ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস

বিজয়ের পূর্ণতার দিন
বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস

আজ বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস। ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে লন্ডন ও নয়াদিল্লি হয়ে তিনি স্বাধীন স্বদেশের বুকে ফিরে আসেন। বঙ্গবন্ধুর এই ফিরে আসার মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশের পূর্ণতাপ্রাপ্তি ঘটে বলা যায়। উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী স্বাধীনতাকামী বাঙালি জাতির ওপর আক্রমণ শুরু করার পরই ধানমন্ডির বাড়ি থেকে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করে। মুক্তিযুদ্ধের পুরো সময় তিনি পাকিস্তানের মিয়ানওয়ালি কারাগারে বন্দি ছিলেন। যুদ্ধে শোচনীয় পরাজয়ের পর পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী বাধ্য হয়ে বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দেয়। ১০ জানুয়ারি অপরাহ্নে বঙ্গবন্ধুকে বহনকারী বিমানটি যখন তেজগাঁও বিমানবন্দরের রানওয়ে স্পর্শ করে, তখন অগণিত জনতা মুহুর্মুহু হর্ষধ্বনি ও গগনবিদারি জয় বাংলা স্লোগানে স্বাগত জানায় তাদের প্রাণপ্রিয় নেতাকে। বঙ্গবন্ধু বিমানবন্দর থেকে সরাসরি চলে যান সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে (তখনকার রেসকোর্স ময়দান)। সেখানে স্বতঃস্ফূর্তভাবে সমবেত লাখো জনতার উদ্দেশে বঙ্গবন্ধু ভাষণ দেন। স্বাধীন বাংলাদেশে জনতার উদ্দেশে দেওয়া প্রথম সেই ভাষণে বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের জন্য দেশবাসীকে অভিনন্দন এবং যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ে তোলার কাজে সবাইকে আত্মনিয়োগ করার আহ্বান জানান। বলা যায়, বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের মাধ্যমে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ পুরোপুরি ভিত্তি পায়। বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন ছিল বাঙালি জাতির জন্য পরম প্রাপ্তি। স্বাধীনতার আনন্দ সেদিন পরিপূর্ণতা পেয়েছিল।

বঙ্গবন্ধু পূর্ববঙ্গীয় কৃষক সমাজ থেকে উত্থিত নেতা হিসেবে আজীবন মাটি ও মানুষের কাছাকাছি থেকেছেন। প্রান্ত থেকে একটি জাতির আকাঙ্ক্ষার কেন্দ্রবিন্দুতে অধিষ্ঠিত হয়েছেন। তার নেতৃত্বেই সত্যিকার অর্থে হাজার বছরের বাঙালি জাতি প্রথমবারের মতো সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে। তিনি জন্মেছিলেন ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ, গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়ায়। দেশে তখন ব্রিটিশ রাজত্ব চলছে। স্বাধীনতাকামী জনগণ উপনিবেশের নাগপাশ ছিন্ন করে মুক্তির পথ খুঁজছে। বলা যায়, এ মুক্তির স্পৃহার মধ্যে বঙ্গবন্ধু ধীরে ধীরে বেড়ে ওঠেন। জনগণের আবেগ ও প্রত্যাশার প্রতিনিধি হয়ে লড়াকু সংগ্রামে নিয়োজিত হন। অতঃপর ব্রিটিশরা চলে যায়। দেশ ভাগের প্রক্রিয়ায় আমরা পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত হই। কিন্তু বাস্তবে বাঙালি জাতি এক উপনিবেশ থেকে আরেক উপনিবেশের অধীন হলো। সংগত কারণেই বাঙালিকে অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক মুক্তির লক্ষ্যে ফের লড়াইয়ে অবতীর্ণ হতে হয়। এ মুক্তিসংগ্রামে বঙ্গবন্ধুর সঠিক নেতৃত্ব ও বলিষ্ঠ ব্যক্তিত্ব মহিমান্বিত হয়ে আছে। তিনি শুধু স্বপ্নই দেখাননি, স্বপ্ন বাস্তবায়নও করেছেন। আমরা পেলাম স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ। বর্তমান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সমৃদ্ধ সরকার বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নে নিরলস কাজ করছেন। এর সুফলও জাতি উপভোগ করছে।

বাংলাদেশ এবং বঙ্গবন্ধু অবিচ্ছেদ্য সত্তা। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আমাদের এগিয়ে যাওয়ার পথে প্রেরণা জুগিয়ে চলছে। সংগত কারণেই বঙ্গবন্ধুর চিন্তাভাবনার সঙ্গে সম্যক পরিচয় থাকা জরুরি। আজ বাংলাদেশ উদীয়মান অর্থনীতির দেশে পরিণত হয়েছে, র্অর্থনৈতিক মুক্তি এখন আমাদের কাম্য। বঙ্গবন্ধু চিরকাল গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও সুশাসনের কথা বলেছেন। তিনি সর্বদা সাধারণ মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিনিধিত্ব করেছেন। তিনি সাংস্কৃতিক উন্নয়নের কথাও বলেছেন। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পরিপূর্ণভাবে বাস্তবায়িত হলে আক্ষরিক অর্থেই বাংলাদেশ সোনার বাংলায় রূপান্তরিত হবে। আমরা বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ব-এ হোক আমাদের প্রত্যয়।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত