নববর্ষে বিড়ম্বনা

স্থায়ী সমাধান চাই

প্রকাশ : ০৩ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

আমাদের দেশে প্রতি বছর ইংরেজি নববর্ষ এলেই কিছু না কিছু সমস্যার সৃষ্টি হয়। দিনটির আগের রাতে অর্থাৎ থার্টিফার্স্ট নাইটে শুরু হয় নানান বিড়ম্বনা। এই বিড়ম্বনা বাড়তে থাকায় প্রশাসন এর বিরুদ্ধে কিছু পদক্ষেপ নেয়, যা এখনও অব্যাহত আছে। তবে প্রশাসনের সিদ্ধান্তের ফলে বিড়ম্বনা শেষ হয়নি বরং নতুন সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। ঘটনা-দুর্ঘটনা হয়তো কমেছে, তবে নাগরিক সমস্যা বেড়েছে। আর এই সমস্যা হলো মূলত চলাচলে সমস্যা। নববর্ষকে কেন্দ্র করে কোনো সমস্যার সৃষ্টি হোক, আমরা তা চাই না। নববর্ষ একটি আনন্দের বিষয়। পুরোনো বছরকে বিদায় দিয়ে নতুন বছরকে গ্রহণ করার একটি রীতি সারা পৃথিবীতে প্রচলিত। সেটা ইংরেজি হোক বা বাংলা হোক। বাংলা নববর্ষ আমাদের পুরোটাই নিজস্ব। সব দেশেরই তাদের নিজস্ব নববর্ষ থাকতে পারে এবং তারা তাকে আনন্দ আবেগের সঙ্গে বরণ করবে- এটাই নিয়ম এবং এর ব্যতিক্রমও হয় না। কিন্তু ইংরেজি নববর্ষ মোটামুটি বিশ্বব্যাপী। আমরাও তো ইংরেজি ক্যালেন্ডারই ব্যবহার করি। সুতরাং আমরাও এই নববর্ষকে সাদরে গ্রহণ করতে পারি।

ইংরেজি নববর্ষ গ্রহণ করা, উৎসব করা, আনন্দ করা কোনো অপরাধ নয়। সবসময়ই পালিত হয়ে আসছে। বাদ সেধেছে এ নিয়ে বাড়াবাড়ি করা। হৈহুল্লোর, অসামাজিকতা, পটকা ফোটানো, রাত জেগে রাস্তায় অসুবিধা সৃষ্টি করা ইত্যাদি অপত্তিকর। এসব নিয়ন্ত্রণ করার জন্যই প্রশাসন বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে। তবে ব্যবস্থা গ্রহণ করা সত্ত্বেও এর কোনো সমাধান হয়নি। নিষেধ থাকা সত্ত্বেও আতশবাজি ফুটেছে, ফানুস উড়েছে, রাস্তা বন্ধ করে দিয়ে চলাচলে চরম দুর্ভোগ সৃষ্টি করা হয়েছে। তাই যদি হয়, তাহলে ব্যবস্থা গ্রহণে লাভ কী হলো। এবারও নাকি ফানুস উড়ে গিয়ে মেট্রোরেলের তারে আটকে যাওয়ায় দুই ঘণ্টা রেল চলাচল বন্ধ রাখতে হয়েছিল। বিভিন্ন স্থান থেকে আটকে পড়া কয়েক বস্তা ফানুস উদ্ধার করা হয়। আতশবাজির ফলে কয়েক স্থানে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। আর রাস্তা বন্ধ করে দেয়ায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা গাড়ি নিয়ে রাস্তায় বসে থাকতে হয়। ঢাকা শহরে একে তো রাস্তার সংখ্যা খুবই কম, তার ওপর গুলশানের প্রধান রাস্তা ও হাতিরঝিল বন্ধ করে দিলে পুরো শহরই অচল হয়ে যায়। এবার তাই হয়েছে। ওই দিন একমাত্র রামপুরা রোড খোলা থাকায় ওই পথে যেতেও ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়। এটা তো বিড়ম্বনাই। শুধু যাতায়াত বন্ধ করে বা নিয়ন্ত্রণ করে কি এর সমাধান করা যাবে? যাবে না- তা প্রমাণিত।

আমরা মনে করি, নববর্ষকে কেন্দ্র করে কোনো রকম অপরাধ যেমন হতে দেয়া যাবে না, সেই সঙ্গে চলাচলেও কোনো বিঘ্ন সৃষ্টি করা যাবে না। নববর্ষ উপলক্ষে আনন্দ হবে, গানবাজনা হবে, অবাধ চলাচলও অব্যাহত থাকবে। তবে আতশবাজির এ ফানুসের ক্ষেত্রে কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করা যেতে পারে। তা হলো আতশবাজি ও ফানুস ওড়ানো যাবে শুধু সমুদ্র সৈকতে এবং বড় নদীর পাড়ে। কেননা, যেহেতু এটাকে বন্ধ করে যাবে না, সেহেতু এই নিয়ম করা যেতে পারে।

আমরা আহ্বান জানাব, যারা দিনটিকে আনন্দের সঙ্গে উদযাপন করতে চান তারা করবেন। তবে তা সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রেখে। এতে কারও যেন কোনো অসুবিধা না হয়। একের আনন্দ অন্যের কষ্টের কারণ হতে পারে না। আমরা আশা করব, পালনকারীরা ও প্রশাসন মিলিতভাবেই এর স্থায়ী সমাধান করতে পারবে।