ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

পর্যালোচনা

মুনাফালিপ্সার কাছে মনুষ্যত্বের পরাজয়

রায়হান আহমেদ তপাদার, গবেষক ও কলামিস্ট, [email protected]
মুনাফালিপ্সার কাছে মনুষ্যত্বের পরাজয়

যেকোনো জাতির গতিপ্রবাহের সব বাঁক নির্ধারণ করে রাজনৈতিক নীতিনির্ধারকরা। স্রোতধারা তথা আমজনতা জানেই না সামনের বাঁকটির পর কি অপেক্ষা করছে। জীবন নদীর মানচিত্র তৈরি হয় নীতিনির্ধারক দ্বারা। তাই সমাজের চরম অবক্ষয়ের দায় তাদের উপরই বর্তায়। এ ক্রান্তিলগ্নে করোনার হিংস্র থাবা আর ইউক্রেন যুদ্ধে বিশ্ব মানচিত্র আজ রক্তাক্ত-ক্ষতবিক্ষত। বাংলাদেশসহ বিশ্ব অর্থনীতির চাকা থমকে আছে। এ ভয়াবহ পরস্থিতির মধ্যেও বিশ্ব রাজনীতির খেলা থেমে নেই। চীন এর উত্থানের কারণে সমগ্র এশিয়া মহাদেশে নতুন রাজনৈতিক মেরুকরণ ধীরে ধীরে দৃশ্যমান হচ্ছে। ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় বিশ্বব্যাপী অনেক দেশের অর্থনৈতিক সফলতার মিথগুলোও উলঙ্গ হয়ে পড়ছিল। সে তালিকায় আছে দক্ষিণ এশিয়ার কয়েকটি দেশও। নয়া উদারনৈতিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা এতদিন এসব দেশকে টাইগার হিসেবে দেখাচ্ছিল। অথচ এখন আইএমএফের কাছে তাদের হাঁটু মুড়ে প্রার্থনায় বসে থাকতে দেখা যাচ্ছে। শ্রীলঙ্কা ছাড়াও অন্তত আরও দুটি দেশ-বিদেশি দেনার ফাঁদে আছে এ অঞ্চলে। এসব দেশের নীতিনির্ধারকরা পরিস্থিতির জন্য ইউক্রেন যুদ্ধকে দায়ী করে যাচ্ছেন ক্রমাগত। কিন্তু যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিকে অজুহাত হিসেবে দেখিয়ে বাজার সিন্ডিকেটগুলো নতুন উদ্যমে সাধারণদের পকেট কাটতে পেরেছে। ঠিক এ কারণেই আংকটাডের হিসাবে এ বছর বিশ্ববাজার প্রায় ৩২ ট্রিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য করলেও আন্তর্জাতিক অর্থনীতির গতি বিপজ্জনকভাবে নিম্নমুখী। গত ১০ মাসে ইউক্রেন যুদ্ধে ৪২ হাজার ৩০০ মানুষ মারা গেছে, নিখোঁজ আরও ১৫ হাজার। যুদ্ধই ছিল গত বছরের বড় খবর। ইউরোপবাসীকে নানা ধরনের জ্বালানি সংকটে নাস্তানাবুদ করেছে যুদ্ধ। ৭০ লাখ শরণার্থীও গ্রহণ করতে হয়েছে তাদের। বিশ্বের প্রতিটি রান্নাঘরকে এ যুদ্ধ বিপদে ফেলেছে। এ লড়াই বিশ্বের অন্যতম বড় সামরিক শক্তি রাশিয়াকে লজ্জায়ও ফেলেছে।

ইউক্রেনের প্রচুর ক্ষতি করতে পারলেও দেশটিকে পদানত করতে সফল হয়নি তারা। এই ?দুর্যোগের ভেতর ইউরোপ-আমেরিকাণ্ডচীনের সামরিক শিল্পে দারুণ প্রবৃদ্ধিও ঘটে যায়। যুদ্ধাস্ত্রের বৈশ্বিক বাজারের আকার আগের বছরে ছিল ৪৭৫ বিলিয়ন। ২০২২-এ হলো ৫১৪ বিলিয়ন। বৃদ্ধি প্রায় ৮ ভাগ। সরবরাহ ব্যবস্থায় নানা বাধা-বিপত্তির মধ্যেই তাদের এই প্রবৃদ্ধি চলছে। অর্থনৈতিক পরাশক্তি হিসেবে চীনের অগ্রযাত্রা থামাতে যুক্তরাষ্ট্রের বাধা-নিষেধ কিছুটা কাজ করলেও পশ্চিমের অবরোধে রাশিয়া প্রত্যাশা মতো বিপদে পড়েনি এ বছর। বরং ওয়াশিংটনের চাপ মস্কো-বেইজিংকে কাছাকাছি এনেছে। বহুকাল অর্থনৈতিক গোলকায়নের শোরগোল দেখেছে বিশ্ব। এখন শেষমেশ অর্থনৈতিক-জাতীয়তাবাদ মদদ পাচ্ছে বড় শক্তিদের কাছে। কিছু দেশ চেষ্টা করছে ডলারভিত্তিক লেনদেনের পরাধীন দুনিয়া থেকে মুক্ত হতে। কিন্তু প্রায় সব অর্থনীতিবিদের অনুমান, আগামী বছর বিশ্ব অর্থনীতি খারাপ হবে। একের পর এক অর্থনৈতিক দুঃসংবাদের পাশাপাশি অবিশ্বাস্য গতিতে যুক্তরাষ্ট্র ও গণচীনের মধ্যে ঠান্ডা যুদ্ধের রণধ্বনিও বাড়ছিল এ বছর। তাইওয়ানকে ঘিরে ওয়াশিংটন ও বেইজিং নিয়মিত বাগবিত-ায় লিপ্ত ছিল। যুক্তরাষ্ট্রের শাসকরা অতীতের অস্পষ্টতা এড়িয়ে এ বছর খোলাখুলিভাবে তাইওয়ানের রাজনৈতিক স্বাতন্ত্র্য রক্ষায় সহযোগিতার আশ্বাস দেয়। গণচীন তার উত্তর দিয়েছে নিয়মিত তাইওয়ানের আকাশসীমা লঙ্ঘনের জন্য যুদ্ধবিমান পাঠিয়ে। তৃতীয় মেয়াদে দল ও সরকারপ্রধান হয়ে চীনের নেতা শি জিন পিংয়ের সামনে তাইওয়ানকে আয়ত্তে আনাই যেন প্রধান রাজনৈতিক লক্ষ্য হয়ে উঠেছে। একই সময় যুক্তরাষ্ট্রের চীন নীতিও আমূল বদলে গেছে। এ বছরে ভূরাজনীতির প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল এটা। সেই সূত্রে আন্তর্জাতিক উত্তেজনার যাবতীয় উপাদান ক্রমে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় জড়ো হচ্ছে। তার আঁচ লেগেছে বাংলাদেশের গায়েও। শক্তিধর দেশগুলোর ঢাকায় অবস্থিত দূতাবাসের প্রচার-প্রচারণাতেও ঠান্ডা যুদ্ধের উত্তপ্ত আলামত দেখা যাচ্ছিল বছর শেষে।

কূটনীতির এসব নগরযুদ্ধ আরও বাড়বে বলে অনুমান করা যায়। সর্বশেষ বৈশ্বিক মেরুকরণে বড় এক চমক ছিল ওয়াশিংটনের পুরোনো মিত্র সৌদি আরবের সঙ্গে চীনের সখ্য। এতে ইরানও খানিক হতবাক ও নিঃসঙ্গ হয়েছে। ইরান ছাড়া ওই অঞ্চলের অন্যান্য শক্তির মধ্যে ইসরাইলকে কাছে টানার করুণ চেষ্টাও ছিল মধ্যপ্রাচ্যে ২০২২ সালের গুরুত্বপূর্ণ প্রবণতা। ইরানে নারীদের গণআন্দোলন বিগত বছরের বড় আরেক বিস্ময় ছিল। ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয়ে এটা বছর শেষেও চলছিল।

এই বিক্ষোভ নারীদের হিজাব পরা নিয়ে স্থানীয় নীতি-পুলিশের বাড়াবাড়ির বিরুদ্ধে শুরু হলেও, ক্রমে সেটা গণতান্ত্রিক সংস্কারের দাবিতে রক্ত দিতে শুরু করে। অদম্য বিক্ষোভে বিস্মিত ইরান সরকার একপর্যায়ে নীতি-পুলিশের কাজ বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয়। তবে গণতন্ত্রপন্থিদের ধরপাকড় ও মৃত্যু অব্যাহত ছিল। প্রায় ৫০০ মানুষ এ আন্দোলনে মারা গেছে। তাদের মধ্যে আছে বহু নারী। ইউক্রেন ও ইরানের পাশাপাশি দক্ষিণ এশিয়ার ঘটনাবলিও এ বছর বিশ্ব মনোযোগ পেয়েছে। বিশেষ করে শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের শিরোনাম হয়েছে নিয়মিত।

যুদ্ধের পরিস্থিতি তো সর্বত্রই বিদ্যমান। বাণিজ্যযুদ্ধ মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ বেঁধেছে আমেরিকা ও তার মিত্রদেশগুলোর। ভুক্তভোগী হচ্ছে ইউক্রেনের মানুষ। শুধু ইউক্রেনের কেন, বিশ্বের সব মানুষই নিদারুণ কষ্টে পড়েছে। জ্বালানিসংকট, খাদ্য উৎপাদন হ্রাস, মুদ্রাস্ফীতি, মাদক, পর্নোগ্রাফি-সবকিছু আঘাত করছে মানুষকে। লাভ হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। আর অত্যাশ্চর্য সব রাজনৈতিক ঘটনা তো ঘটেই চলেছে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে ইতালিতে মুসোলিনিপন্থিরা আবার রাষ্ট্রক্ষমতা হস্তগত করবে- এটা এর আগে কি ভাবা গেছে? টালমাটাল ঘটনা ঘটেছে গ্রেট ব্রিটেনের রাজনৈতিক ইতিহাসেও। তিন মাসে সেখানে তিনজন প্রধানমন্ত্রী দৃশ্যমান হয়েছেন। বরিস জনসন বিদায় নেন নানা অভিযোগের বোঝা মাথায় নিয়ে।

এলেন এক নারী; বয়স তার অল্পই, কিন্তু টিকলেন মাত্র ৪৫ দিন। অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলা করার ব্যর্থতার মুখে বিদায় হলেন আত্মসম্মান রক্ষা করে। এবার তার চেয়েও কম বয়সের এমন একজন এসেছেন, জাতি দাম্ভিক ইংরেজদের রাষ্ট্রশাসনের ইতিহাসে যার প্রধানমন্ত্রী হওয়াটা এত দিন পর্যন্ত ছিল একেবারেই অকল্পনীয়। কিন্তু তাই বলে তিনি প্রধানমন্ত্রী হবেন, এমনটা কোনো ইংরেজ কবে ভেবেছিল?

তবে এটাই তো বাস্তবতা, নইলে তিনি প্রধানমন্ত্রী হবেন কেন? আর তিনি যে অযোগ্য, তাও নিশ্চয়ই নয়। অযোগ্য হলে তাকে বেছে নেয়া কেন? অবশ্যই যোগ্য। প্রথমত, তিনিও উগ্র রকমের রক্ষণশীল এবং তার নামের প্রথমে ঋষি থাকলেও তিনি মোটেই সাধুসন্ত নন। ঋষি সুনাক অত্যন্ত বাস্তববাদী এবং খুবই ধনী। এত ধনী কোনো ব্যক্তি এর আগে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী হননি। এই ঋষি অত্যন্ত শ্রেণিসচেতন; শ্রমিকশ্রেণির কোনো মানুষের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতার কোনো প্রমাণ নেই। পরিপূর্ণরূপে বিশুদ্ধই তিনি, পুরোপুরি রক্ষণশীল। ওদিকে আবার পড়াশোনার জন্য গিয়েছিলেন আমেরিকার এক বিশ্ববিদ্যালয়ে। তাই তার আধুনিকতা মোটেই প্রশ্ন সাপেক্ষ নয়। অন্যদিকে, যুক্তরাজ্যের পুঁজিবাদী অর্থনীতির এখন এমনই লেজেগোবরে দশা যে তার মতো একজন ভিনদেশিকেই সম্ভাব্য উদ্ধারকারী হিসেবে বেছে নেয়া হয়েছে। বয়স যার মাত্র ৪২। কনিষ্ঠতম প্রধানমন্ত্রী তিনি।

অদিকে ব্রিটিশ লেবার পার্টিতে বামপন্থি যারা ছিলেন, তারা এখন ঠেলাধাক্কার মধ্যে রয়েছেন। বছরের শেষ প্রান্তে ইসরাইলে প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন সেই নেতানিয়াহু, যার বিরুদ্ধে দেশের আদালতে দুর্নীতির মামলা এখনও চলমান। নিজে তিনি পর্যাপ্ত পরিমাণেই দক্ষিণপন্থি।

সুইডেন তো এতকাল তার উদারনীতির জন্যই বিশ্বখ্যাত ছিল। কিন্তু সেখানেও দক্ষিণপন্থিরা ক্ষমতায় বসে গেছে। ঘটনা একই। পুঁজির হাতে মেহনতিদের লাঞ্ছনা; মুনাফা লিপ্সার কাছে মনুষ্যত্বের পরাজয়। সর্বত্র ওই একই ব্যাপার। বিশ্বজুড়ে পুঁজিবাদীর যে উন্নয়ন ঘটেছে, তাতে মেহনতিদের দশা তো হয়েছে তেলাপোকার মতোই।

বিশ্বে শীর্ষ ধনীদের একজন হচ্ছেন ইলন মাস্ক। তিনি টুইটার প্রতিষ্ঠানটি কিনে নেন। নিয়েই ঠিক করেন প্রতিষ্ঠানের আরও উন্নতি ঘটাবেন। তার জন্য প্রথম চোটেই অর্ধেক কর্মচারীকে ছাঁটাইয়ের নোটিশ দিয়ে দেন। অন্যদের বলেন, কর্মঘণ্টা বাড়াতে হবে। সবকিছুই অবশ্য উন্নয়নের স্বার্থে।

আর উন্নয়নের অর্থ হচ্ছে মালিকের মুনাফার স্বার্থ নিশ্চিত করা। অর্থনৈতিক সংকটে সহিংসতা বাড়ছে। নির্বাচনে হেরে গিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছিলেন, তার বিজয় চুরি হয়ে গেছে; বিপুলসংখ্যক রিপাবলিকান তার সেই কথায় আস্থা রেখেছে, তাদের নিজেদের স্বার্থে। তারা আইনসভাগৃহে আক্রমণ চালিয়েছে আক্রমণকারীরা স্পিকার ন্যান্সি পেলোসিকে খুঁজছিল। সেবার অবশ্য তার দৈহিক কোনো ক্ষতি হয়নি। কিন্তু এবার মধ্যবর্তী নির্বাচনের আগে এক ঘাতক পেলোসির বাসগৃহে হানা দিয়েছিল, হাতের কাছে পেলে হয়তো তাকে হত্যাই করত। থাইল্যান্ডকে সবাই জানে শান্তিপ্রিয় দেশ বলে। সেখানে ঘটেছে অভূতপূর্ব ঘটনা। থাইল্যান্ড তাহলে কত দূরে এখন খোদ আমেরিকা থেকে? বাংলাদেশেও মানুষের ওই একই দশা। মেহনতিরা শ্রম করে, সুবিধা ভোগীরা শ্রমের ফসল হাতিয়ে নেয়, কিছুটা ভোগবিলাসে খরচ করে বাকিটা পাচার করে দেয়। আরব মূল্যবোধ সঙ্গে নিয়েই কাতার, আরব আমিরাত ও সৌদি আরব বিশ্ব পরিসরে বড় ভূমিকা নিতে চাইছে। সামাজিক এ রূপান্তরকে এগিয়ে নিতে কাতারকে ২২০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করতে হলো। বিশ্বকাপের পাশাপাশি বিগত বছরের বড় প্রাপ্তি ছিল মহামারির হয়রানি থেকে ধীরে ধীরে মুক্ত হওয়ার সুযোগ। যদিও কোভিড-১৯ একেবারে বিলীন হয়নি, কিন্তু বিধিনিষেধ অনেকটাই এখন স্মৃতি। মৃত্যুর নিয়তি নয়, মানুষ আবার বিশ্বসংসারের লাগাম নিতে পারল। তবে এর মধ্যে শ্রেণিযুদ্ধটাও বহাল তবিয়তে আছে। ব্রাজিলে বামপন্থি লুলা দ্য সিলভার ফিরে আসা মোকাবিলা হলো একই অক্টোবরে বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ধনী ইলন মাস্ক কর্তৃক ৪ হাজার ৪০০ কোটি ডলারে টুইটার কিনে নিয়ে।

মাঠের লড়াই বনাম বাকস্বাধীনতা নিয়ন্ত্রণের চলমান এসব সংঘাত বিশ্বজুড়ে আরও নানা চেহারায় হাজির ছিল ২০২২ সালে। রাশিয়ার লৌহ মানব পুতিন দীর্ঘ দিন ধরেই দেশটির একচ্ছত্র অধিপতি হয়ে আছেন। সমাজতান্ত্রিক এই দেশে কার্যত অন্য দলের সক্রিয়তার খবর খুব একটা পাওয়া যায় না। বিশ্বের সামগ্রিক রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক সংকটের মূলে কাজ করছে অর্থনৈতিক বৈষম্য। সম্প্রতি প্রকাশিত অক্সফামের রিপোর্টে দেখা গেছে বিশ্বের ৮২ ভাগ সম্পদের মালিক মাত্র ধনীক শ্রেণিভুক্ত মাত্র একভাগ মানুষ। আর এইসব ধনকুবেরদের ঠিকুজি খুঁজতে গেলে দেখা যাবে, বিশ্বের বেশিরভাগ সম্পদ গুঁটি কয়েক পরিবারের হাতে। পুঁজিবাদের অনিয়ন্ত্রিত ও বল্গাহীন বিকাশের কারণে একই ধরনের সামাজিক ব্যবস্থা, সাংস্কৃতিক পরিবেশ এবং রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা আওতায় থেকেও মানুষে মানুষে ব্যাপক পার্থক্য এবং বঞ্চনাবোধের মনোজাগতিক বিশৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে যে নতুন মানবিক সত্তার জন্ম হয়েছিল, সে সম্পর্কে মোটামুটি ধারণা না থাকলে অর্থনৈতিক সংকট ও মানবিক মূল্যবোধের অবক্ষয় রোধ করার পদক্ষেপ গ্রহণ অসম্ভব হবে। বিশ্ব-রাজনীতিতে আজ দেখা দিয়েছে এক নতুন মেরুকরণের। বিশ্বায়ন-অনুসৃত এ পরিবর্তন অবশ্য একমাত্র পরিবর্তন নয়, পাশাপাশি চোখে পড়ে তার আরও এক রূপ, সেটি হলো নিরাপত্তাহীনতা। আবেগকেন্দ্রিক বিশ্লেষণের রেওয়াজ যে একেবারে আকস্মিক, তা কিন্তু নয়। অতীতে সমাজ, রাজনীতি, সংস্কৃতির বিশ্লেষণে অনেকেই আবেগের প্রভাবে সম্মোহিত হয়েছেন। আবেগের তীব্র অনুভূতির সামাজিক ও শৈল্পিক মূল্য সম্পর্কে উল্লেখ আছে প্লেটো থেকে হবস ও কান্ট থেকে হেগেলের ভাববাদী দর্শনে। অষ্টাদশ শতাব্দীতে শিল্পবিপ্লব এবং প্রজ্ঞার বিজয় দিয়ে যে আধুনিক সমাজের জন্ম হয়, এর অতিমাত্রিকতায় ক্লান্ত হয়ে অনেক কবি, সাহিত্যিক ও দার্শনিক আবেগভিত্তিক নতুন আন্দোলন গড়ে তোলেন প্রজ্ঞার রাহু থেকে মুক্তির আশায়।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত