ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

তামাকমুক্ত দেশ চাই

ক্ষতি হচ্ছে ৮ হাজার কোটি টাকা
তামাকমুক্ত দেশ চাই

তামাক একটি কৃষিজাত পণ্য। এটা এক ধরনের বিষ। এ কথা জানা সত্ত্বেও দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে এর ব্যবহার। পৃথিবী থেকে ধীরে ধীরে এর ব্যবহার কমিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। তামাক বিভিন্নভাবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। সিগারেট, গুল, জর্দা ইত্যাদি নানা ধরনের ব্যবহারে মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে মানবজীবনে ও সমাজে। তবুও এটাকে বন্ধ করা যাচ্ছে না। নেশার এই পণ্যটির ব্যবসা অনেক লাভজনক বলেই এবং তামাক কোম্পানিগুলো ব্যাপক ভ্যাট দেয়ার কারণে এটাকে বন্ধ করা যাচ্ছে না। তবে বাংলাদেশ ২০২৪ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে বলে পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে, যা সফল করা খুবই কষ্টকর।

তামাক এমনই একটি পণ্য, যার ব্যবহারে সব দিকেই ক্ষতি। যেখানে চাষ হয়, সেই মাটিতে অন্য কোনো ফসল ভালো হয় না। তামাক ব্যবহারে মারাত্মক অসুখে ভুগতে হয়। ক্যান্সারের মতো অসুখ এই কারণে বেশি হয়। তামাক থেকে তৈরি সিগারেটের ফিল্টার এমন কিছু দিয়ে তৈরি, যা মাটির সঙ্গে মিশতে ১০ বছর সময় লাগে। এতে পরিবেশ নষ্ট হয়। বাংলাদেশের প্রায় ৪ কোটি মানুষ তামাক ব্যবহার করে। এরা তো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেই, সেই সঙ্গে যারা ধুমপান করে না, এমন আরও প্রায় ৪ কোটি মানুষ পরোক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তামাকে একমাত্র এর ব্যবসায়ী ছাড়া অন্য কারও কোনো উপকার বা লাভ হয় না। সরকারও এ থেকে প্রচুর পরিমাণে ভ্যাট-ট্যাক্স পেয়ে থাকে। বলা যায়, এই খাত থেকেই সবচেয়ে বেশি আয় হয় সরকারের।

এক তথ্যে জানা যায়, বছরে ২২ হাজার ৮১০ কোটি টাকা রাজস্ব আসে এই খাত থেকে। অপরদিকে স্বাস্থ্যজনিত ক্ষতি হয় ৩০ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা। এতে নিট ক্ষতি ৮ হাজার কোটি টাকা। সুতরাং দেখা যাচ্ছে, কোনোভাবেই সরকারের আসলে কোনো লাভই হচ্ছে না। সবদিক থেকে ক্ষতিই হচ্ছে। তাই তামাকমুক্ত দেশ গড়ার তাগিদ খুবই জরুরি। গত রোববার ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের স্বাস্থ্য সেক্টরের আয়োজনে এক আলোচনা সভায় তামাক সম্পর্কে নানাবিধ তথ্য উঠে আসে।

আমরা মনে করি, তামাক একটি নেশা জাতীয় পণ্য। এই পণ্য মানুষের ও পরিবেশের ক্ষতি করে। তামাককে ‘মাদক’ হিসেবে গণ্য করা যায় কি-না, আমরা ভেবে দেখতে পারি। মাদক হিসেবে গণ্য করলে এটাকে নিষিদ্ধ করা সহজ হবে। এ ব্যাপারে সরকার ভেবে দেখতে পারে। ২০২৪ সালের মধ্যে দেশকে তামাকমুক্ত করতে হলে এখনই যেসব ব্যবস্থা নেয়া দরকার, তা দ্রুত নিতে হবে। আর কোনো সময় দেয়া ঠিক হবে না। রাজস্ব আয় বাড়ানোর কথা চিন্তা না করে এই খাতটি বাদই দিতে হবে। তা ছাড়া রাজস্ব আয় তো এ থেকে বাড়ে না। যেটুকু রাজস্ব থেকে আয় হয়, তার চেয়ে বেশি এই খাতের কারণে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ব্যয় করতে হয়। মূলত স্বাস্থ্য খাতে। সুতরাং এই খাত থেকে আয়ের কোনো দরকার নেই। বরং তাতেই লাভ। কেননা, আয়-ব্যয় ও যে ৮ হাজার কোটি টাকা ঘাটতি থাকে, এই খাতটি না থাকলে এই খরচটাও হবে না। বরং ৮ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় হবে।

আমরা আশা করি, ২০২৪ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত দেশ গড়া সম্ভব হবে। কোনো বাধাই আর কাজ করবে না। আমাদের বিশ্বাস, তামাকমুক্ত বাংলাদেশ বিশ্বে নজির সৃষ্টি করতে পারবে, যা দেখে অন্য তামাক ব্যবহারকারী দেশ অনুপ্রাণিত হবে। শেষ কথা- ‘তামাকমুক্ত দেশ চাই’।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত