ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

সড়ক দুর্ঘটনা কমছে না

কোনো উদ্যোগও নেই
সড়ক দুর্ঘটনা কমছে না

দেশে সড়ক দুর্ঘটনা কমা তো দূরের কথা, প্রতি বছর বেড়েই চলেছে। ২০২২ সালে ৬ হাজার ৮২৯টি দুর্ঘটনার খবর পাওয়া গেছে। এতে নিহত হয়েছেন ৭ হাজার ১১৩ জন এবং আহত হয়েছেন ১২ হাজার ৬১৫ জন। নিহতদের মধ্যে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১ হাজার ২৩৭।

নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলন চলছে অনেক দিন ধরেই। গত ২০১৮ সালে শিক্ষার্থীরা দেশ কাঁপানো আন্দোলন গড়ে তোলে নিরাপদ সড়কের দাবিতে। তখন সরকার সবার জন্য নিরাপদ সড়কের স্বার্থে দুর্ঘটনা কমানোর নানান প্রতিশ্রুতি দেয়। আন্দোলন থেমে যায়; কিন্তু পরে সেইসব প্রতিশ্রুতি আর কার্যকর করা সম্ভব হয়নি। ফলে যা হওয়ার তাই হয়েছে। প্রতিশ্রুতি পাওয়ার ৪ বছর পরও কোনো উন্নতি তো দেখা যাচ্ছেই না; বরং তথ্য বলছে, প্রতিবছরই দুর্ঘটনার সংখ্যা বাড়ছে। রোড সেফটি ফাউন্ডেশন নামের একটি প্রতিষ্ঠান এসব তথ্য দিয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানটি সড়ক দুর্ঘটনা নিয়েই কাজ করে। অপর এক তথ্যে জানা যায়, ঢাকা শহরে সড়ক দুর্ঘটনার হার বেড়েছে গত বছরের তুলনায় প্রায় ৮০ শতাংশ।

সুতরাং দেখা যাচ্ছে, দেশের সড়কগুলো কোনোটাই নিরাপদ নয়। সারাদেশে দুর্ঘটনা বেড়েই চলেছে। দুর্ঘটনা বাড়ার কারণ হলো- যেসব কারণে দুর্ঘটনা ঘটে থাকে, সেইসব দূর না করা। যদিও আইন দিয়েই এইসব কারণ দূর করা সম্ভব। শুধু আইন থাকলেই হবে না, আইনের প্রয়োগও থাকতে হবে। বর্তমানে যার বড় অভাব দেখা যায়। ঢাকা শহরের কথাই ধরা যাক। যারা শহরে চলাচল করেন, তারা নিশ্চয়ই লক্ষ করেছেন যে, কোনো ফুটপাতই চলাচলের জন্য খোলা থাকে না। পুরো ফুটপাতই হকার-ব্যবসায়ীরা দখল করে রাখেন। আর লক্ষ করবেন, যেখানে-সেখানে ঝুঁকিপূর্ণ রাস্তা পার হয়ে, আইল্যান্ডের বেড়া টপকে মানুষ এপাশ থেকে ওপাশ যাচ্ছে। ফুট ওভারব্রিজ থাকা সত্ত্বেও নিচ দিয়ে জটলা বাঁধিয়ে চলাচল করছে। পাশেই ট্রাফিক পুলিশ। কিছু তো বলছেই না; বরং তাদের পার করতে গাড়ি আটকে দিচ্ছে। পথচারী পারাপারে জেব্রাক্রসিং মার্ক করা আছে; অথচ কোনো গাড়ি সেখানে থামছে না। গাড়ির ফাঁক-ফোকর দিয়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে মানুষ রাস্তা পার হচ্ছে। ফুটপাত খোলা না থাকায় মানুষ রাস্তা দিয়েই হাঁটছে, একই রাস্তায় গাড়িও চলছে। সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো বড় বড় বাস। এরাই যেমনি জানজটের প্রধান কারণ, তেমনি দুর্ঘটনারও। হুট করে দেখবেন, বড় একটি বাস রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে। এমনভাবে দাঁড়িয়ে আছে, যেন পেছন থেকে অন্য একটি বাস তাকে অতিক্রম করতে না পারে। বাসটি রাস্তার মাঝে দাঁড়িয়ে যাত্রী নামাবে-ওঠাবে। পেছনে লম্ব লাইনের জট সৃষ্টি হবে- তার কোনো খেয়াল নেই। এর সবগুলোই দুর্ঘটনার কারণ। আর ঢাকা শহরের বাইরে সারা দেশে দুর্ঘটনার মূল কারণ হলো বেপরোয়া গাড়ি চালানো। কার আগে কে যাবে, এ প্রবণতা। কে তাড়াতাড়ি ট্রিপ শেষ করবে- এই প্রতিযোগিতার কারণেই ৯০ ভাগ দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। বাকি ১০ ভাগ ঘটে যান্ত্রিক গোলযোগ বা অন্য কোনো কারণে।

সড়ক দুর্ঘটনার এই ঊর্ধ্বগতি যেভাবেই হোক দূর করতে হবে। এ জন্য কী করা দরকার, তা কর্তৃপক্ষের জানা। সেই জানাটাকে কার্যকর করতে হবে। চুক্তিভিত্তিক কোনো বাস শহরে চালানো যাবে না। বাস কর্মচারীদের মাসিক বেতন দিয়ে রাখতে হবে। শহরে নির্দিষ্ট স্থানে যাত্রী ছাউনি করতে হবে। ছাউনির বাইরে কোনো বাস থামলেই জরিমানা করতে হবে। বাস হবে কাউন্টার-ভিত্তিক। কাউন্টার থেকে টিকিট কেটে বাসে উঠতে হবে। দেখা গেছে, কাউন্টার-ভিত্তিক বাস যেসব রুটে চলাচল করে, সেখানে দুর্ঘটনা কম এবং যানজটও কম হয়। আমরা আশা করব, বর্তমান সরকার সব দিকেই ব্যাপক অগ্রগতি আনতে পেরেছে। নিরাপদ সড়কের ক্ষেত্রেও অগ্রগতি আনতে পারবে। নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করা কঠিন কোনো বিষয় নয়।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত