ঢাকা ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

চালের নামকরণে কারসাজি

কল্পিত নামে বাড়তি দাম
চালের নামকরণে কারসাজি

এক সময় আমাদের দেশে বিভিন্ন ধরনের ধান উৎপাদিত হতো। কিন্তু কালের পরিক্রমায় ধানের রকমফের কমেছে। বিষয় বিশেষজ্ঞের মতে, গত শতাব্দীর শুরুর দিকেও প্রায় ১৮ হাজার জাতের দেশীয় ধানের তথ্য পাওয়া যায়। তবে এখন বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের কাছে দেশীয় ধানের ৮ হাজার ৬০০ জাত সংরক্ষিত আছে বলে জানা যায়। এগুলোর অনেকগুলো থেকেই প্রতিষ্ঠানটি নিত্যনতুন ভ্যারাইটির ধান উদ্ভাবন করে যাচ্ছে। সারা দেশে এখন শতাধিক জাতের ধান আবাদ হচ্ছে বলে জানা যায়। পরিহাসের বিষয় হলো, দেশের বাজারগুলো সয়লাব হয়ে আছে মিনিকেট, নাজিরশাইল কিংবা মোটা চালে; কিন্তু বাস্তবতা হলো, এসব নামের কোনো ধানের আবাদ যেমন দেশের কোথাও হয় না, তেমনি এগুলো কেউ আমদানিও করে না। বরং কৃষি বিজ্ঞানীরা বলছেন, দেশের ধানের মাঠ আর বাজার সয়লাব থাকে ব্রি ধানে; কিন্তু বাজারে ব্রি চাল নামে কোনো চালের অস্তিত্বই নেই। আবার দেশে এখন বিপুল পরিমাণ হাইব্রিড ধান উৎপাদিত হলেও বাজারে হাইব্রিড ধানের চাল বা হাইব্রিড চাল বলে কিছু পাওয়া যায় না। মূলত ব্রি ২৮ ধানকেই মিলগুলো নিজেদের ইচ্ছে মতো কেটে, মিক্সড ও ওভারপালিশ করে নানা নামে বাজারে আনছে। এতে মিল মালিকরা লাভবান হলেও প্রতারিত হচ্ছেন ভোক্তারা।

দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম চালের মোকাম খাজানগর মোকামে সরেজমিন অনুসন্ধান চালিয়ে সহযোগী পত্রিকায় প্রকাশ, এ মোকামে বস্তাজাত হয় বাসমতী, মিনিকেট, স্পেশাল মিনিকেট, আটাশ, স্পেশাল আটাশ, কাজললতা ও গুটি স্বর্ণা চাল। এসব চাল কোন জাতের ধান থেকে তৈরি, তা গোপন রাখেন মিল মালিকরা। এটা নিঃসন্দেহে প্রতারণার শামিল। তারা কম দামে ধান কিনে আটাশ, কাজললতা ও মিনিকেটের লোগো ব্যবহার করে অনেক বেশি দামে চাল বিক্রি করছেন। সম্প্রতি কুষ্টিয়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে মাঠ পর্যায়ে একটি জরিপ হয়, সেখানে প্রতারণার বিষয়টি স্পষ্ট হয়। জানা যায়, কুষ্টিয়া অঞ্চলে আউশ, আমন ও বোরো মৌসুমে মোটা ধান আবাদ হয় ১ লাখ ৫২ হাজার হেক্টরের বেশি জমিতে। এর মধ্যে চিকন ধানের আবাদ হয় ২৩ শতাংশ জমিতে। চিকন ধানের মধ্যে আছে বিআর ২৬, ব্রি ধান ৩৯, ব্রি ধান ৫০, ব্রি ধান ৬০, ব্রি ধান ৬৩, ব্রি ধান ৭১, ব্রি ধান ৮১, ব্রি ধান ৮৬, ব্রি ধান ৮৮, ব্রি ধান ১০০, বিনা ধান ১৭ এবং বিনা ধান ১৯। এসব ধানের চাল বাজারে মিনিকেট, নাজিরশাইল, বাসমতী ও সুপার মিনিকেট নামে বিক্রি করেন মিল মালিকরা। ৫০ জাতের ব্রি ধানকে ‘বাসমতী’ বলে বিক্রি করা হচ্ছে। আর ব্রি ধান ৬৩ জিঙ্ক-সমৃদ্ধ। ব্রি ধান ৩৪ জাতকে ‘বাদশা ভোগ’ বলে বিক্রি করা হয়, যা পোলাওর চাল হিসেবে প্রচলিত। খাদ্য অধিদপ্তর সূত্রমতে, ৫১ ও ৯৩ জাতের ধান থেকে ‘কাজললতা’ চাল তৈরি করছেন মিল মালিকরা।

চালের নামের এই কারসাজি এখন ওপেন সিক্রেট। একটি অনিয়ম স্বাভাবিক বিষয় হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে। কম দামে ধান কিনে চাল তৈরি করে মিশিয়ে বিক্রির ফলে মিল মালিকরা অধিক লাভবান হচ্ছেন। আর ভোক্তারা প্রতারণার জালে আটকে যাচ্ছেন। পাশাপাশি চালের পুষ্টিগুণও অক্ষুণ্ন থাকছে না। মেশিনে চালের পরিবর্তন মারাত্মক রোগেরও কারণও হতে পারে-এমন আলোচনাও রয়েছে। সংগত কারণেই চাল নিয়ে কারসাজি বন্ধ করতে হবে। প্রয়োজনে এই নিয়ে কার্যকর আইন প্রণয়ন করা হোক। ধানের জাতের নামে চাল বিক্রি করাই হবে শ্রেয়।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত