ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

আপনাদের ভাবনা

উত্তরাঞ্চলের শীতার্তদের পাশে দাঁড়াই

অ্যাড. মো. রায়হান আলী
উত্তরাঞ্চলের শীতার্তদের পাশে দাঁড়াই

বাংলাদেশের ষড়ঋতুর মধ্যে শীত পঞ্চম ঋতু। প্রত্যেক ঋতু তার নিজস্ব বৈশিষ্ট্য নিয়ে আবির্ভূত হয়। পৌষ এবং মাঘ মাসের প্রতিটি সকালে প্রচণ্ড শীতের প্রভাব থাকে। পৌষের শীতের প্রকোপের প্রভাবটা উত্তরবঙ্গে জেঁকে বসেছে। কথায় আছে, মাঘ মাসের শীতে নাকি বাঘ কাঁপে। কিন্তু এবার পৌষের শুরুতেই বাঘ কাঁপতে শুরু করেছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে জেঁকে বসেছে শীত। তীব্র শীতের প্রকোপে কাবু দেশের বর্তমান উত্তরাঞ্চল। এ অঞ্চলের মানুষের শীতে নিদারুণ কষ্টটা পেতে শুরু করে নভেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহের দিক থেকে ফেব্রুয়ারির শেষ অবধি। এ সময়ের মধ্যে কয়েকবার শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যায়। যখন শৈত্যপ্রবাহ চলে, তখন জনজীবনে নেমে আসে দুর্ভোগ, বিশেষভাবে কষ্ট পায় শিশু ও বয়বৃদ্ধরা। এসময় খোলা আকাশের নিচে কাজ করা শ্রমজীবীরা পড়ে যায় বিপাকে। এখন এই মাঘের মাঝামাঝি সময়ে উত্তরবঙ্গের ১৬টি জেলায় চলছে শৈত্যপ্রবাহ। উত্তরের হিমালয় পর্বতমালা থেকে আসে হিমশীতল বাতাস, দিনের বেলা কখনও সূর্যের দেখা মেলে, কখনও মেলে না। যখন আকাশে সূর্য থাকে, তখনও রোদের তীব্রতা থাকে না। রাতে বেশ ঘন হয়ে প্রায় বৃষ্টির মতো ঝরে শিশির। অন্তত বেলা ১১টা পর্যন্ত থাকে ঘনকুয়াশা। এ অঞ্চলের মানুষ অনেক সংগ্রাম করে জীবন-জীবিকা চালায়। আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভাষ্য মতে, ‘এ মাসের শেষদিকে দেশে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। তখন দেশের বেশ কিছু স্থানে তাপমাত্রা বিভিন্ন স্থানে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে যেতে পারে’। শীত নিবারনে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই অনেকের। শীতের এই তীব্রতা সবচেয়ে বেশি জেঁকে বসেছে বিশেষ করে নিম্নআয়ের মানুষের মধ্যে তারা একদিকে যেমন দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির জন্য আছে বিপাকে, অন্যদিকে শীতবস্ত্রের অভাবে আছে শীতার্ত। হাড় কাঁপানো শীতে এখানকার জীবনযাত্রা এখন অনেকটাই স্থবির। চরম দুর্ভোগে পড়েছেন দরিদ্র, ছিন্নমূল, ভাসমান ও স্বল্প আয়ের মানুষ। প্রয়োজন না হলে সন্ধ্যার এসব অঞ্চলে মানুষের বাইরের চলাচলে কমে গেছে। রাতের বেলা সাধারণ লেপ-কাঁথায় শীত নিবারন বেশ কঠিন। কাবু হয়ে পড়ে সাধারণ মানুষ। গরম কাপড়ের পাশাপাশি অনেকেই খড়কুটা জ্বালিয়ে শীত নিবারনের চেষ্টা করছেন। শীতের তীব্রতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাজার ও ফুটপাতে এখন গরম কাপড় বিক্রি শুরু করছে দোকানিরা। বেশি ঠান্ডার কারণে শীত বেশি হওয়ায় কাঁথা-কম্বল ব্যবহার করছে মানুষ। মানুষের শীত নিবারনের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকায় শীতকালীন নানান অসুখে ভুগছে শীতার্তরা। হাসপাতালসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ঠান্ডাজনিত রোগীর সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্করা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে।

‘জীবে প্রেম করে যেই জন, সেইজন সেবিছে ঈশ্বর’- কথাটি বলেছিলেন, স্বামী বিবেকানান্দ দাস। জীবের সেবা তথা মানবসেবার মাধ্যমে নিজেকে অন্যের জন্য উজার করতে হবে। কীভাবে শীতার্তদের একটু উষ্ণ ভালোবাসা ছড়িয়ে দেয়া যায়, সেটার দিকে সরকারের পাশাপাশি বিত্তবানদের এগিয়ে আসা উচিত। হাড়কাঁপানো শীতে যে বিপুল জনগোষ্ঠী বর্ণণাতীত দুঃখণ্ডকষ্টে দিনযাপন করছে, তাদের পাশে দাঁড়ানো ধর্মপ্রাণ মানুষের নৈতিক দায়িত্ব।

আপনার, আমার সামান্য ভালোবাসা হয়তো বা এই শীতে একজন শীতার্তের শীত নিবারনে অনেক বড় উপকারে আসতে পারে। আমরা যারা নিজের পরিবার-পরিজন নিয়ে একটু স্বাচ্ছন্দ্যে জীবনযাপন করছি, তাদের উচিত এ শীতে সমাজের সুবিধাবঞ্চিত মানুষের পাশে দাঁড়ানো, তাদের হাতে সাধ্যমত গরম কাপড়-চোপড় তথা শীতবস্ত্র তুলে দেয়া। অনেকের বাড়িতে পুরোনা শীতবস্ত্র আছে তা ব্যবহার করছে না বা হয়তো বা আর ব্যবহার করবে না; কিন্তু আলমারিতে যত্ন সহকারে রেখে দেয়া আছে। আবার অনেকেই গত বছরের শীতবস্ত্র এ বছর পড়ছে না, নতুন কিনছে; কিন্তু আগেরটা কারো কাছে দিচ্ছেও না এমনটাও হচ্ছে। প্রত্যেকে আমরা পরের তরে এই মানসিকতা নিয়ে সমাজের সুবিধাবঞ্চিতদের পাশে দাঁড়াতে হবে। ঘরে পুরোনা বস্ত্রাদি গরিব-দুঃখীদের দিয়ে দিতে হবে। সম্ভব হলে নতুন কিছু শীতের কাপড় কিনে আপনার বাড়ির পাশের লোকজনদেন দিন। চলতি শীতে শীতার্ত মানুষের প্রতি সমাজের সামর্থ্যবান ও বিত্তশালীদের সাহায্য ও সহানুভূতির হাত সম্প্রসারিত করা প্রয়োজন। পর্যাপ্ত পরিমাণে শীতবস্ত্র সংগ্রহ করে সাধ্যমতো শীতার্তদের পাশে এসে দাঁড়ানো উচিত। নিঃস্বার্থভাবে বিপদগ্রস্ত এসব মানুষের সাহায্য ও সেবা করা মানবধর্ম। আমরা সবাই যদি নিজ নিজ অবস্থান থেকে শীতার্তদের পাশে দাঁড়াই তাহলে শুধু উত্তরবঙ্গ কেন পুরো দেশের শীতার্তরা একটু উষ্ণ ভালোবাসার পরশ পাবে। শীতজনিত রোগব্যাধি থেকে মানুষজনকে রক্ষার করার জন্য স্বাস্থ্য বিভাগকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। তীব্র শীতে দরিদ্র ও অসহায় মানুষ যাতে কষ্ট না পায়, সেজন্য গরম কাপড় সরবরাহ করাসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। বিভিন্ন বেসরকারি সংগঠনই এ সময় পুরাতন কাপড় সংগ্রহ করে শীতার্তদের মধ্যে বিতরণ করে। এই মানবিক কর্মে নিজেকে নিয়োজিত করতে পারেন। দিতে পারেন সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে। সরকারের পাশাপাশি আমরা উত্তর অঞ্চলের শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে মানবতার সেবায় নিজেকে ব্রতী করি।

* আইনজীবী ও কলামিস্ট, জজকোর্ট, খুলনা

[email protected]

আলোকিত বাংলাদেশ
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত