ঢাকা ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

গ্রামীণ পরিবারের ঐতিহ্যবাহী শিলপাটা বিলুপ্তির পথে

একেএম রাসেদুল হাসান
গ্রামীণ পরিবারের ঐতিহ্যবাহী শিলপাটা বিলুপ্তির পথে

সংসারে একটু সচ্ছলতা আনতে ছোট বেলায় পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন শিলপাটা ধার করার কাজ। নাম তার মো. হাবিল। বয়স ৫০ ছুঁইছুঁই। হেঁটে চলেন এক গ্রাম থেকে অন্যগ্রামে। হাতুড়ি, বাটাল আর ছেনিথ ওইসব জিনিসের সাহায্যে ঠুকে ঠুকে করছেন শিলপাটার ধার দেয়ার মনোমুগ্ধকর কাজ। এমন এক দৃশ্য দেখা যায় বেড়া উপজেলার নতুন ভারেঙ্গা এলাকায়। হাবিল ৩৫ বছর বছর ধরে গ্রামে গ্রামে ঘুরে শিলপাটা ধারের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। সাঁথিয়া উপজেলায় তার বসবাস। ৫ সদস্যর পরিবার রয়েছে তার। তিনি জানান, গ্রামে ঘুরে ঘুরে কোনো কোনো দিন আয় হয় আবার কোনোদিন আয় হয় না বললেই চলে। যে দিন ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা আয় হয়, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে কোনো মতে সংসার চলে। শিলপাটার বর্তমানে কদর না থাকায় এ পেশা পরিবর্তন করে অনেকে অন্য পেশা বেছে নিয়েছেন। 

স্থানীয় গৃহবধূ নাগির্স আক্তার বলেন, গ্রামীণ সমাজের প্রত্যেক ঘরে ঘরে শিলপাটা ছিল রান্নার মসলা বাটার অন্যতম পাথেয়। শাশুড়ির রেখে যাওয়া শিলপাটা ধার কাটছেন। ডিজিটালের ছোঁয়ায় এখন মেশিনে তৈরি হয় হলুদ, মরিচ, ধনিয়া, গরম মসলা। প্রত্যন্ত অঞ্চল ছাড়া শিলপাটার ব্যবহার এখন আর তেমন চোখে পড়ে না। 

এ সময় বয়োবৃদ্ধ আসমার সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, মিল কারখানার কারণে ধীরে ধীরে কমতে থাকে শিলপাটার ব্যবহার। এই অঞ্চলে শিলপাটা এখন বিলুপ্তির পথে। সবাই এখন প্যাকেট মসলা কিনে খায়। রান্নায় রসদ জোগানো বিভিন্ন মসলা মিহি বা গুঁড়া করার জন্য এক সময় শিলপাটার বিকল্প বলতে কিছু ছিল না। 

গ্রামের উপস্থিত নারীরা আরও জানায় বাংলায় একটা সময় প্রবাদ প্রবচন ছিল, বৌ জব্দ শিলে, ঝি জব্দ কিলে, আর বিয়ে-শাদির অনুষ্ঠানে হলুদ বাটো মেন্দি বাটো, বাটো ফুলের মউ, বিয়ের সাঁজন সাঁজবে কন্যা...। এইসব গীত গাওয়ার মাধ্যমে গ্রামের সব শ্রেণিপেশার মহিলারা বিয়ে বাড়িতে দু’তিন দিন আগে থেকে হলুদণ্ডমেহেদি বাটতেন। সামাজিক বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ভোজনবিলাসী গৃহিণীরা হরেক রকম স্বাদের মসলাবাটা করে দিতেন। কালের আর্বতনে ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক, বাঙালির সমাজ ব্যবস্থার পারিবারিক অঙ্গন থেকে হারিয়ে যাচ্ছে শিলপাটার ব্যবহার।

* [email protected]

আলোকিত বাংলাদেশ
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত