ঢাকা ০৮ জানুয়ারি ২০২৫, ২৪ পৌষ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বিদেশে বাংলাদেশিদের প্রপার্টি

বৈধতার দিকটি ক্ষতিয়ে দেখা দরকার
বিদেশে বাংলাদেশিদের প্রপার্টি

একশ্রেণির লোক দেশের বাইরে অর্থপাচার করছে এ রকম অভিযোগ দীর্ঘদিনের। তবে সাম্প্রতিককালে এ বিষয়টি ব্যাপক আলোচনায় আসছে। শুধু অর্থ নয়, ইদানিং বিদেশে ভূসম্পত্তি ও আবাসনসহ (রিয়েল এস্টেট) বিভিন্ন খাতে বাংলাদেশিদের বিনিয়োগ ও মালিকানা বেড়েছে তা স্পষ্ট হচ্ছে। লক্ষণীয় যে লন্ডনের সবচেয়ে অভিজাত এলাকা কিংবা দুবাইয়ের মতো বিলাসবহুল স্থানেও বাংলাদেশিরা গোপনে প্রপার্টির মালিকানা ক্রয় করেছেন এমন তথ্যও বেরিয়ে আসছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রকাশ্যে-গোপনে বিপুল পরিমাণ মূলধন স্থানান্তরিত হচ্ছে দুবাইয়ে। প্রকাশ, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড ডিফেন্স স্টাডিজের (সি৪এডিএস) সংগৃহীত তথ্য বিশ্লেষণের ভিত্তিতে ইইউ ট্যাক্স অবজারভেটরি জানিয়েছে, বাংলাদেশে তথ্য গোপন করে দুবাইয়ে প্রপার্টি কিনেছেন ৪৫৯ বাংলাদেশি। আরও প্রকাশ, লন্ডনের সবচেয়ে অভিজাত এলাকাগুলো যা স্থানীয়দের কাছে পরিচিত ‘প্রাইম সেন্ট্রাল লন্ডন’ হিসেবে, সেখানেও জাতীয়ভিত্তিক শীর্ষ বিদেশি ক্রেতা বাংলাদেশিরা। এখানে প্রপার্টি কেনায় জাপানি ধনীদের চেয়েও বেশি ব্যয় করেছেন তারা। বাড়িগুলোর মতো তাদের বিলাসবহুল দামি গাড়িও ঈর্ষান্বিত করে তুলছে সেখানকার বাসিন্দা স্থানীয় ও বিদেশি ধনকুবেরদেরও। তথ্য অনুযায়ী, গত এক যুগে যুক্তরাজ্যের গোটা প্রপার্টি বাজারেই বাংলাদেশিদের উপস্থিতি বেশ জোরালো হয়েছে। এ তালিকায় অফশোর প্রপার্টি হিসেবে বেনামে নিবন্ধিত সম্পত্তির পাশাপাশি বাংলাদেশের ঠিকানায় নিবন্ধনকৃত প্রপার্টিও রয়েছে অনেক। এখানে শুধু যুক্তরাজ্য ও দুবাইয়ে বাংলাদেশিদের প্রপার্টিও প্রসঙ্গটি এসেছে, অনুসন্ধানে অন্য কোনো দেশেও এরকম সম্পত্তি খোঁজ মিলবে তা জোর দিয়েই বলা যায়।

একজন লোক বিদেশে বিনিয়োগ কিংবা সম্পত্তির মালিক হতেই পারেন, তবে উদ্বেগের কারণ হয়, যখন এগুলো ঘটে অবৈধ পন্থায়। ওয়াকিবহাল মহলের মতে, বাংলাদেশ থেকে বৈধ কোনো উপায়ে বৃহৎ বিনিয়োগে বিদেশে প্রপার্টি কেনার সুযোগ নেই। সে হিসেবে এখানে যে বিনিয়োগের কথা বলা হচ্ছে, ধরে নিতে হবে এর সিংহভাগই হয়েছে অবৈধভাবে পাচারের মাধ্যমে। এমনকি পুরোটাই পাচারের মাধ্যমে হয়েছে, এটি বললেও খুব একটা ভুল হবে না। এভাবে বিশ্বের অভিজাত শহরগুলোতে গড়ে ওঠেছে কথিত ‘বেগমপাড়া’। এ ভয়াবহ বিষয়টি যে দায়িত্বশীলদের অজানা তা বলা যাবে না। কারণ আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আগেই বলেছিলেন কানাডায় বেগম পাড়ায় যারা যারা বাড়ি করছেন তাদের মধ্যে অনেক আমলা আছে। পররাষ্ট্র সচিবও বলেছিলেন, আমাদের বাংলাদেশের মানুষ যারা আমেরিকা, কানাডা, ইংল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশে থাকে, তারা এ দেশের সম্পত্তি বিক্রি করে টাকা নিয়ে যাচ্ছেন, সেটা বৈধ পথে নিচ্ছেন না। পররাষ্ট্রসচিব এ বিষয়টি স্বরাষ্ট্র এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন। সম্প্রতি জাতীয় সংসদেও এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে এবং তদন্ত করার দাবি ওঠেছে। পত্র-পত্রিকায়ও সংবাদ, প্রতিবেদন ও মতামত প্রকাশিত হচ্ছে। অর্থাৎ জাতীয় স্বার্থ সংশ্লিষ্ট এই বিষয়টি এখন আর এড়িয়ে যাওয়ার উপায় নেই। এই বিষয়টি নিয়ে যথাযথ অনুসন্ধান সময়ের দাবি।

বাংলাদেশের অর্থনীতির আকার বাড়ছে, সম্ভাবনাও তৈরি হয়েছে। এই অবস্থায় দেশের অর্থ বিদেশে পাচার অশনি সংকেতই বলতে হবে। এতে দেশে যেমন বিনিয়োগ কমে যায়, তেমনি দেশের ব্যবসাবান্ধব পরিবেশকেও করে প্রশ্নবিদ্ধ। এই অবস্থায় বিদেশিরাও এখানে বিনিয়োগে আস্থাহীনতায় ভুগবে। অর্থাৎ দেশের স্বার্থ ও ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হবে। সংগত কারণেই কারা অর্থপাচার করছে, কেন করছে এবং কি উপায়ে করছে তা জানা দরকার। সহযোগী পত্রিকায় দাবি করা হয়েছে, লন্ডনসহ যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন অভিজাত এলাকায় অন্তত অর্ধশত বাংলাদেশি রাজনীতিবিদ, আমলা, ব্যবসায়ী ও ব্যাংকারের বাড়ি কেনার সুনির্দিষ্ট তথ্য তারা পেয়েছে। এমন তথ্য সরকারের সংস্থাগুলোও অজানা থাকার কথা নয়। তাই এই নিয়ে সরকার যথাযথ পদক্ষেপ নেবে- এটাই প্রত্যাশা।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত