুষের উন্নত জীবন-যাপন, ভোগবিলাস, আহার, বাসস্থান, জীবন ধারণের মহাঔষধ সব কিছুর অব্যাহত জোগান দিচ্ছে এই প্রকৃতি। এই যোগান নিতে গিয়ে, মানুষই শুধু প্রকৃতি এবং তার পরিবেশকে ক্ষতবিক্ষত করে চলেছে। যে ভোগের ধারাবাহিকতায় বনে গাছ-জলে মাছ টিকছে না। পাহাড় থেকে জলাশয় হারিয়ে যাচ্ছে নিমেষই, নদী তার মোহনা দখলে ক্ষয় হচ্ছে। ইটের ভাটায় কৃষি জমির ‘টপ সোয়েল’ পুড়ছে। বন এবং তাকে আশ্রয়ে নিয়ে যে পশু পাখি, গুল্ম লতা, তারা এখন নাম লেখাচ্ছে বিলুপ্তির তালিকায়। যার কারণে আমাদের সুখের পৃথিবী উতপ্ত হয়ে উঠছে। পুড়ছে জীবের আশ্রয় স্থান। কার্বন-ডাই-অক্সাইডের কারণে উষ্ণায়ন বাড়ছে। তাপের কারণে বরফ গলে যাচ্ছে। উপকূল চলে যাচ্ছে জলের তলে। আবার প্লাস্টিকের পরতে সাগর পর্যন্ত ভড়াট হয়ে যাচ্ছে। আমাদের জলের ভা-ার শুকিয়ে আসছে। বাতাস বিষাক্ত। শব্দ কান নষ্ট করে তুলেছে। এই কারণে জীবের অসুখ এবং স্থিরতা এমনকি মানসিকতা বিগরে গেছে। এভাবে নষ্ট হয়েছে আমাদের সমাজ-সংস্কৃতি এবং পরিবারগুলোও। আইনের পর আইন কিংবা পরিবেশ দিবস ঘোষণা দিয়ে ক্ষতির গতি রোধের চেষ্টা করা হচ্ছে। গ্রামকে আধুনিক বসবাসের জন্য শহরায়ন করে গড়ে তুলতে গিয়ে প্রকৃতির পরিবেশ বিবর্ণ হয়ে পরেছে। আমাদের আহারের বাড়তি জোগান দিতে গিয়ে খেলার মাঠ, উদ্যান, খাল-বিল, নদী-নালা হারিয়ে গেছে। জমি কেমিক্যাল পেস্টিসাইডের ব্যবহারের জন্য বিবর্ণ হয়েছে, মাটি আজ শক্তি হারিয়ে হাড়-কঙ্কালে গিয়ে পৌঁছেছে। দিন দিন আমাদের বসবাসের গ্রহটা ঘনঘন ভয়ংকর প্রাকৃতিক দুর্যোগের করাল গ্রাসে খণ্ডবিখণ্ড হয়ে পরেছে।

১৯৭২ খ্রিস্টাব্দে জাতিসঙ্ঘ পৃথিবীর এই অবক্ষয় মোকাবিলায় বিশেষ দিবস ঘোষণা করেছে। সেই থেকে দিবস এলে, সভা-সমাবেশ হয়। অবক্ষয় চিহ্নিত হচ্ছে। চিহ্নিত হচ্ছে অপরাধী ও অপরাধের। কাজের কাজ আসলে তারপর আর কিছুই হচ্ছে না। ১৯৭২-২০২২ খ্রিস্টাব্দ। ৫০ বছরের খতিয়ান ফলাফল শূন্য। বিশ্বে কিছু মানুষ বিবেকের তারনায় রাস্তায় চিৎকার চেচামেচি করে ক্লান্ত হয়ে অবশেষে ঘরে উঠে যান। গত বছর অর্থাৎ ২০২২ খ্রিস্টাব্দে পরিবেশ দিবসে স্লোগান ছিল ‘একটাই কিন্তু পৃথিবী’। এই স্লোগানের তাৎপর্যটা কিন্তু বেশ। এতসবের পরও প্রকৃতি এবং তার পরিবেশ ধ্বংস হয়েই চলেছে। কষ্টটা এখানেই যাদের কারণে এই ধ্বংস যজ্ঞ, তাদের দায় পরছে গরিব ও দুর্বল মানুষের দেশের ওপর। আমরা সামষ্টিকভাবে কখনও ভাবছি না, এই প্রকৃতি কোনো জীবের একার সম্পত্তি নয়। অন্য অনেক জীবের আহার, আশ্রয় টিকে থাকাটাকে আমরা ধ্বংস করে ফেলতে পারি না। আবার আমরা বেমালুম ভুলে গেছি, অন্য জীব টিকতে না পারলে, মানুষও স্বাভাবিক সুখে টিকতে পারবে না। এ জন্য মানুষের জীবন হবে ঝুঁকিপূর্ণ এবং দুর্বিষহ।

নতুন বছর আমাদের জন্য নতুন আশা আর ভরসায় সুখের হয়ে উঠুক। গেল সময় যাই যাক না কেন, আগামী ভালো আসুক, ভালো আসুক ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ। আমাদের মাঠে ফল-ফসল ভালো হোক। দেশের অর্থনীতি পুষ্ট হোক। সমাজে শক্তি ও শান্তি ফিরে আসুক। রাজনীতিতে ঐক্যের সুরে দেশ এগিয়ে যাক, স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্নপূরণে। গাছ-মাছ, পাহাড়, নদী-খাল, জীবজন্তু টিকে থাকুক সব জীবের সম্মিলিত বসবাসে। প্রকৃতির পরিবেশ অবক্ষয় মুক্ত হোক। বন সৃষ্টি হোক। বনে পশু-পাখি, লতাপাতা জড়িয়ে ধরুক একে অন্যকে। শ্বাস-প্রশ্বাসে নির্মলতা ফিরুক। শব্দ স্বাভাবিক হোক। মাটি যেন জৈব শক্তিতে উজ্জীবিত হয়। সেখানে ফল আর ফসলে ভরে উঠবে। দুর্যোগ নিয়ন্ত্রণে আসুক, তা যেন তেড়ে না আসে আমাদের জীবনের পরে। পাখির কলতানে জীবের রাত কেটে ভোর আসুক। প্রকৃতির পরিবেশটা হয়ে উঠুক মানুষের জাগ্রত ও চেতনার ধারায়। কবি তার কবিতায় ফিরুক প্রকৃতি আর পরিবেশ বন্দনার শব্দ দিয়ে। তাইতো বলব-

কবির কবিতা কখনও খরাতে পোড়ে

আবার কখনও বন্যায় হয় প্লাবিত।

তারপরও কবিতা আসে,

কবিতা বাঁচিয়ে রাখে তার কবিকে

এক নৈসর্গিক সৌন্দর্যে এই সুন্দর ধরায়।

আলোকিত বাংলাদেশ
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত