ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

নবম জাতীয় পে-স্কেল ঘোষণা জরুরি

কে এম মাসুম বিল্লাহ
নবম জাতীয় পে-স্কেল ঘোষণা জরুরি

মূল্যস্ফীতির চাপে যেন অতিষ্ঠ হয়ে উঠছে মধ্য ও নিম্ন মধ্যবিত্তদের জীবন। সামান্য বেতনে যেন এখন কোনোভাবে আর মাস চলে না। অপেক্ষা শুধু নতুন পে-স্কেল ঘোষণা! ২০১৫ সালে সর্বশেষ অষ্টম পে-স্কেল ঘোষণা করা হয়, তবে ৮ বছর পার হলেও ৯ম জাতীয় পে-স্কেল এখনও আলোর মুখ দেখেনি। করোনা-পরবর্তী অর্থনীতি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে দেশে মূল্যস্ফীতি বেড়ে গিয়েছে। যার ফলে সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন ব্যয় মেটাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। নিত্যপ্রয়োজনী সব পণ্য বাড়তি দামে কিনতে হচ্ছে। চাল, ডাল, চিনি ও মাছ মাংসের দাম গত অর্থ বছরের তুলনায় প্রায় ৪০-৫০ শতাংশ বেড়ে গিয়েছে! এছাড়াও ভোজ্যতেলও দীর্ঘদিন ধরে সাধারণের মাথাব্যথার কারণ। গত বছরের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ দামে কিনতে হচ্ছে সয়াবিন তেল। বাজার দর বেড়ে যাওয়ায় সবকিছুতেই তার প্রভাব পরেছে। সর্বশেষ জ্বালানি তেলের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির ফলে চলাচলের ক্ষেত্রে বাস, ট্রাক, লঞ্চ এমনকি আলফা, মিশুকের ভাড়াও বাড়ানো হয়েছে ৫০-১০০ শতাংশ। সবকিছু মিলে সাধারণ জনগণ সত্যিকার অর্থেই সমস্যার মধ্য দিয়ে দিন পার করছে।

অষ্টম জাতীয় পে-স্কেল অনুযায়ী সর্বনিম্ন ২০তম গ্রেডে ৮ হাজার ২০০ টাকা স্কেলে সর্বসাকল্যে ১২ হাজার টাকার মতো বেতন আসে। অথচ চাল-ডাল-তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম যেভাবে বেড়েছে, তাতে ১২ হাজার টাকায় জীবন ব্যয় মেটানো কোনোভাবেই সম্ভব নয়। ৮ম পে-স্কেল অনুসারে একজন প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা ২২ হাজার টাকা স্কেলে সর্বসাকল্যে ৩১ হাজার হাজার টাকার মতো বেতন পেয়ে থাকেন। নিত্যপ্রয়োজনীয় সবকিছুর বাড়তি দাম পাশাপাশি যানবাহনে অতিরিক্ত ভাড়া ও বাড়তি বাসাভাড়া দিতে গিয়ে তাদেরও হিমশিম খেতে হচ্ছে! বিশেষ করে গত বছরের তুলনায় এ বছর জীবনযাত্রার ব্যয় প্রায় ৫০ শতাংশ বেড়ে গিয়েছে, অথচ বেতন সেই একই থেকে গেছে। এতে করে মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারগুলো হতাশায় দিন পার করছে। চাকরিতে যারা নতুনভাবে জয়েন করছে, তাদের জন্যও এই বেতনে পরিবারের ভরণ-পোষণ দায়িত্ব নেয়া কঠিন।

১৯৭৩ সালে প্রথম পে-স্কেল দেয়ার পর ২০১৫ সাল পর্যন্ত ৪২ বছরে মোট আটবার পে-স্কেল ঘোষণা করা হয়েছে। অর্থাৎ গড়ে প্রতি পাঁচ বছর পরপর পে-স্কেল ঘোষণা করা হয়েছে। প্রথম পে-স্কেল থেকে ৮ম পে-স্কেল পর্যন্ত বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় প্রতি ৫ থেকে ৬ বছর পরপর মাথাপিছু আয়, বাজার মূল্যের উপর ভিত্তি করে নতুনভাবে পে-স্কেল দেয়া হয়েছে। তবে ২০১৫ সালের পর বাংলাদেশের অর্থনীতি নতুন মোড় নিয়েছে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে যেখানে দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় ছিল ১ হাজার ৪৬৬ মার্কিন ডলার। সেখানে ২০২১-২২ অর্থবছরে মাথাপিছু আয় দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৮২৪ মার্কিন ডলার। অর্থাৎ গত সাত বছরে দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় দ্বিগুণ হলেও সে অনুযায়ী বেতন স্কেল সমন্বয় করা হয়নি। এছাড়াও বাংলাদেশ নিম্নআয়ের দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশে প্রবেশ করেছে, সে অনুযায়ী চাকরিজীবীদের বেতন সমন্বয় করা সময়ের দাবি।

৮ম জাতীয় পে-স্কেল ঘোষণার পর ১১-২০তম গ্রেডের বিভিন্ন বৈষম্য নিয়ে তখন আন্দোলন হয়। যদিও এর পরবর্তীতে তেমন কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। সরকারি কর্মচারীদের বিভিন্ন সংগঠন দীর্ঘদিন যাবত ৯ম জাতীয় পে-স্কেলের দাবিতে আন্দোলন করে আসছে। ৮ম জাতীয় পে-স্কেলের ২০টি গ্রেডকে কমিয়ে ১০টি গ্রেডে নিয়ে আসা, বিভিন্ন গ্রেডের মধ্যে বৈষম্য কমিয়ে আনা ও ৪০ শতাংশ মহার্ঘ ভাতার দাবিগুলো ওঠে আসছে তাদের আন্দোলনে। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও মাথাপিছু আয় ও মূল্যস্ফীতিন সঙ্গে সমন্বয় করে ৯ম জাতীয় পে-স্কেলের দাবি একান্তই যৌক্তিক। এমতাবস্থায়, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ও জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধির ফলে নতুন পে কমিশন গঠনের মাধ্যমে ৯ম পে-স্কেল ঘোষণাসহ অন্যান্য বৈষম্য দূর করার পদক্ষেপ নেয়া অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে।

* ব্যাংক কর্মকর্তা ও কলামিস্ট

দুমকী, পটুয়াখালী

আলোকিত বাংলাদেশ
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত