ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

রাজধানীর কাছেই ৫টি গ্রাম

সবাই স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত
রাজধানীর কাছেই ৫টি গ্রাম

ঢাকার কাছে কেরানিগঞ্জ উপজেলার ৫টি গ্রাম। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না হওয়ায় মনে হয় ঢাকার অনেক দূরে এ গ্রামগুলো। এই ৫টি গ্রামে ১৫ হাজার লোকের বসবাস। এরা সবাই স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত। সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা কমিউনিটি ক্লিনিকও নেই সেখানে। ফলে এলাকার লোকজন কারও অসুখ হলে দুর্ভোগের শেষ থাকে না। এমনকি উক্ত ৫টি গ্রামে কোনো ওষুধের দোকানও নেই। গ্রামগুলো হলো- চরচানাড়দাহ, চরখাড়াকান্দি, হোগলাগাতি, মধুরচর ও দক্ষিণ ঢালিকান্দি। এখানে আছে ২টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় অথচ ১টি স্বাস্থ্যকেন্দ্র নেই।

বাংলাদেশে সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার এক বৃহৎ পরিকল্পনা বর্তমান সরকার গ্রহণ করেছে। কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করে সরকার সারাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিচ্ছে। কিন্তু এ পরিকল্পনার মধ্যে উল্লেখিত ৫টি গ্রাম বাদ পড়ল কীভাবে জানা যায়নি। হয়তো ভুল হতে পারে হয়তোবা পরে স্বাস্থ্যকেন্দ্র করা হবে বলে তা করা হয়নি। কমিউনিটি ক্লিনিক বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতের এক বৈপ্লবিক অবদান। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের সাধারণ মানুষ খাতে চিকিৎসা পায়, সে জন্যই এই প্রকল্পটি হাতে নেয়া হয়েছিল। উল্লেখ করা দরকার এই প্রকল্পটি আওয়ামী লীগ সরকার হাতে নিলেও পরবর্তীকালে বিএনপি-জামায়াত সরকার তা বাতিল করে দেয়। পরে আবার ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর তা পুনরায় চালু করে এবং বর্তমানে ঘরে ঘরে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেয়া সম্ভব হচ্ছে। ভবিষ্যতে এই সেবা আরও বাড়ানো হবে বলে পরিকল্পনা রয়েছে। স্বাস্থ্যসেবা প্রত্যেকের একটি মৌলিক অধিকার। এই অধিকার যেমন সবার, তেমনি এই অধিকার পূরণ করার দায়িত্বও সরকারের। সরকার সেভাবেই এগোচ্ছে। এ এগোনোর পথে মাঝেমধ্যে কিছু সমস্যা দেখা দেয়। পরে আবার তার সমাধানও করা হয়। কেরানিগঞ্জের এই ৫টি গ্রামের এই সমস্যাও দূর হয়ে যাবে। প্রতি ৬ হাজার মানুষের জন্য একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র করার কথা। সেই অনুযায়ী এই পাঁচটি গ্রামের ১৫ হাজার মানুষের জন্য ৩টি স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপনা করা যেতে পারে। আমাদের স্বাস্থ্যসেবা তৃণমূল পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। যেটুকু বাদ আছে তা অচিরেই পূর্ণ করা হবে।

এখন তো অনেক ভালো অবস্থা। ১০/১৫ বছর আগেও প্রত্যন্ত অঞ্চলে চিকিৎসাসেবা কেউ কল্পনাও করতে পারত। কারও কোনো অসুখ হলে নিকটস্থ হাটবাজার থেকে কবিরাজের কাছ থেকে ওষুধ আসতে হতো। যাদের সামর্থ ছিল তারা অনেক পথ পাড়ি দিয়ে সদরে নিয়ে চিকিৎসা করাত। বর্তমানে সে সবই স্মৃতি। এখন অন্তত প্রাথমিক চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত হয়েছে। এটাই বা কম কি? সবচেয়ে সুখের কথা যে, প্রত্যন্ত অঞ্চলে আজকাল নিরাপদ প্রসব করানোর ব্যবস্থাও করা হচ্ছে। এই ব্যবস্থার ফলে দেশে প্রসবকালীন শিশু মৃত্যুর হার অনেক কমেছে। শুধু নবজাত কিছুই নয় প্রসবকালীন সময়ে মায়ের মৃত্যু হারও কমেছে। সুতরাং আমরা এ কথা বলতে পারি যে, সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যসেবায় সরকারের আন্তরিকতার কোনো ঘাটতি নেই।

আমরা আশা করব, সরকার বিভিন্ন খাতে যেমন উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রেখেছে তা আরও সমৃদ্ধ হবে। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য যা কিছু দরকার সবই করতে হবে। মানুষের মৌলিক অধিকারের অন্যতম হলো স্বাস্থ্য। এই অধিকার পরিপূর্ণ করা সরকারের দায়িত্ব। সরকার যেহেতু জনগণের সেহেতু সরকার এ কাজটি করতে পিছপা হবে না। আমরা আশা করব, সরকারের পাশাপাশি উক্ত এলাকায় কোনো ব্যক্তি, ব্যক্তি উদ্যোগে হাসপাতাল করতে এগিয়ে এলে সরকার তাকেও সহযোগিতা দেবে। সরকারি ও বেসরকারি উভয়ে যে কোনো বিষয়ে উদ্যোগ নিয়েই এগোতে হবে। কেননা, এসব কাজই জনগণের জন্য।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত