নতুন শিক্ষায় অপ্রস্তুত শিক্ষক

যথাযথ প্রশিক্ষণ জরুরি

প্রকাশ : ১৪ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

দেশের শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন ব্যবস্থায় বড় রকমের পরিবর্তন এনে প্রণয়ন করা প্রাক-প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের নতুন শিক্ষাক্রমের রূপরেখার আনুষ্ঠানিক অনুমোদন দেয়া হয়েছে গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে। নতুন শিক্ষাক্রমে প্রাক-প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত বিদ্যমান পরীক্ষার চেয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধারাবাহিক মূল্যায়ন (শিখনকালীন) বেশি হবে। এর মধ্যে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত কোনো পরীক্ষা হবে না, পুরোটাই মূল্যায়ন হবে সারা বছর ধরে চলা বিভিন্ন রকমের শিখন কার্যক্রমের ভিত্তিতে। পরবর্তী শ্রেণিগুলোর মূল্যায়নের পদ্ধতি হিসেবে পরীক্ষা ও ধারাবাহিক শিখন কার্যক্রম- দুটোই থাকছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, এ বছর থেকে বিভিন্ন শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম পর্যায়ক্রমে চালু হবে। প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম- তিনটি শ্রেণিতে এবার নতুন শিক্ষাক্রমের যাত্রা শুরু হয়েছে। নতুন এ শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে শিক্ষকদের ভূমিকাই সবচেয়ে বেশি। কিন্তু শিক্ষকদের একটি বড় অংশ এখনও প্রশিক্ষণের বাইরে রয়ে গেছেন বলে প্রকাশ। তারা নিজেদের মতো করে নতুন শিক্ষাক্রমের বিভিন্ন বিষয় পড়াচ্ছেন শিক্ষার্থীদের। এদিকে, ‘নামকাওয়াস্তে’ অনলাইন প্রশিক্ষণ নেয়ার পর সরাসরি প্রশিক্ষণ নিয়েও কথা তুলেছেন শিক্ষকরা। প্রশিক্ষণ সময়ের স্বল্পতা, ক্ষেত্রবিশেষে মাস্টার ট্রেইনারদের দুর্বলতা, সমন্বয়হীনতাসহ বেশ কিছু অভিযোগ শিক্ষকদের। অনভিপ্রেত এসব ঘটনা অতিক্রম করা জরুরি হয়ে পড়েছে।

সূত্রমতে, স্কুলের পাশাপাশি মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষকদেরও প্রশিক্ষণের দায়িত্ব পায় মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)। গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর উপজেলা পর্যায়ে শিক্ষক প্রশিক্ষণ শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু অর্থের জোগান না হওয়ায় ২৬ ডিসেম্বর এই প্রশিক্ষণ শুরু করার কথা বলা হয়েছিল। সেটাও সম্ভব হয়নি। অর্থ সাশ্রয়ের লক্ষ্যে অনলাইনে সারা দেশের মাধ্যমিক স্তরের প্রায় সাড়ে ৩ লাখ শিক্ষকের প্রশিক্ষণ দেয়ার চেষ্টা করেছিল মাউশি। সে অনুযায়ী ২৭ ডিসেম্বর অনলাইনে শিক্ষক প্রশিক্ষণ শুরু হয়। এনসিটিবির দাবি, অনলাইন প্রশিক্ষণে সাড়ে ৩ লাখের বেশি শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। তবে মাঠপর্যায়ের চিত্র ভিন্ন বলে সংশ্লিষ্টদের অভিমত। সময়সূচি না জানায় অনেকেই প্রশিক্ষণে যুক্ত হতে পারেননি। আবার ইন্টারনেটের ধীরগতিসহ বিভিন্ন কারণে অনেক শিক্ষক অনলাইন প্রশিক্ষণে যুক্ত হননি। এছাড়া এমনও অনুযোগ রয়েছে, যারা অংশ নিয়েছেন, তারাও মনোযোগী ছিলেন না। কারণ, একমুখী প্রশিক্ষণ ছিল। প্রশ্ন করে জানার সুযোগ ছিল না। এদিকে জানা যায়, অনলাইন প্রশিক্ষণ শেষে গত ৬ জানুয়ারি শুরু হয়েছে সরাসরি প্রশিক্ষণ। ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত মোট ৫ কার্যদিবস চলবে এ প্রশিক্ষণ। এরপর শুরু হবে প্রধান শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ। পর্যবেক্ষণে পুরো ব্যবস্থাপনায় ত্রুটি এবং গুরুত্বের ঘাটতি স্পষ্ট, যা শিক্ষার মতো স্পর্শকাতর ক্ষেত্রে প্রত্যাশিত ছিল না।

নতুন শিক্ষাক্রমের মাধ্যমে এখানে একটি আমূল পরিবর্তন লক্ষণীয়। অথচ এটা বাস্তবায়নের জন্য ভালো পরিকল্পনা দেখা যাচ্ছে না। আবার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কারিকুলাম প্রণয়নে এমন কিছু দেশের কারিকুলামকে রেফারেন্স হিসেবে আনা হয়েছে, যেসব দেশের সক্ষমতার সঙ্গে আমাদের দেশের সক্ষমতার অনেক পার্থক্য। এ ক্ষেত্রে আমাদের সামগ্রিক বাস্তবতা কতটুকু বিবেচনায় এসেছে, তাতেও প্রশ্ন ওঠে। অন্যদিকে নতুন কারিকুলাম ফলপ্রসূ করতে হলে অবশ্যই কিন্ডারগার্টেনকে মূল্যায়ন করতে হবে। কারণ, এখানে ৫ লাখ শিক্ষক রয়েছেন। বলা যায়, নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে পর্যাপ্ত প্রস্তুতির ঘাটতি রয়েছে। এই অবস্থায় শিক্ষা টেকসই পরিকল্পনা নিয়ে এগুগোতে হবে। শিক্ষকদের যথাযথ প্রশিক্ষণের আওতায় এনে শিক্ষাকার্যক্রম নির্বিঘ্ন করতে হবে।