ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

অভিমত

গণপরিবহণে নারী নিরাপদ কতটুকু?

মহিমা ইসলাম রিমি, শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, [email protected]
গণপরিবহণে নারী নিরাপদ কতটুকু?

সভ্যতার চরম উৎকর্ষে নারীরা তাদের যোগ্যতার প্রমাণ রাখছে ঘরে-বাইরে উভয় ক্ষেত্রেই। আগের শৃঙ্খলিত জীবন ভেঙে নিজ প্রতিভা ও দক্ষতার বিকাশ ঘটিয়ে তারা সফলতার স্বাক্ষর রেখে চলেছে প্রতিনিয়ত। কাজেই স্বাভাবিকভাবেই তাকে প্রয়োজনে বাইরে যেতে হচ্ছে। কর্মক্ষেত্র, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ নানা প্রয়োজনে গণপরিবহণ ব্যবহার করতে হয় তাদের। কিন্তু এ গণপরিবহণ নারীদের জন্য কতটুকু নিরাপদ? উত্তরে নানা প্রতিক্রিয়া আসলেও একটা সর্বসম্মতভাবে উত্তর হবে- ‘নিরাপদ নয়’। এর জন্য একটু কারণ অনুসন্ধান করলেই দেখা যাবে গণপরিবহণে নারীদের হেনস্তার ভয়াবহ চিত্র। অল্প বয়স্ক বালিকা, তরুণী, কর্মজীবী নারী এমনকি বৃদ্ধা নারীরাও এই হেনস্তার শিকার হচ্ছে প্রতিনিয়ত। গণপরিবহণের চালক ও তার সহায়ক থেকে শুরু করে বিভিন্ন বয়সি বিশেষ করে মধ্যবয়স্ক পুরুষ যাত্রীদের দ্বারাই হেনস্তার শিকার হন নারীরা। হেনস্তা করার সময় তারা ব্যবহার করেন স্বাভাবিক থাকার অভিনব কৌশল আর বিষয়টি প্রত্যক্ষ করা প্রতিটি ব্যক্তিই প্রতিবাদ না করে বরং বোবা হয়ে থাকার গুরুদায়িত্ব পালন করে থাকেন। নারীদের জন্য গণপরিবহণে ওঠা থেকে শুরু করে নামা পর্যন্ত পুরো সময়টা যেন এক আতঙ্ক। যেমন : বাসে উঠতেই অপ্রয়োজনে হেল্পারের ইচ্ছাকৃত নারী যাত্রীদের হাত ধরা বা পিঠে স্পর্শ করা, পাশে বসা পুরুষ যাত্রীদের ইচ্ছাকৃত নারীর শরীর ঘেঁষে বসা, আপত্তিকর জায়গায় হাত দেয়া, ঘুমানোর নাম করে কাঁধে মাথা রাখা, দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় ইচ্ছাকৃতভাবে ধাক্কা দেয়া, অপলক দৃষ্টিতে বাজে ভঙ্গিতে তাকানো, অশালীন অঙ্গভঙ্গি ও মুখে আপত্তিকর আওয়াজ করা এগুলো হরহামেশাই ঘটছে। এগুলোর বাইরে ধর্ষণ ও হত্যার মতো ঘটনাও জনগণ প্রত্যক্ষ করেছে। 

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির সমীক্ষা অনুযায়ী, ২০১৬-১৯ এই ৪ বছরে গণপরিবহণে ১৩৪টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে যার ৪২টি গণধর্ষণ। যৌনহয়রানি হয়েছে ৯১টি। আঁচল ফাউন্ডেশনের করা সাম্প্রতিক সমীক্ষায় দেখা গেছে, গণপরিবহণের ৪৫.২৭ শতাংশ নারীই যৌনহয়রানির শিকার। আর একাকী চলার সময় যৌন হয়রানির শিকার হন ৭৫.৬০ শতাংশ নারী। এই হার ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। তবে লোকলজ্জার ভয়ে কতজন নারী তাদের হেনস্তার কথা প্রকাশ্যে আনেন সেটাও ভাবার বিষয়। 

তবে এখন সময় এসেছে গণপরিবহণে নারীর নিরাপত্তা নিয়ে ভাবার। নারীদের অধিকার আদায়ের অন্যতম পদক্ষেপ হিসেবে তাদের নিরাপদ চলাচলকে নিশ্চিত করতে হবে। গণপরিবহণে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। যেমন : বহু আগে থেকেই নারীদের জন্য আসন সংরক্ষিত করা হয়েছে, সচেতনতা বাড়াতে লিফলেট বিলি ছাড়াও গণপরিবহণে যৌনহয়রানি শিকার হলে, সেই রুট বাতিল করার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। 

বেসরকারি উদ্যোগে ‘দোলনচাঁপা’ নামে মহিলা বাস সার্ভিস চালু করা হয়েছে। এমন সার্ভিস আরও বৃদ্ধি করে গ্রাম পর্যায়েও প্রসার ঘটানো প্রয়োজন। গণপরিবহণে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নারীবান্ধব যানবাহন, চালক ও সহকারী নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি পরিবর্তন আনতে হবে যাত্রীদের মানসিকতায়ও। হয়রানির শিকার হলে চুপ না থেকে তৎক্ষণাৎ প্রতিবাদ করতে হবে। প্রয়োজনে জরুরি হটলাইন নম্বরে কল দিয়ে সাহায্য নিতে হবে। নারীবান্ধব পরিবহন ব্যবস্থা গড়তে ও পেশাগত নারী গাড়িচালক গড়তে কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে। সর্বপোরি, মায়ের জাত নারীদের সম্মান ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারিবারিক শিক্ষা ও মূল্যবোধ বৃদ্ধিতে জোর দিতে হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত