ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

পর্যালোচনা

আন্তর্জাতিক ইস্যুতে অভিবাসন প্রক্রিয়া

রায়হান আহমেদ তপাদার, গবেষক ও কলামিস্ট, [email protected]
আন্তর্জাতিক ইস্যুতে অভিবাসন প্রক্রিয়া

বিশ্বজুড়ে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে দেশে দেশে গৃহযুদ্ধ আর জঙ্গিগোষ্ঠীদের উৎপীড়নে নিজেদের জন্মস্থান ছেড়ে বিপৎসংকুল সমুদ্রপথ পাড়ি দিয়ে লাখ লাখ মানুষ আশ্রয় খুঁজছে ইউরোপের দেশগুলোতে। আফ্রিকা ও এশিয়া থেকে উন্নত জীবনের আশায় ইউরোপে পাড়ি জমাচ্ছে তারা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বর্তমানে অভিবাসীদের নিয়ে গোটা ইউরোপ এখন টালমাটাল। নিজেদের অভিবাসন নীতি ও মানবিক মূল্যবোধের মধ্যে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে তারা। অসহায় এসব অভিবাসীর বেশিরভাগই মধ্যপ্রাচ্যের। যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেন, সিরিয়া, ইরাক ও লিবিয়া থেকে সম্প্রতি রেকর্ডসংখ্যক অভিবাসী ইউরোপে প্রবেশ করেছে। এখনও হাজার হাজার অভিবাসী ইউরোপে প্রবেশের চেষ্টা করছে। ইউরোপীয় অভিবাসনবিরোধী প্রতিক্রিয়া প্রাথমিকভাবে উদ্বাস্তুদের লক্ষ্য করে। দক্ষ অভিবাসীরা এক্ষেত্রে খুব কমই বৈষম্যের শিকার হয়। ইউরোপীয় অনেক দেশ শ্রমিক সংকটের সম্মুখীন। ফলে উচ্চ দক্ষ অভিবাসীরাই তাদের দেশে অর্থনৈতিক অবদানকারী হিসাবে স্বীকৃতি পায়। যদিও অনেক ইউরোপীয় দেশ দক্ষ কর্মীদের আকৃষ্ট করার চেষ্টা করে, তবে তারা শেষ পর্যন্ত অভিবাসীদের স্বাভাবিককরণ প্রক্রিয়ায় উদারতা দেখাতে পারে না। তাদের দেশে নাগরিকত্ব অর্জনের শর্তগুলো খুবই কঠিন করে ফেলেছে। কারণ, তারা মনে করে অভিবাসীরা তাদের নিজেদের সাংস্কৃতিক মূল্যবোধকে ক্ষুণ্ন করছে। যেমন : সুইজারল্যান্ডের নাগরিকত্বের জন্য যোগ্য বিবেচিত হওয়ার আগে অভিবাসীদের টানা ১২ বছর ধরে সে দেশে বসবাস করতে হয়। যেহেতু সুইজারল্যান্ডের জন্মগত নাগরিকত্ব নেই, সেহেতু দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রজন্মের অভিবাসীদের অনেককে এখনও সুইস পাসপোর্ট ছাড়া বসবাস করতে হচ্ছে। ইউরোপে চলমান অভিবাসনবিরোধী মনোভাবের মূলে রয়েছে সাংস্কৃতিক হুমকির আশঙ্কা। অভিবাসীদের দেখা হয় অসংলগ্ন, পশ্চিমা নিয়মণ্ডআদর্শের ও সংস্কৃতির পরিপন্থি হিসেবে।

সম্প্রতি ভূমধ্যসাগরে বেসরকারি সংস্থার বিভিন্ন জাহাজের উদ্ধার অভিযানের বিষয়ে নতুন ডিক্রি জারি করেছে ইতালির সরকার। ফলে সমুদ্রে নিয়োজিত জাহাজগুলো তাদের কার্যক্রম সীমিত করতে বাধ্য হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। নতুন এই ডিক্রিতে জানানো হয়েছে, কোনো উদ্ধারকারী জাহাজ একই সময়ে সমুদ্রে একাধিক অভিযান পরিচালনা করবে না। অর্থাৎ উদ্ধার অভিযান শেষ হলে সমুদ্রে নতুন কোনো উদ্ধার কাজে না গিয়ে জাহাজটিকে প্রথমে নির্ধারিত বন্দরে ফিরতে হবে। ভূমধ্যসাগরে বেসরকারি সংস্থার বিভিন্ন জাহাজের উদ্ধার অভিযানের বিষয়ে নতুন ডিক্রি জারি করেছে ইতালির সরকার। নতুন এই ডিক্রিতে আরও জানানো হয়, উদ্ধারকৃত অভিবাসীদের অবশ্যই বোর্ডে অবহিত করতে হবে যে, তারা আশ্রয়ের জন্য আবেদন করবে কি-না এবং কোন ইউরোপীয় দেশে তারা আশ্রয়ের জন্য আবেদন করতে চায়। বন্দরে নামার আগে বোর্ডে থাকার সময় তাদের একটি ফরমপূরণ করতে হবে। এছাড়া নিয়ম ভঙ্গ করলে জাহাজের নাবিককে ৫০ হাজার ইউরো পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে। লঙ্ঘনকারী জাহাজ এমনকি ইতালীয় বন্দর কর্তৃপক্ষ দ্বারা বন্দরে আটক বা আটক করা যেতে পারে। উদ্ধারকৃত অভিবাসীদের অবশ্যই বোর্ডে অবহিত করতে হবে, তারা আশ্রয়ের জন্য আবেদন করবে কি-না এবং কোন ইউরোপীয় দেশে তারা আশ্রয়ের জন্য আবেদন করতে চায়। প্রসঙ্গত, জার্মানি, স্পেন ও নরওয়েসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশের বেসরকারি সংস্থার জাহাজ ভূমধ্যসাগরে উদ্ধার তৎপরতা চালায়। এশিয়া ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ থেকে হাজার হাজার অভিবাসী সাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপে পৌঁছানোর চেষ্টা করে। ঝুঁকিপূর্ণ এ যাত্রায় প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা। এমন পরিস্থিতিতে ঝুঁকিতে থাকা অভিবাসীদের সহায়তার জন্য বেসরকারি সংস্থার এসব জাহাজ সাগরে উদ্ধার কাজ চালাচ্ছে। জার্মানি, স্পেন ও নরওয়েসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশের বেসরকারি সংস্থার জাহাজ ভূমধ্যসাগরে উদ্ধার তৎপরতা চালায়।

সাধারণত এ জাহাজগুলো একবার সমুদ্রে তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী বেশ কয়েক জায়গা থেকে উদ্ধার করে। উদ্ধারের পর তাদের বেশিরভাগই ইতালীয় বন্দরে আনলোড করার জন্য আবেদন করে। গত বছর ২৯ ডিসেম্বর ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি জানান, তার সরকার অভিবাসনকে আন্তর্জাতিক ইস্যু হিসেবে ফিরিয়ে আনতে চায়। তিনি দাবি করেন, নতুন এই ডিক্রির ফলে আন্তর্জাতিক আইন মেনেই সাগরে বেসরকারি জাহাজ চলাচল করবে। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের এক হিসাব অনুযায়ী, প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ বাংলাদেশি বিদেশে বসবাস করছেন। এদেরকে বাংলাদেশি ডায়াস্পোরা অর্থাৎ প্রবাসী বাংলাদেশি বলা হয়। তাদের প্রথম প্রজন্মের অভিবাসীরা আর্থিক অবস্থার উন্নতি কিংবা দারিদ্র্য থেকে বাঁচতে বিদেশ পাড়ি দিয়েছিলেন। বিশ্বের চতুর্থ বৃহৎ অভিবাসী গোষ্ঠী বাংলাদেশের নাগরিক। অর্থাৎ অভিবাসীদের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ চতুর্থ স্থানে। ডিসপ্লেসমেন্ট ট্র্যাকিং ম্যাট্রিক্স ইউরোপের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালে ৪ হাজার ৫১০ জন অনিয়মিত বাংলাদেশি সমুদ্র ও স্থলপথে ইতালি, মাল্টা, স্পেন বা গ্রিস হয়ে ইউরোপে এসেছেন। বাংলাদেশি নাগরিকদের মধ্যে সর্বাধিক আশ্রয়প্রার্থী নিবন্ধিত হয়েছেন ইতালিতে। তাদের স্থল ও সমুদ্রপথে আগমনের হার প্রায় ৯২ শতাংশ। তাছাড়া, একই বছর পশ্চিম বলকান দেশগুলো অতিক্রম করার সময় প্রায় ৮ হাজার ৮৪৪ বাংলাদেশি নাগরিককে চিহ্নিত করা হয়েছিল। আন্তর্জাতিক অভিবাসনের ক্ষেত্রে এখনও অর্থনৈতিক বিষয়গুলোই প্রধান। যারা ইউরোপে যাচ্ছেন, তাদের বেশিরভাগই ৩০ থেকে ৩৫ বছর বয়সি। অনেকেই লিবিয়া হয়ে ইউরোপের দিকে এগুতে থাকেন। সরকারি তথ্য অনুসারে, ইতালিতে প্রায় দেড় লাখ বাংলাদেশি অভিবাসী বসবাস করছেন। তারা কৃষিকাজ, জাহাজ নির্মাণ এবং ফুটপাতের ব্যবসাসহ বিভিন্ন খাতে নিযুক্ত রয়েছেন। ইইউ’র অন্য কোনো দেশে এত বেশি বাংলাদেশি অভিবাসী নেই।

জনসাধারণের মধ্যে একটা ধারণা আছে, ইতালি বিদেশিদের প্রতি খুব বন্ধুপ্রতীম। ইতালি মাঝেমধ্যে অনিয়মিত অভিবাসী শ্রমিকদের বৈধতা দিয়ে থাকে। যে কারণে অনেকে মনে করেন কোনো না কোনোভাবে দেশটিতে ঢুকতে পারলে কোনো না কোনো এক সময় আইনি মর্যাদা পাওয়া যাবে। ভূমধ্যসাগরীয় দক্ষিণ উপকূল থেকে ছুটে আসা মানুষেগুলোর জন্য গত বছরটা ছিল খুবই কঠিন। কোভিড-১৯ মহামারি, জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতি, ইউরোপীয় অভিবাসন নীতির কাঠামোগত সমস্যা এবং ইউরোপীয় সরকারগুলোর উদ্বেগজনক কিছু নতুন প্রস্তাব এসব দিশেহারা মানুষের সংকটকে আরও অসহনীয় করে তুলেছে। এতে মানুষের আশ্রয় চাওয়ার জায়গাগুলো সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে ভয়াভয়ভাবে। তাদের আশার জায়গাগুলো মোটেই আর আগের মতো নেই সেপ্টেম্বরে সুইডেনের সাধারণ নির্বাচনে অতি-ডান সুইডেন ডেমোক্র্যাট পার্টি ২০ শতাংশ ভোটে জিতেছে। এতে অনেকে দেশে জাতীয়তাবাদ এবং অভিবাসনবিরোধী মনোভাব উত্থানের আশঙ্কা করছেন। এমনকি অভিবাসীদের জন্য নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে পরিচিত দেশগুলোও এখন অভিবাসনবিরোধী নানান পরিকল্পনা করছে। ডেমোক্র্যাটদের মতো সুইডেনের নেটিভিস্ট পার্টিও অভিবাসীদের হুমকি মনে করে, তাদের জাতীয় পরিচয়ের জন্য। তারা এরই মধ্যে পুরো ইউরোপজুড়ে অভিবাসনবিরোধী প্রচার অভিযান শুরু করেছে। একইভাবে, ইতালির নতুন প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনিও ভাবছেন অনেক কিছু। উদ্বাস্তু ও নথিভুক্তহীন অভিবাসীদের গন্তব্যের প্রধান জায়গাগুলোতে প্রতিবন্ধকতা তৈরির জন্য সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা জোরদার করার পরিকল্পনা নিয়েছেন তিনি। মেলোনি আসলে তার দেশের মানুষের অভিবাসনবিরোধী মনোভাব কাজে লাগানোর চেষ্টা করছেন। তিনি আগেই বলেছিলেন, আগত অভিবাসীরা ইতালির জাতিগত পরিচয়কে দুর্বল করে দিচ্ছে। সুইজারল্যান্ড এবং অস্ট্রিয়াও বলছে একই ধরনের কথা।

ব্রিটেনের নতুন প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক গত বছরের ৩ ডিসেম্বর অভিবাসন বিষয়ে একটা কঠোর পরিকল্পনার ঘোষণা দিয়েছেন। ব্রিটেনে আশ্রয়প্রার্থীদের একটা বড় জট তৈরি হয়ে আছে এরই মধ্যে। তিনি সেটা মোকাবিলা করতে চান। তাছাড়া, বহু আলবেনিয়ান, যারা ব্রিটেনের শরণার্থী মর্যাদা চান, তাদের বেশিরভাগকে দ্রুত ফেরত পাঠাতে চান তিনি। সুনাক আসলে ক্রমবর্ধমান চাপের মধ্যে আছেন ইংরেজ উপকূলে ছোটো নৌকায় করে অভিবাসীদের আগমন জোয়ার রোধ করার জন্য। উদ্বাস্তু সংখ্যার ওপর একটা বার্ষিক নিয়ন্ত্রণ (ক্যাপ) টানতে চান তিনি। তাছাড়া সুনাক বিশ্বের কয়েকটি দরিদ্র দেশে যুক্তরাজ্যের সাহায্য বন্ধের ইঙ্গিতও দিয়েছেন। তিনি বলেন, সেসব আশ্রয়প্রার্থী, যারা ইংলিশ চ্যানেল বিপজ্জনকভাবে পাড়ি দিয়ে ব্রিটেনে আসেন, তাদের হোটেলের পরিবর্তে অব্যবহৃত অবকাশ পার্ক, পরিত্যক্ত ছাত্রহল এবং উদ্বৃত্ত মিলিটারি সাইটগুলোতে রাখা হবে।

কারণ, তাদের হোটেলে রাখতে সরকারের সাড়ে ৫০ লাখ পাউন্ড খরচ হয় প্রতিদিন। তিনি ব্রিটেনে অবৈধ প্রবেশকারীদের আইন করে ঠেকানোর জন্য প্রস্তাব দেবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। ইউরোপীয়দের মনোভাবের এই পরিবর্তন ইঙ্গিত দেয় যে, ইউরোপ নিজেকে আর নিরাপদ মনে করছে না অর্থনৈতিক দিক থেকে। এটা অভ্যন্তরীণ পরিবর্তনের একটা বড় ইঙ্গিত। ইউরোপজুড়ে এখন বামণ্ডডান সবাই অভিবাসনবিরোধী। কিন্তু জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার মতে, ইউরোপীয়দের আশ্রয়ের আবেদন গ্রহণ বন্ধ করার পদক্ষেপ মূলত আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন। ইইউকে তার মৌলিক মূল্যবোধ থেকে মুখ ফিরিয়ে না নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন লুক্সেমবার্গের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জিন অ্যাসেলবর্ন তিনি বলেন, চোখ বন্ধ করে অমানবিক হওয়া ইউরোপীয় মূল্যবোধবিরোধী। এরই মধ্যে শুরু হলো ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ। ইউরোপের অর্থনীতিকে ঘিরে সবচেয়ে বড় উদ্বেগ জ্বালানি নিয়ে। কারণ, ইউক্রেনে রুশ অভিযানের পর কঠোর নিষেধাজ্ঞার প্রতিশোধ নিতে মস্কো গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে। এখনও প্রতিকূলতা বাড়ছে। সম্প্রতি প্রকাশিত ব্যাংক অব আমেরিকার ইউরোপীয় তহবিল ব্যবস্থাপকদের একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, ৮৬ শতাংশ উত্তরদাতা আগামী বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালে মন্দার আশঙ্কা করছেন।

ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার যুদ্ধ ইউরোপীয় ইউনিয়নকে তার ভূরাজনৈতিক তন্দ্রা থেকে জাগিয়ে তুলেছে শেষ পর্যন্ত। রাশিয়ার সঙ্গে বিরোধের মধ্যে দিয়ে ইইউ তার সবচেয়ে সফল যন্ত্রগুলোর মধ্যে কিছু পুনঃআবিষ্কার করেছে। তা হচ্ছে, ইউরোপে শান্তি প্রতিষ্ঠা, গণতন্ত্র ও আইনের শাসন নিশ্চিত করা। তারা দাবি করেন, এসব গত কয়েক দশক ধরে সমৃদ্ধি অর্জনের ক্ষেত্রে চালিকাশক্তি হিসেবে কজ করে এসেছে। বুন্ডেস্ট্যাগের বৈদেশিক বিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান মাইকেল রথ যুক্তি দেখিয়েছেন, পশ্চিম বলকান অঞ্চলের ছয়টি দেশকে সদস্যপ্রাপ্তির পথে নিয়ে আসা দরকার। এজন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নেকে আরও বড় ভূমিকা রাখতে হবে। এমতাবস্থায়, অনেকেই এখন মনে করেন, ইউরোপের এ দুঃসময়ের মধ্যে এশীয় দেশগুলো হয়তো এক সময় অর্থনৈতিকভাবে আরও শক্তিশালী হয়ে উঠবে। পিউ রিচার্চ ২০১০ সালের তথ্যমতে, বর্তমানে ইউরোপে মোট মুসলমানদের সংখ্যা ৬ শতাংশ। মুসলমানদের জন্মহার অন্যদের চেয়ে তিন গুণ বেশি। সেই সঙ্গে লাখ লাখ অভিবাসী মুসলমানের পাল্লাই শুধু ভারী করছে না; বরং ইউরোপের ধর্মীয় সংস্কৃতিতেও প্রভাব ফেলছে। এ ছাড়া ইউরোপের নানা রকম সামাজিক সমস্যার জন্য মুসলমানদের দায়ী করা হয়। মূলত এসব কারণেই কট্টর জাতীয়তাবাদী ইউরোপের নেতারা অভিবাসীদের প্রতি উগ্রআচরণ করছে। অনেকেই অভিবাসীদের আশ্রয় দিয়ে খাল কেটে কুমির আনতে একেবারেই অনিচ্ছুক। স্থূলভাবে দেখলে, মধ্যপ্রাচ্য থেকে লাখ লাখ শরণার্থীর অবৈধভাবে ইউরোপে প্রবেশের দরুন এই সংকট দেখা দিয়েছে। কিন্তু সূক্ষ্মভাবে দেখলে স্পষ্ট হয় যে, ইউরোপ মহাদেশের নেতারাই এ সংকটের জন্য প্রকৃতপক্ষে দায়ী। তাদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ইন্ধনেই সিরিয়া, ইরাক ও লিবিয়ার মতো দেশ আজ অশান্ত, অস্থিতিশীল ও স্বাভাবিক বসবাসের অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে। ইউরোপের পররাষ্ট্রনীতি চলমান অভিবাসন সংকটের দায়ভার এড়াতে পারে না। অর্থনৈতিক বৈষম্যও ইউরোপের অবিবাসী সংকটের জন্য দায়ী।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত