ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

রাজনৈতিক দুর্ভোগ

নতুন ভাবনা প্রয়োজন
রাজনৈতিক দুর্ভোগ

ঢাকা শহরের নাগরিক দুর্ভোগ কোনোভাবেই যেন দূর করা যাচ্ছে না। এমনিতেই নানা কারণে নগরবাসী দুর্ভোগের শিকার হন। এটা একরকম অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে। নাগরিকরা ধরেই নিয়েছেন, এমন দুর্ভোগ থাকবেই। সমস্যা হয়েছে এর সঙ্গে রাজনৈতিক কারণে সৃষ্ট দুর্ভোগ নিয়ে। সাধারণ দুর্ভোগের সঙ্গে রাজনৈতিক দুর্ভোগ যুক্ত হওয়ায় জনগণ অতিষ্ঠ। রাজনৈতিক যে কোনো কর্মকাণ্ডে ঢাকা শহরে দুর্ভোগ বেড়ে যায়। এমন সর্বশেষ দুর্ভোগ ছিল গত বুধবার বিএনপিসহ কয়েকটি দলের অবস্থান সমাবেশের কারণে। একে তো ঢাকা শহরে রাস্তার সংখ্যা খুবই কম। একটি রাস্তা বন্ধ থাকলে বিকল্প রাস্তা ব্যবহারের তেমন কোনো সুযোগ নেই। ফলে যে কোনো কারণে কোনো রাস্তা বন্ধ থাকলে পুরো শহরে যানজট লেগে যায় এবং ভোগান্তির শেষ থাকে না। এই ভোগান্তি তো সরকারি দল বা বিরোধী দল সবারই হয়ে থাকে। এটা এমন নয় যে, শুধু সরকারি দলের ভোগান্তি হবে। বিরোধী দল খুশি হবে। আসলে কি তাই?

সরকার ও সব রাজনৈতিক দলকে এ বিষয়ে নতুন করে ভাবতে হবে। রাজনীতি তো জনগণকে কষ্টে ফেলে নয়। জনগণের ভোগান্তি হবে- এমন রাজনীতি কেন করবে? রাজনীতির উদ্দেশ্যই তো হলো জনগণের কল্যাণ করা। রাজনৈতিক কর্মসূচি দিয়ে যদি সবাইকে দুর্ভোগে ফেলা হয়, তাহলে রাজনীতি কার জন্য? এ কথাও সত্য যে, রাজনীতিতে বিভিন্ন কর্মসূচি দেয়ার রীতি রয়েছে। সেই রীতি অনুযায়ীই বিভিন্ন কর্মসূচি দেয়া হয়। যে কোনো দলই বিভিন্ন কর্মসূচি দিতে পারে, তবে দেখতে হবে কর্মসূচি দেয়ার উদ্দেশ্য কী। উদ্দেশ্য যদি জনস্বার্থে হয়ে থাকে, উদ্দেশ্য যদি সর্বজনীন হয়ে থাকে, উদ্দেশ্য যদি জনগণের জন্য জরুরি হয়ে থাকে- তাহলে কোনো আপত্তি নেই। এর আগে এমন অনেক কর্মসূচি দেয়া হয়েছে জনস্বার্থে। অনেক দুর্ভোগ সইতে হয়েছে জনগণকে। জনগণ মনে করেছে, তাদের কষ্ট দূর হবে। তারা তখনকার চেয়ে ভালো থাকবে। দেশের গণতন্ত্র রক্ষা পাবে, মানুষ সুখে-শান্তিতে থাকতে পারবে, দেশের স্বাধীনতা রক্ষা হবে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার জয় হবে। এমন সব জনগণের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিভিন্ন কর্মসূচি দিয়ে জনগণ কষ্ট করেছে এবং রাজনৈতিক দলগুলোর শেষ পর্যন্ত জয় হয়ে জনগণের কষ্ট করা সার্থক হয়েছে। জনগণ খুশি হয়েছে। কিন্তু এখন কি তেমন পর্যায়ে আছে দেশের জনগণ যে, কর্মসূচি দিয়ে তাদের কষ্ট ভোগ করতে হবে? নেই। জনগণ তা মনেও করে না। এ কারণেই কর্মসূচি সফল হচ্ছে না। শুধু জনগণের দুর্ভোগই বাড়ছে। যে কোনো কর্মসূচি সফল করতে হলে তার পেছনের কারণ শক্তিশালী হতে হবে এবং তাতে জনগণের পরিপূর্ণ সমর্থন থাকতে হবে। শুধু কিছু কর্মী বাহিনী নিয়ে পাল্টাপাল্টি করে এই কর্মসূচি সফল করা যাবে না। বিরোধী দল কি জনগণকে সেভাবে সম্পৃক্ত করতে পেরেছে? জনগণ কি এসব কর্মসূচিতে অংশ নিতে সবকিছু ছেড়ে ঘর থেকে বেরিয়ে রাস্তায় নামছে? আমাদের চোখে তেমন কিছু পড়ছে না। সাধারণ মানুষও তেমন কিছু অনুভব করতে পারছে না। কোনো ইস্যু নেই- শুধু একটা সরকারকে ঠেলে ফেলে অন্য একটি সরকার বসানোর জন্য কেউ মাঠে নামবে না। নামছেও না।

আমরা মনে করি, এই জনদুর্ভোগ নিয়ে বিরোধী দল ও সরকার উভয়কেই ভাবতে হবে। আন্দোলনও চলবে, ভোগান্তিও হবে না- এমন ব্যবস্থা কি এদেশে করা যায় না? কোন দল কি চাচ্ছে, তা জনগণকে বোঝানোর অনেক রকম ব্যবস্থা আছে। এ জন্য ভোগান্তি সৃষ্টি করতে হবে কেন? আমরা আশা করব, রাজনৈতিক দলগুলো জনগণের ভোগান্তি সৃষ্টি না করে আগামী নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নেবে। নির্বাচনেই সবকিছুর জবাব দেয়া সম্ভব।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত