যানজট রাজধানী শহর ঢাকার প্রধান সমস্যা। রাজধানীতে নিয়মিত গাড়ির সংখ্যা বাড়লেও, বাড়েনি রাস্তার সংখ্যা। আবার বিদ্যমান রাস্তার অধিকাংশই সংকীর্ণ। নেই গাড়ি পার্কিংয়ের যথেষ্ট জায়গা। ফলে সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। সড়ক-মহাসড়কে যানজটের এমন চিত্র শুধু ভোগান্তি নয় বরং নষ্ট করছে কয়েক সহস্রাধিক কর্মঘণ্টা। ফলস্বরূপ সড়কে পরিবহণের পাশাপাশি থমকে আছে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি। শুধু ঢাকা নয়, যানজটে পিষ্ট পুরো দেশ। সড়ক পরিবহণ ব্যবস্থাপনায় এখনও যথেষ্ট অগ্রগতি অর্জন করা সম্ভব হয়নি। গণমাধ্যম সূত্রে জানতে পারি, দেশে ডিসেম্বর ২০২২-এ প্রায় ১০০টি আঞ্চলিক জাতীয় মহাসড়ক খুলে দেয়ার তথ্য, যা নিঃসন্দেহে সড়ক-পরিবহণ ব্যবস্থায় উন্মোচন করেছে নবদিগন্ত। তবে দুঃখের বিষয় হলো বিদ্যমান সড়ক-মহাসড়কে নেই নিয়মনীতি মানার তোয়াক্কা। ফিটনেসবিহীন গাড়ির ছড়াছড়ি, অনুমোদন না নিয়েই সড়কে গাড়ি চলাচলসহ বেশ কয়েকটি বিষয় যানজটের প্রধান কারণ।
তাছাড়া পথচারীদের জন্য রাখা ফুটপাত ব্যবসায়ী ও দোকানিরা জবরদখল করায় বাধ্য হয়ে গাড়ি চলাচলের রাস্তা ব্যবহার করেন পথচারীরা- এটিও যানজটের অন্যতম প্রধান কারণ। প্রায় অর্ধকোটি মানুষের বসবাস উপযোগী রাজধানী শহর ঢাকার মোট জনসংখ্যা প্রায় ২ কোটি। জনসংখ্যার এই বাড়তি চাপসহ বহুবিধ কারণে বেহাল দশায় রয়েছে এই শহর। আয়তন এবং জনসংখ্যার তুলনায় ঢাকা কোনো মেগাসিটি থেকে কম না। যেখানে ঢাকার মোট সড়কের পরিমাণ দরকার ছিল আয়তনের প্রায় ২৫ শতাংশ সেখানে সেটি আছে মাত্র ১০ শতাংশ। ফুটপাত দখল, অবৈধ গাড়ি পার্কিং, ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্বে অসচেতনতা, ঘুষ গ্রহণ এবং জনগণের মধ্যে আিন অমান্য করার প্রবণতা বৃদ্ধি পাওয়ায় বাড়ছে যানজট। একটি প্রতিবেদনে দেখা যায়, রাজধানীর মোট রাস্তার প্রায় ৫৪ দশমিক দুই শতাংশ জায়গা প্রাইভেটকারের দখলে। প্রশ্ন হলো প্রাইভেটকারের সংখ্যা বেশি হওয়ার কারণ কী? একটি পরিসংখ্যান বলছে, গত এক দশকে শুধু যানবাহন রেড়েছে প্রায় ২ লাখ ১২ হাজার ১০৩টি- যানজট নিরসনে এটিরও নিয়ন্ত্রণ জরুরি।
তবে যানজট নিরসনের আন্ডারপাস, রোড ডিভাইডার, ওভারব্রিজ নির্মাণসহ বেশ কয়েকটি উদ্যোগ সরকারের তরফ থেকে নেয়া হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় যথেষ্ট নয়। প্রসঙ্গ বিবেচনায় যানজটের একটি চিত্র তুলে ধরা যেতে পারে, তেসরা জানুয়ারি ২০২২ সকাল ৯টা থেকে ১১টা পর্যন্ত দীর্ঘ ২ ঘণ্টা- কুড়িল বিশ্বরোড থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ছিল বিশাল পরিবহণ জট। জটের শহরে জাদুর মেট্রোরেল চালুর মাধ্যমে কিছুটা স্বস্তির আভাস ঢাকাবাসী পেলেও পূর্ণাঙ্গ জট নিরসনের আর কতদিন সময় লাগবে, মুক্তি মিলবে কবে? সেটিও এখন প্রশ্ন। যানজটের এই দৃশ্য সত্যিই পীড়াদায়ক, এই সমস্যা থেকে উত্তরণ জরুরি। যানজটের এই সমস্যা সমাধান করা গেলে আরও গতিশীল হবে দেশের ক্রমবর্ধমান অর্থনীতির চাকা।
* শিক্ষার্থী
তরুণ কলাম লেখক