ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

করোনায় ঝরেপড়া শিশু

বিদ্যালয়ে ফিরিয়ে আনুন
করোনায় ঝরেপড়া শিশু

যুদ্ধ কিংবা দুর্যোগে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি দুর্ভোগের ছাপ রেখে যায়। করোনা অতিমারি বিশ্বের অপরাপর দেশের মতো আমাদের সমাজ, অর্থনীতি, শিক্ষা তথা জাতীয় স্বার্থের প্রতিটি ক্ষেত্রে কিছু না কিছু ক্ষত রেখে গেছে। অনিবার্য কারণেই সরকার অর্থনীতির ক্ষতিপূরণে প্রাগ্রাধিকায় দিয়েছে, অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে দ্রুত কর্মপন্থা কার্যকর করছে। অন্যান্য খাতের মতো শিক্ষায়ও পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে, তবে বাস্তবতা হলো, অনেক সমস্যাই রয়ে গেছে, যা দ্রুত সুরাহা করা না গেলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ক্ষতিগ্রস্ত হবে- এমন ভাবনা রয়েছে ওয়াকিবহাল মহলে। এখানে সবচেয়ে লক্ষণীয় বিষয় যে, প্রকৃতির বিরূপ পরিস্থিতিতে ঝরে পড়ছে স্কুলশিক্ষার্থীরা। মূলত টানা দু’বছর করোনার অভিঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষা খাতে বড় কোনো পদক্ষেপ না থাকায় ঝরে পড়ছে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের ছাত্রছাত্রীরা। কোভিড-১৯ সংক্রমণকালে ও পরবর্তী সময়ে শিখন ঘাটতি মোকাবিলায় নানা উদ্যোগ নেয় সরকার। তবে বাল্যবিয়ের শিকার ও শ্রমঘন কাজে জড়িয়ে পড়া শিশুদের বিদ্যালয়ে ফেরাতে ছিল না সুনির্দিষ্ট কার্যক্রম। ফলে ২০২০, ২০২১ ও ২০২২ সালে বিদ্যালয়গুলোতে বার্ষিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমেছে। টানা ৩ বছরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, স্কুলপর্যায়ে ঝরে পড়ার সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। এ কারণে লিঙ্গসমতা অর্জনসহ শিক্ষার নানা সূচক নিম্নমুখী হওয়ার ঝুঁকিতে পড়েছে।

প্রকাশ, করোনার দুই বছরে দেশের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের অন্তত ১৫ শতাংশ শিশু শিক্ষা কার্যক্রম থেকে ঝরে গেছে। এ শিশুদের বেশিরভাগই দরিদ্র ও প্রান্তিক পর্যায়ের। পরিবারের আয় কমে যাওয়ায় এবং মূল্যস্ফীতির কারণে বাল্যবিয়ে দিয়ে দেয়া হয়েছে কয়েক হাজার কন্যাশিশুকে। খোদ সরকারি প্রতিষ্ঠানের তথ্যমতে, ২০২০ সালে কোভিড-১৯ সংক্রমণের পর ২০২১ সালে দেশের অর্ধেকের বেশি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ৪ লাখ ৮১ হাজার শিক্ষার্থী বার্ষিক পরীক্ষায় অনুপস্থিত ছিল। তাদের মধ্যে ৪৭ হাজারের বেশি ছাত্রী বাল্যবিয়ের শিকার। আর শিশুশ্রমে যুক্ত হয়েছে প্রায় ৭৮ হাজার শিক্ষার্থী। ২০২২ সালে ৪ লাখ ৬২ হাজারের বেশি ছাত্রছাত্রী বার্ষিক পরীক্ষা দেয়নি। এই ২ বছরে প্রাথমিক স্তরের অন্তত ৫ লাখের বেশি পরীক্ষার্থী বার্ষিক পরীক্ষায় বসেনি। তবে করোনাকালে কতসংখ্যক শিক্ষার্থী প্রকৃতপক্ষে ঝরে পড়েছে, তার সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য আছে বলে আমাদের জানা নেই। যথাযথ কর্তৃপক্ষ এই নিয়ে কোনো অনুসন্ধান করেছে বলেও আমরা অবহিত নই। স্পষ্টত, পরিবারের আয় ও খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে স্বাভাবিকভাবেই বাবা-মা ছেলে সন্তানটিকে শ্রমঘন কাজে আর মেয়েটিকে দ্রুত বিয়ে দিয়ে দেন। আর শিক্ষার্থীদের বাল্যবিয়ের কারণ হিসেবে জানা যায়, স্কুল বন্ধ থাকায় মেয়েদের নিরাপত্তা সংকট, অভিভাবকদের কাজ হারানো এবং ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ হয়ে যাওয়া।

প্রতীয়মান যে, করোনাকালে আমাদের শিক্ষা খাতে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। উন্নত ও সমৃদ্ধশালী সমাজ গঠনের পথচলায় যা বড় ক্ষতি। সংগত কারণেই শিক্ষা খাতের উদ্ভূত সমস্যাগুলো সমাধান জরুরি। বিশেষ করে ঝরেপড়া শিক্ষার্থীদের ফের স্কুল আঙিনায় ফেরানো ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। এক্ষেত্রে প্রথমেই ঝরেপড়া শিক্ষার্থীর প্রকৃত সংখ্যা নির্ধারণের কাজ করতে হবে। স্কুলে ছেড়ে যাওয়াদের ফিরিয়ে আনতে সরকার যা করা প্রয়োজন সব করতে হবে। আর শিক্ষাকে অবশ্যই রাষ্ট্রীয় অগ্রাধিকার হিসেবে ঘোষণা করতে হবে। এটা করতে পারলেই প্রকৃত উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাবে দেশ।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত