শিক্ষার্থীদের হাতে যথাসময়ে পাঠ্যবই পৌঁছানোর বিষয় নিয়ে একটি সংশয় আগে থেকেই ছিল। এই নিয়ে মিডিয়ায় আলোচনা হয়েছে; কিন্তু দায়িত্বশীল প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন- শিক্ষার্থীরা সময় মতোই বই পাবে। বাস্তবে তা পুরাপুরি পূরণ হয়নি। নিয়ম অনুযায়ী পহেলা জানুয়ারি সারা দেশে শিক্ষার্থীদের হাতে বিনামূল্যে পাঠ্যবই তুলে দেয় সরকার। কিন্তু সব শিক্ষার্থী এ বই পায়নি। আবার যারা পেয়েছে, তাদের মধ্যে অনেকে সব বই পায়নি। এদিকে প্রকাশ, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) বিভিন্ন সংকটের কারণে যথাসময়ে শিক্ষার্থীদের হাতে বই দিতে পারেনি বললেও খোলা বাজারে সহজেই মিলছে নতুন বই। এসব বই চড়া দামে বিক্রি করছে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী। অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের হাতে যেসব নতুন বই তুলে দেয়া হয়েছে, সেসব বইও ভুলে ভরা। ইতিহাস থেকে শুরু করে তথ্য ও পরিসংখ্যানগত ভুল রয়েছে এসব বইয়ে। আছে বানান ও যতি চিহ্নের ভুলও। পাঠ্যপুস্তকে এমন ভুল নিয়ে চলছে সমালোচনা। সচেতন নাগরিক এবং অভিভাবকরা এই নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে এবং কর্তৃপক্ষের চরম দায়িত্বহীনতা বিস্ময়ের উদ্রেক করেছে। ভুলের বহর এমন ভয়াবহ যে, এরই মধ্যে পাঠ্যবইয়ের ভুল ধরার জন্য একটি কমিটি গঠন করেছে এনসিটিবি।
করোনাকালে দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে শিখন ঘাটতি রয়েছে। এ অবস্থায় নতুন বই না পাওয়ায় নতুন শিক্ষাবর্ষের শুরতেই শিক্ষার্থীরা হোঁচট খেল। এর সঙ্গে ভুল ও বিভ্রান্তির নানা অনুষঙ্গ পাঠ্যবইয়ে যুক্ত হয়েছে, যা শিক্ষার্থীর জন্য ভয়াবহ ক্ষতির কারণ হতে পারে। লক্ষণীয়, প্রতি বছরই শুরুতে শিক্ষার্থীরা বই না পেলেও খোলাবাজারে মেলে এনসিটিবির বই। পত্রিকান্তরে প্রকাশ, ২০২৩ শিক্ষাবর্ষের সব শ্রেণিরই নতুন বই পাওয়া যাচ্ছে দোকানে। দর কষাকষি করে বিক্রি হচ্ছে। বিক্রেতাদের বরাতে প্রকাশ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাওয়া না গেলেও তাদের কাছে সব শ্রেণির বই-ই পাওয়া যায়। কোনোটি না থাকলে ম্যানেজ করে দেয়া যাবে- এমন নিশ্চয়তাও প্রদান করা হয়। কোথা থেকে এসব বই আসছে? আর পাঠ্যবইয়ে ভুলের বিষয়ে এনসিটিবি কর্মকর্তারা জানান, পর্যাপ্ত জনবল না থাকায় পাঠ্যবইয়ে কিছু কিছু ভুল থেকে যাচ্ছে। তারা বলছেন, চলতি বছরের নতুন বইয়ের কয়েকটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, শুধু অষ্টম ও নবম-দশম শ্রেণির বইয়ে ৩০টির অধিক ভুল রয়েছে। পরিতাপের বিষয়, মহান মুক্তিযুদ্ধের অনেক ঘটনা ও তথ্যে ভুল করা হয়েছে। অথচ গ্রন্থ প্রণয়নকারীরা নিজেদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণকারী হিসেবেই পরিচয় দিয়ে থাকেন। এমনকি অনেক অনৈতিহাসিক, অসত্য ও বিভ্রান্তিকর তথ্য রয়েছে পাঠ্যবইয়ে। এতে শিক্ষার্থী তো বটেই, সমাজেও বিরূপ প্রভাব তৈরির সম্ভাবনা থাকে। সংগত কারণেই পাঠ্যবইয়ে ভুল তথ্যের বিষয়টি দুঃখজনক।
আমরা জানি, পাঠ্যবই রচনায় একটি প্রক্রিয়া অবলম্বন করা হয়। প্রতিটি বই প্রেসে দেয়ার আগে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিদের দেয়া হয়। তারা চূড়ান্ত করার পরই বই প্রেসে দেয়া হয়। কিন্তু দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের চোখে ভুলগুলো ধরা পড়ে না কেন? এটা কি তাদের অজ্ঞতা না অসচেতনতা? আবার ইতিহাসের সত্য নিয়ে লেখকদের কারও নিজস্ব বিশ্বাস প্রতিফলিত হয়েছে কি-না তাও দেখার বিষয়। এই নিয়ে সংশ্লিষ্টদের দায় ও দায়িত্ব বহন করতেই হবে। শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি জানিয়েছেন, নতুন বইয়ে যে ভুল রয়েছে সেগুলো আগামী বছরগুলোতে সংস্কার করা হবে। তাহলে এবার কি শিক্ষার্থীরা ভুল তথ্য ও ইতিহাস পড়েই শিক্ষাবর্ষ পাড়ি দেবে? এ নিয়ে কর্তৃপক্ষের দিকনির্দেশনা থাকা উচিত।