বিশ্ব পরিক্রমা

পেছন ফিরে দেখা বিশ্ব

রায়হান আহমেদ তপাদার, গবেষক ও কলামিস্ট, [email protected]

প্রকাশ : ০৩ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

ঘড়ির কাঁটা ঘোরার সঙ্গে সঙ্গে পেরোতে থাকে সময়। সেকেন্ড-মিনিট-ঘণ্টার হিসাব রূপান্তরিত হয় দিন-মাস-বছরে। সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্তের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে শেষ হলো আরও একটি বছর। যত দিন যাচ্ছে অশান্ত হয়ে উঠেছে পৃথিবী। মানুষ প্রকৃতির শত্রু হয়ে উঠছে। মানুষের লোভ ও লালসা মানব সভ্যতাকে ধ্বংসের দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। ২০২২ সালে যেমন প্রকৃতির রোষের মুখে পড়তে হয়েছে বিশ্বকে, তেমনই ক্ষমতা ও দম্ভের মোহে মানুষের ওপর হামলা চালিয়েছে মানুষই। যদিও মহামারি শেষ পর্যন্ত শেষ হয়। কোভিড আসার ৩ বছর পর, বিশ্ব এক শতাব্দীর মধ্যে প্রথম বিশ্বব্যাপী মহামারি থেকে মুক্তি পায়। সেপ্টেম্বরে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান ঘোষণা করেছিলেন যে মহামারির সমাপ্তি। কিন্তু তার রেশ কাটতে না কাটতেই ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২। ইউক্রেনে বিশেষ সামরিক অভিযান শুরু করে রাশিয়া। সীমান্ত পেরিয়ে বাঁধভাঙা জলের মতো ঢুকে পড়ে রুশ ফৌজ। দুই সাবেক সোভিয়েত সদস্যভুক্ত দেশের মধ্যে শুরু হয় প্রবল যুদ্ধ। কিন্তু এখনও কিয়েভ দখল করতে পারেনি রাশিয়া। লড়াইয়ে কয়েক হাজার সেনা ও বিপুল অস্ত্র খুইয়েছে মস্কো। দোনবাস অঞ্চলে চলছে জোর লড়াই। এদিকে ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ২০২২ সালে বিশ্বজুড়ে মুদ্রাস্ফীতি বেড়েছে। চাহিদা এবং সরবরাহের সমস্যাগুলোর সংমিশ্রণ দ্বারা দামের বৃদ্ধি ঘটেছে। চাহিদার দিক থেকে, কোভিড মহামারি চলাকালীন অর্থনৈতিক পতন রোধ করতে সরকারি ব্যয়ের বন্যার সঙ্গে একত্রিত বছরের সহজ সরকারি আর্থিক নীতি গ্রাহকদের পকেটে আরও বেশি অর্থ জমা করে। সরবরাহের দিক থেকে, প্রথমে কোভিড এবং তারপরে ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণ বিশ্বব্যাপী সরবরাহ চেইনকে ব্যাহত করেছে, বিস্তৃত পণ্যের ঘাটতি তৈরি করেছে। ক্রমবর্ধমান দাম ধনী এবং দরিদ্র দেশগুলোতে একইভাবে রাজনীতিকে উত্তেজিত করেছে, কারণ নেতারা ক্রমবর্ধমান জনগণের ক্ষোভকে মোকাবিলা করতে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। সমস্যা হলো মুদ্রাস্ফীতির প্রধান প্রতিকার হচ্ছে সুদের হার বৃদ্ধি করা।

এদিকে উচ্চ সুদের হার এরই মধ্যে অনেক দরিদ্র দেশের জন্য ঋণ সংকট তৈরি করছে। ২০২১ সালের শেষের দিকে, মার্কিন এবং ব্রিটিশ কর্মকর্তারা সতর্ক করা শুরু করে যে রাশিয়া-ইউক্রেন আক্রমণ করবে। ইউক্রেনের রাষ্ট্রপতি ভ্লদোমির জেলেনস্কিসহ অনেক ইউরোপীয় নেতা যুদ্ধের ধারণাকে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। কিন্তু কিছুতেই এই যুদ্ধের অবসান করা সম্ভব হয়নি বিধায় ক্রেমলিন এবং বেশিরভাগ সামরিক বিশেষজ্ঞদের অবাক করে দিয়ে যুদ্ধের শুরু থেকেই রুশ আক্রমণ প্রতিহত করতে সমর্থ হয় ইউক্রেন। এহেন পরিস্থিতি আমলে নিয়ে মস্কো কিয়েভ দখল করার চিন্তা ত্যাগ করে পূর্ব ইউক্রেনের দোনবাস অঞ্চল দখলে চলে যায়। অপরদিকে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে মহাশক্তির প্রতিযোগিতা পুরোদমে শুরু হয় এই বছরে। ২০২২ সালের অক্টোবরে প্রকাশিত জো বাইডেন প্রশাসন কর্তৃক প্রকাশিত জাতীয় নিরাপত্তা কৌশল এ স্পষ্টভাবে তুলে ধরে-চীন আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলাকে তার সুবিধার দিকে নিতে সম্পূর্ণ বদ্ধপরিকর এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রতিযোগিতা জিততে চায়। দক্ষিণ চীন সাগরে বেইজিংয়ের সামরিকীকরণ, ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের প্রতি সমর্থন, তাইওয়ানকে ভয় দেখানোর প্রচেষ্টা এবং ব্যাপকভাবে বুদ্ধিভিত্তিক সম্পত্তি চুরির দিকে ইঙ্গিত করে মার্কিন প্রশাসন বলছে, বেইজিংয়ের আচরণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চীনের উত্থানকে স্বাগত জানানোর নীতি ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছে। মার্কিন হাউস স্পীকার ন্যান্সি পেলোসির তাইওয়ান সফরে চীনের বিদ্রোহী প্রতিক্রিয়া দুই দেশের মধ্যে কতটা উত্তেজনাপূর্ণ সম্পর্ক বেড়েছে তা তুলে ধরে। বন্ধু এবং মিত্র রাষ্ট্ররা যেন চীনের প্রতি কঠোর অবস্থান নেয়, সেই আহ্বান জানিয়েছিলেন বাইডেন। নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে, বাইডেন এবং চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে বৈঠক করেন। পারস্পরিক উত্তেজনা কমাতে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে এবং জলবায়ু পরিবর্তন এবং জনস্বাস্থ্যের মতো ক্ষেত্রে সহযোগিতার অঙ্গীকার করেন তারা। তা সত্ত্বেও, পারস্পরিক সন্দেহ এবং ক্ষোভ আগামী বছরের জন্য সম্পর্কের ওপর আধিপত্য বিস্তার করবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

২০২২ চোখে আঙুল দিয়ে দেখায়, সেই বিপজ্জনক ভবিষ্যৎ এসেছে। একবার বিরল চরম আবহাওয়া ঘটনা সাধারণ হয়ে ওঠে। ইউরোপ রেকর্ড তাপদাহের সম্মুখীন হয়। দাবানল থেকে খরায় নদী শুকিয়ে যাওয়ার মতো ঘটনার সম্মুখীন হয় বিশ্ব। এমনিক এশিয়ার দেশ পাকিস্তানেও একইভাবে নির্মম পরিস্থিতি আসে। একবারে তাপপ্রবাহে যেমন সবাই পুরে, তেমনি অতিবৃষ্টিতে সৃষ্ট বন্যায় সে দেশের এক-তৃতীয়াংশ জলের নিচে ডুবে যায়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ-পশ্চিম অংশে রেকর্ড খরা দেখা দেয়। যার ফলে লেক মিডের মতো জলাধারগুলো শুকিয়ে যায়, ফসলের ফলন হ্রাস করে। দেশের অপর প্রান্তে, হারিকেন ইয়ান ফ্লোরিডায় সর্বনাশ করে।

জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত আন্তঃসরকারি প্যানেল এপ্রিল মাসে সতর্ক করেছিল যে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব শিগগিরই অপরিবর্তনীয় হয়ে উঠবে। জলবায়ু পরিবর্তন বিতর্কে কয়েকটি উজ্জ্বল দাগ ছিল। আগস্টে, ইউএস কংগ্রেস পাস হয়, এবং রাষ্ট্রপতি জো বাডেন আইনে স্বাক্ষর করেন, মুদ্রাস্ফীতি হ্রাস আইন, যা জলবায়ু পরিবর্তনের কারণ কার্বন নিগর্মন কমাতে এখন পর্যন্ত নেয়া সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে। একইভাবে, বিজ্ঞানীরা প্রযুক্তিগত অগ্রগতি তৈরি করেছেন যা হয়তো জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে মানবতাকে মুক্ত করতে পারে। কিন্তু সামগ্রিকভাবে, সরকারি পদক্ষেপ পিছিয়ে যায়। মিশরের শারম এল শেখে কপ২৭ বৈঠকটি একটি ক্ষতি এবং ক্ষয়ক্ষতির চুক্তির মাধ্যমে শেষ হয়ে যে তাত্ত্বিকভাবে ধনী দেশগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত দরিদ্র দেশগুলোকে ক্ষতিপূরণ দেবে। কিন্তু নিগর্মন কমাতে কোনো অগ্রগতি হয়নি। পরিবর্তে, ২০২২ সালে বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই-অক্সাইডের অংশ বাড়তে থাকে। বাম দিকের প্রবণতা ২০২২ সালে অব্যাহত ছিল, যখন গণতান্ত্রিক সমাজতান্ত্রিক জিওমারা কাস্ত্রো হন্ডুরাসের রাষ্ট্রপতি হিসাবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন, প্রাক্তন বিদ্রোহী যোদ্ধা গুস্তাভো পেট্রো কলম্বিয়ার প্রথম বামপন্থি রাষ্ট্রপতি হয়ে ইতিহাস তৈরি করেছিলেন এবং ব্রাজিলের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভাকে পরাজিত করে রাষ্ট্রপতি পদে ফিরে আসেন।

২০২২ সালে যুক্তরাজ্যের পরিস্থিতি এমনি ছিল। ১০ নং ডাউনিং স্ট্রিটে অশান্তির আনুমানিক কারণ ছিল বরিস জনসনের সরকারের পঞ্চাশেরও বেশি সদস্য জুলাই মাসে তার ক্ষমতায় থাকাকালীন কেলেঙ্কারির প্রতিবাদে পদত্যাগ করেছিলেন। এরপর লিজ ট্রাস তার স্থলাভিষিক্ত হন। তিনি মাত্র ৪৫ দিন স্থায়ী ছিলেন। ইতিহাসের যেকোনো ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর সংক্ষিপ্ততম মেয়াদ এটি। রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ বেঁচে থাকা অবস্থায় ট্রাস শেষ প্রধানমন্ত্রী হওয়ার গৌরবও অর্জন করেছিলেন। ট্রাস একটি অভ্যন্তরীণ কনজারভেটিভ পার্টি নির্বাচনে জিতেছিলেন, যেখানে নিবন্ধিত ব্রিটিশ ভোটারদের মাত্র ০.৩ শতাংশ ভোট দেয়ার যোগ্য ছিল। তিনি অবিলম্বে কর কমিয়ে দেন। এই পদক্ষেপের ফলে ব্রিটিশ পাউন্ডের মূল্য হ্রাস পায়। যার কারণে এত অল্প সময়ে ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়াতে হয় তার। তারপর ঋষি সুনাক, যিনি জনসনের পতনে সহায়তা করেছিলেন, ব্রিটেনের প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ক্ষমতায় আসেন এবং দেশের হাল ধরার চেষ্টা করেন। এদিকে শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক সংকট মূলত কোভিড-১৯ মহামারির ফলস্বরূপ শুরু হয়েছিল। ২০২১ সালের মাঝামাঝি থেকে, প্রতিদিনের শ্রীলঙ্কানদের জন্য অর্থনৈতিক অবস্থা কঠিন হতে শুরু করে। মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় জ্বালানি ও রান্নার গ্যাস ক্রমেই ব্যয়বহুল এবং পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। সরকার আমদানি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এপ্রিলে যখন দেশটিতে বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল, তখন স্কুল বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল, মৌলিক খাদ্যসামগ্রীগুলো সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে গিয়েছিল এবং দীর্ঘ বিদ্যুৎ ঘাটতি স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছিল। এমনকি জীবন রক্ষাকারী ওষুধও প্রায় স্টক শেষ হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন শ্রীলঙ্কার চিকিৎসকরা। হাজার হাজার লোক তৎকালীন রাষ্ট্রপতি গোতাবায়া রাজাপাকসের পদত্যাগ দাবি করেছিল, যার সরকারকে দেশের অর্থব্যবস্থার অবিরাম অব্যবস্থাপনার জন্য দায়ী করা হয়েছে। অবশেষে, ৯ জুলাই, বিক্ষোভকারীরা রাজাপাকসের বাড়িতে হামলা চালায়, তাকে পদত্যাগ করার আগে দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য করে।

ভবিষ্যৎ ইতিহাসবিদরা ২০২২-কে ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে বিবেচনা করতে পারেন। কেননা, রীতিমতো একটি যুগের সমাপ্তি এবং অন্য নতুন এক যুগের সূচনাকে চিহ্নিত করে এই ২০২২ সাল। পারমাণবিক হামলার হুমকির সঙ্গে ইউরোপে ফিরে আসে বড় যুদ্ধের আশঙ্কা। অন্যদিকে চীনের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত সম্পৃক্ততার নীতির দরজা দৃঢ়ভাবে বন্ধ হয়ে যায়। তবে এতসব উদ্বেগের মাঝে গত ১২ মাস কিছু ভালো খবর নিয়েও এসেছে। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্যভাবে অনেক দেশে কোভিড-১৯ মহামারি হ্রাস পেয়েছে। তবে সামগ্রিকভাবে ২০২২ সালে ভালো খবরের চেয়ে খারাপ খবরই বেশি নিয়ে এসেছে। এখন পর্যন্ত দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় সেতুর নাম পদ্মা সেতু। শুধু দৈর্ঘ্যরে বিচারে নয়, এ সেতুর সঙ্গে যেমন জড়িয়ে আছে কোটি মানুষের আবেগ, তেমনি রয়েছে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির এক বিশাল সমীকরণ। দেশপ্রেম আর সম্মানের জেদ তো ছিলই। দেশের সবচেয়ে আলোচিত অবকাঠামো হিসেবেই চলতি বছর উদ্বোধন করা হয়েছে পদ্মা সেতু, যার মাধ্যমে দেশের ইতিহাসে যোগাযোগের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে। শুধু পদ্মা সেতুই নয়, যোগাযোগ ব্যবস্থাকে অন্য মাত্রায় নিয়ে যেতে ২৮ ডিসেম্বর উদ্বোধন হলো দেশের প্রথম মেট্রোরেল। গত বছরেই একসঙ্গে ১০০ সেতু উদ্বোধন করা হয়েছে। উদ্বোধন করা হয়েছে একসঙ্গে ১০০ সড়কও। যোগাযোগব্যবস্থাকে আরও সহজ ও দ্রুতগতির করতে পরিবহণকেন্দ্রিক বেশ কিছু বড় প্রকল্পের মধ্যে বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি), ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের কাজ শেষের পথে রয়েছে। এই তিন ধরনের প্রকল্পই দেশে প্রথমবারের মতো হচ্ছে। পদ্মা সেতু, শত সড়ক, শত সেতুসহ সব মিলিয়ে প্রায় ১ লাখ কোটি টাকার প্রকল্প খুলে দেয়া হয়েছে এবং কিছু প্রকল্প উদ্বোধনের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে। এর ফলে ওই অঞ্চলের মানুষের শুধু যাতায়াতই নয়, জীবনযাত্রার মানেও পরিবর্তন আসছে। গতি আসছে দক্ষিণের জেলাগুলোর অর্থনীতিতে, যার ইতিবাচক ফল যুক্ত হচ্ছে জাতীয় অর্থনীতিতে।

বিশ্বজুড়ে প্রায় ৩২ মিলিয়ন মানুষ বর্তমানে উদ্বাস্তু, যার অর্থ নিপীড়ন, সংঘাত বা সহিংসতার কারণে তাদের জন্মভূমি থেকে পালিয়ে গেছে। ২০২২ সালে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং জলবায়ু সংকট এই সবকিছু মিলে পাকিস্তান এক বিপর্যস্ত অবস্থায় পরে। এপ্রিল মাসে, প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান পার্লামেন্টে অনাস্থা ভোটে হেরে যান। এরই সঙ্গে এমন একটি ধারা অব্যাহত থাকে, যেখানে কোনো পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রী কখনও পূর্ণ ৫ বছরের মেয়াদ পূর্ণ করেননি। খান অবশ্য চুপচাপ অবসরে যাননি। যাহোক বছরের শেষের দিকে ইতিহাসের অন্যতম সেরা বিশ্বকাপ হিসেবে অ্যাখা দেয়া হয়েছে কাতার বিশ্বকাপকে। একের পর এক চমক দেখা গেছে মাঠের খেলায়। ইউরোপ-লাতিনের বড় দলগুলোর সঙ্গে সমানতালে লড়েছেন আফ্রিকাণ্ডএশিয়ার দলগুলোও। এমনকি বিশ্বকাপের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি গোলের দেখা পাওয়া গেছে এই আসরে। ম্যাচ শেষে কোনো দলের বুক ফেঁটেছে আবার কোনো দল মেতেছে বুনো উল্লাসে। মরুর বুকে ফুল ফুলিয়ে প্রথম আফ্রিকান দল হিসেবে সেমিফাইনালে খেলার কীর্তি গড়ে মরক্কো। যার সমাপ্তি হয় এক কিংবদন্তির বিশ্বকাপ শিরোপা জেতার মধ্য দিয়ে। ১৮ ডিসেম্বর দোহার লুসাইল স্টেডিয়ামে শিরোপার লড়াইয়ে মুখোমুখি হয় আর্জেন্টিনা ও ফ্রান্স। একদিকে ৩৬ বছরের শিরোপা আক্ষেপের অবসানের মঞ্চ, লিওনেল মেসি নামক জাদুকরের বর্ণিল ক্যারিয়ারের একমাত্র প্রশ্নবোধক চিহৃ উড়িয়ে দেয়ার সুযোগ ছিল আলবিসিলেস্তেদের। অন্যদিকে টানা দুটি বিশ্বকাপ জিতে ইতিহাস গড়ার হাতছানি ছিল ফ্রান্সের সামনে। বিশ্বকাপ ইতিহাসের সবচেয়ে ক্ল্যাসিক ফাইনালের সাক্ষী হয় সেদিন লুসাইলের গ্যালারিতে থাকা প্রায় ৯০ হাজার দর্শক। জমজমাট লড়াইও উত্তেজনার পর টাইব্রেকার ফ্রান্সকে হারিয়ে ১৯৮৬ সালের পর তৃতীয় বিশ্বকাপ ঘরে তোলে লাতিন আমেরিকার দলটি। কাঙ্ক্ষিত ও আরাধ্য বিশ্বকাপ ট্রফি উঁচিয়ে ধরেন লিওনেল মেসি। পূর্ণতা পায় তার ক্যারিয়ার, সেসঙ্গে পূর্ণতা পায় বিশ্বকাপও। কারণ মেসির হাতে ট্রফিটি না উঠলে একটু হলেও অপূর্ণতা থেকে ১৮ ক্যারেট স্বর্ণের বিশ্বকাপটির।