ঢাকা ০৮ জানুয়ারি ২০২৫, ২৪ পৌষ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

মধুও আর মধু নেই

ভেজাল ঢুকেছে সেখানেও
মধুও আর মধু নেই

ভেজাল খাদ্যে আমাদের মতো পারদর্শী বোধ হয় বিশ্বে কেউ নেই। আমরা এতই পারদর্শী যে, এমন খাদ্য তৈরি করি, যেখানে সেই খাদ্যের কোনো উপাদানই থাকে না। যেমন- গুড়। গুড় সাধারণত রস থেকেই তৈরি হয়। আখের রস অথবা খেজুরের রস থেকে। কিন্তু আমরা এমন গুড় তৈরি করি, যা অবিকল গুড়ের মতো; অথচ গুড়ের কোনো উপাদানই সেখানে নেই। এটা তৈরি করতে কোনো রসের প্রয়োজন হয় না। সম্পূর্ণ কেমিক্যাল দিয়েই তৈরি করা যায় এইসব গুড়। সারা বছর বাজারে তা বিক্রি হয়। ভেজালকারীরা আখ বা খেজুরের মৌসুমের তোয়াক্কা করে না। এই ভেজাল প্রযুক্তির নতুন সংযোজন মধুতে। মধুও আর মধু থাকছে না। জিরা মধু, সরষে মধু, চাকভাঙা মধু- সবই তৈরি হচ্ছে কারখানায়, যেখানে মধুর কোনো উপাদানই নেই। অথচ মধুর মতোই দেখতে এবং মধুর মতোই মিষ্টি।

কিছুদিন আগে এমন বেশ কিছু ভেজাল গুড় জব্দ করা হয়েছিল উত্তরাঞ্চলের কয়েকটি জায়গায়। জরিমানাও করা হয়েছিল। ভেজাল গুড় নষ্টও করা হয়। তেমিন এবার ভেজাল মধুও আটক করা হয়েছে সাতক্ষীরায়। সাড়ে ৪ হাজার কেজি ভেজাল মধু জব্দ করে তা নষ্ট করা হয় এবং উৎপাদনকারীকে ৩ লাখ টাকা জরিমানা ও ১ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়।

আমাদের দেশে খাদ্যে ভেজাল এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, আসল খাদ্য মেলাই এখন চিন্তার বিষয়। আমরা যা খাচ্ছি কোনটা আসল, কোনটা নকল বুঝতে পারছি না। খেয়ে যাচ্ছি। এই ভেজাল খাদ্য ধীরে ধীরে শরীরে প্রতিক্রিয়া শুরু করছে, আমরা তা বুঝতে পারছি না। পরে যখন অসুস্থ হয়ে পড়ছি, তখন চিকিৎসক বলছেন, খাদ্য থেকে এমনটা হয়েছে। চিকিৎসা নেয়া হচ্ছে। ভালো হচ্ছে অসুখ। আবার কিছু দিন পর একই অবস্থা। চিকিৎসকের মতে, পেটের যত অসুখ তার ৯৫ শতাংশ হয় খাদ্য থেকে। এতেই বোঝা যায়, আমরা কী খাদ্য খাচ্ছি। গুড় না হয় শৌখিন পণ্য; কিন্তু মধু তো খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি খাদ্য। শিশুকাল থেকে বৃদ্ধকাল পর্যন্ত নানাবিধ প্রয়োজন হয় এই পণ্যটির। তাই মধুতে ভেজাল অবস্থা দূর করতে হবে। সাতক্ষীরায় যেমন অভিযান চালিয়ে ভেজাল মধুর সন্ধান পাওয়া গেছে, ঠিক একইভাবে সারা দেশে অন্যান্য খাদ্যের ভেজাল সন্ধান করতে অভিযান চালাতে হবে। আমাদের বিশ্বাস, এমন অভিযান চালালে ভেজাল খাদ্যের যে অবস্থান আবিষ্কার হবে, তাতে জনগণ চমকে উঠবেন। গুড় ও মধুকে যদি আমরা অপ্রচলিত খাদ্য হিসেবে ধরি, তাহলে প্রচলিত খাদ্য হিসেবে আমরা দৈনিক কী খাচ্ছি- সেটাও বের করা দরকার। সে জন্যই প্রয়োজন সর্বত্র অভিযান। অভিযান শেষে জেল-জরিমানাসহ কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করলে খাদ্যে ভেজালের প্রবণতা কমতে বাধ্য। বিদেশে খাদ্যে ভেজালের দায়ে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা আছে। আমাদের দেশেও কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা রেখে আইন পাস করা দরকার। কেননা, ভেজাল খাদ্য খেয়ে একজন মানুষ অসুস্থ হয়ে মৃত্যুর কারণও হতে পারে। মৃত্যু না হলেও সারা জীবন ধুঁকে ধুঁকে মরতে পারে। এ তো মৃত্যুরই সমান।

আমরা আশা করি, যে কোনো মূলেই হোক খাদ্যে ভেজাল রোধ করতে হবে। খাদ্যে কোনো রকম কম বা বেশি ভেজাল দেয়া যাবে না। ভেজালের গন্ধ পেলেই তার ব্যবস্থা নিতে হবে। মধুর মতো একটি বহুল গুণাগুণসম্পন্ন খাদ্যকে তার আসল অবস্থানে রাখতে হবে। প্রাকৃতিক এই খাদ্যে কোনো রকম ভেজাল দেয়া যাবে না। মধুকে মধু হয়ে থাকতে দিন, সেই সঙ্গে অন্য খাদ্যেও যেন ভেজাল না ঢোকে, তার স্থায়ী ব্যবস্থা নিন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত