ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বিশেষ শিশুদের পরম বন্ধু

মানবসেবায় উৎসর্গকৃত সায়মা ওয়াজেদ পুতুল

অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান, চেয়ারম্যান, রেসপিরেটরি মেডিসিন বিভাগ ও কোষাধ্যক্ষ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়
মানবসেবায় উৎসর্গকৃত সায়মা ওয়াজেদ পুতুল

আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন অটিজম বিশেষজ্ঞ, স্কুল সাইকোলজিস্ট, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক অ্যাডভাইজরি প্যানেলের বিশেষজ্ঞ, বাংলাদেশের অটিজম বিষয়ক জাতীয় উপদেষ্টা কমিটির সভাপতি সায়মা ওয়াজেদ পুতুল। তিনি বিশেষ শিশুদের পরম বন্ধু, মানবসেবায় উৎসর্গকৃত মহান ব্যক্তিত্ব; আলোকিত জীবনের অধিকারী। যার প্রচেষ্টায় বর্তমানে বিশেষ শিশুরা সমাজের বোঝা নয়, দেশের সম্পদ। মমতা ও ভালোবাসার সঙ্গে এসব শিশুকে উপযুক্ত পরিবেশ দিতে পারলে তারাও হতে পারে দেশ ও বিশ্বের সম্পদ। বিশ্বে অসংখ্য উদাহরণ রয়েছে, যেখানে অটিস্টিক শিশুদের মধ্য থেকে তৈরি হয়েছে অনেক বরেণ্য ব্যক্তিত্ব। বাংলাদেশের শিশুরাও সে পথেই হাঁটছে। বাংলাদেশকে এমনই এক সুন্দর বাস্তবতার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুযোগ্য উত্তরসূরি সায়মা ওয়াজেদ পুতুল। মহান ব্যক্তিত্ব সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের প্রচেষ্টায় বাংলাদেশে অটিজম একটি সামাজিক আন্দোলনে পরিণত হয়েছে। ক্রমেই সেই আন্দোলনের ঢেউ ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বব্যাপী। ফলে অনেক অটিস্টিক শিশু মূলধারায় ফিরে আসছে। অসহায় পিতামাতা হতাশা কাটিয়ে আশার আলো দেখতে পাচ্ছেন। অভিভাবকদের মধ্যে নতুন করে বিশেষ শিশুদের নিয়ে উৎসাহের সৃষ্টি হয়েছে। এসব অভিভাবকদের মনোবল ও সাহস বৃদ্ধি পেয়েছে। তারা একটি আশ্রয় খুঁজে পেয়েছেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ইনস্টিটিউট অব পেডিয়াট্রিক নিউরো-ডিসঅর্ডার অ্যান্ড অটিজম (ইপনা) প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রেও প্রধানমন্ত্রী ও তার সুযোগ্য কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের রয়েছে অসামান্য অবদান। ইপনা তার প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে অটিজম ও অন্যান্য স্নায়ুবিকাশজনিত সমস্যা সংক্রান্ত বিষয়ে প্রয়োজনীয় সেবা ও পরামর্শ দেবার পাশাপাশি উচ্চতর গবেষণা ও প্রশিক্ষণ কর্মসূচি পরিচালনা করে আসছে।

মানবসেবায় নিজেকে উৎসর্গ করে দেয়া সায়মা ওয়াজেদ পুতুল বিশেষ শিশুদের সুরক্ষায় নিরলস ও নিঃস্বার্থভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। এই গুণী ব্যক্তির জন্ম ১৯৭২ সালে। মানবতার প্রতীক সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের পিতা বিশিষ্ট পরমাণু বিজ্ঞানী ড. ওয়াজেদ মিয়া এবং মা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী ও জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকার দেশের বিশেষ শিশুদের প্রতি অত্যন্ত আন্তরিক। বিশেষ করে অটিজম ও অন্যান্য স্নায়ুবিকাশজনিত সমস্যায় আক্রান্ত শিশু ও তাদের পরিবারের সুরক্ষায় দেশরত্ন শেখ হাসিনার রয়েছে অতুলনীয় দরদি মন- যা মানবসেবায় ব্রতধারী সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে বিশেষ শিশুদের অধিকার প্রতিষ্ঠার কাজকে এগিয়ে নিতে গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা রেখেছে। আলোকিত ব্যক্তিত্ব সায়মা ওয়াজেদ পুতুল বর্তমানে সারা বিশ্বেই বিশেষ শিশুদের নিয়ে তাদের অধিকার নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একজন লাইসেন্সপ্রাপ্ত মনোবিজ্ঞানী। মানসিক প্রতিবন্ধকতা, স্নায়ুবিক প্রতিবন্ধকতা, অটিজম ও মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় যুক্ত ব্যক্তিদের আর্থিকভাবে সহায়তার জন্য প্রতিষ্ঠিত সূচনা ফাউন্ডেশনের সম্মানিত চেয়ারপারসন হিসেবেও মানবিক দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন সায়মা ওয়াজেদ পুতুল।

মানবসেবায় ব্রতচারী সায়মা ওয়াজেদ পুতুল ১৯৯৭ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্যারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মনোবিজ্ঞানে স্নাতক এবং ২০০২ সালে ক্লিনিক্যাল মনস্তত্বে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। ২০০৪ সালে স্কুল মনস্তত্ত্বে বিশেষজ্ঞ ডিগ্রি অর্জন করেন। ব্যারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নের সময় তিনি বাংলাদেশের নারীদের উন্নয়নের ওপর গবেষণা করেন। এ বিষয়ে তার গবেষণাকর্ম ফ্লোরিডার একাডেমি অব সায়েন্স কর্তৃক শ্রেষ্ঠ সায়েন্টিফিক উপস্থাপনা হিসেবে স্বীকৃত হয়। তিনি ২০০৮ সাল থেকে শিশুদের অটিজম এবং স্নায়বিক জটিলতাসংক্রান্ত বিষয়ের ওপর কাজ করছেন। সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের উদ্যোগে ২০১১ সালে ঢাকায় প্রথমবারের মতো অটিজম বিষয়ক দক্ষিণ এশীয় আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ২০১৩ সাল থেকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় মানসিক স্বাস্থ্যের বিশেষজ্ঞ পরামর্শক হিসেবে কাজ করছেন। মনস্তত্ত্ববিদ সায়মা যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান অটিজম স্পিকসের পরামর্শক হিসেবেও কাজ করেন। স্বীকৃতিস্বরূপ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে তাকে ‘সাউথ-ইস্ট এশিয়া রিজিয়ন অ্যাওয়ার্ড ফর অ্যাক্সিলেন্স ইন পাবলিক হেলথ’ পুরস্কারে ভূষিত করে। ২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার ব্যারি ইউনিভার্সিটি ‘ডিসটিংগুইসড অ্যালামনাই অ্যাওয়ার্ডস’ প্রদান করেছে জনাব সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে জনস্বাস্থ্যসেবায় অবদানের স্বীকৃতস্বরূপ তাকে এ সম্মাননা প্রদান করা হয়। সম্মাননার সাইটেশনে উল্লেখ করা হয়েছিল- সায়মা একজন মনোবিজ্ঞানী এবং শিশুদের অটিজম বিষয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ের একজন প্রবক্তা। ২০১৬ সালে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ডিজিটাল ক্ষমতায়নের জন্য ইউনেস্কোর আন্তর্জাতিক জুরি বোর্ডের সভাপতি পদে নির্বাচিত হন। ২০২০ সালের জুলাই মাসে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরাম (সিভিএফ)-এর থিম্যাটিক রাষ্ট্রদূত হন। জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবিলার জন্য গঠিত ফোরামের কাজে তার সম্পৃক্ততা করোনা মহামারিতে প্রশংসিত হয়েছে। স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যেও সারাবিশ্বে তিনি অটিস্টিক শিশুদের নিয়ে, তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করেছেন। বাংলাদেশে অটিজমবিষয়ক বিভিন্ন নীতি নির্ধারণে উল্লেখযোগ্য সাফল্য লাভের পর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকে অটিজম বিষয়ক ‘শুভেচ্ছা দূত’ হিসেবেও সায়মা ওয়াজেদ কাজ করছেন। অটিজমে শিশু কিংবা বয়স্ক ব্যক্তি সমাজের বোঝা না হয়ে আশার বাণী নিয়ে আবির্ভূত হতে পারেন- এই বাস্তবতায় মানুষকে সচেতন করে তুলেছেন মানবদরদি সায়মা ওয়াজেদ পুতুল।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুল কিছুদিন আগে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক দপ্তরে আঞ্চলিক পরিচালক পদে প্রার্থী হতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ছয়টি অঞ্চলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল এ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া। এ অঞ্চলে প্রতি ৫ বছর পর পর নতুন করে সদস্যদের ভোটে একজন প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়। বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ঘনবসতিপূর্ণ এ অঞ্চলের মানুষের স্বাস্থ্যজনিত নানা প্রতিকূলতা মোকাবিলায় কাজ করে সংস্থাটির আঞ্চলিক দপ্তর। এ পদ পেতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ১১টি সদস্য দেশের ভোটে বিজয়ী হতে হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের ১১টি সদস্য দেশ হলো বাংলাদেশ, ভুটান, উত্তর কোরিয়া, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড এবং পূর্ব তিমুর। মানবসেবার অন্যতম অগ্রদূত সায়মা ওয়াজেদ পুতুল অবশ্যই একজন উপযুক্ত প্রার্থী। এই পদের জন্য তিনি যথেষ্ট যোগ্য ব্যক্তিত্ব এবং তার সেই গ্রহণযোগ্যতা ও অভিজ্ঞতাও রয়েছে।

পরিশেষে বলব, সায়মা ওয়াজেদ পুতুল অবশ্যই সম্পূর্ণ নিজের যোগ্যতায় মানুষের জন্য কাজ করে চলেছেন। তবে তার মাঝে বঙ্গবন্ধু এবং বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নীতি-আদর্শ বহমান। স্বাধীন দেশে বঙ্গবন্ধুর শাসনামলে ১৯৭২ সালে তার জন্ম। জন্মের সময় এ শিশুর (সায়মা ওয়াজেদ পুতুল) মুখ, তার হাসি-কান্না জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর সান্নিধ্যে মধুমাখা হয়ে উঠেছিল। বঙ্গবন্ধু অপরের দুঃখ-কষ্টকে উপলব্ধি করে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় আজীবন কাজ করে গেছেন। বঙ্গবন্ধুর জীবন মহান ত্যাগের আদর্শে মহিমান্বিত। আবার বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা মানবিক বাংলাদেশ নির্মাণে নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন। দৃঢ়চেতা অভিভাবক, সৎ, নির্লোভ, দরদি মনের অধিকারী মাননীয় শেখ হাসিনা নিজের অন্তর থেকে বাংলাদেশসহ বিশ্বের মানুষকে ভালোবাসেন। উন্নত, আধুনিক, অসম্প্রদায়িক বাংলাদেশের জন্য উন্নয়নের ধারাবাহিকতা যেমন ধরে রাখা প্রয়োজন, তেমনি মানবিক বাংলা গড়ার জন্য বর্তমান বিশ্বের অন্যতম মহান নেতা শেখ হাসিনার কন্যা মনোবিজ্ঞানী সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের মহৎ কাজের গুরুত্বও অনস্বীকার্য। অসহায়দের পক্ষে নেতৃত্ব দেয়ার জন্য বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কন্যা পুতুল এগিয়ে এসেছেন মানুষের আকর্ষণে। মাতার সান্নিধ্য তাকে মানবিক শিক্ষায় শিক্ষিত করেছে। পুতুলের মাঝেও রয়েছে দেশরত্ন শেখ হাসিনার মতো বিশালতা। রয়েছে পরিশ্রমী ও তারুণ্যের প্রাণময়তা। সে কারণেই তিনি বর্তমানে বিশ্বব্যাপী পরিচিত একটি মুখ। সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের ভেতর থেকে বঙ্গবন্ধুর মতোই সম্মোহনী চেতনা স্ফুরিত হচ্ছে। তিনি অসহায়দের পক্ষে কাজ করে মানুষকে উজ্জীবিত করেছেন মানবতার সেবায়। সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের নেতৃত্বে বাংলাদেশসহ সমগ্র বিশ্বে বিশেষ শিশুদের সব ধরনের অধিকার প্রতিষ্ঠায় মহতী কার্যক্রম আরও বেগবান হবে এবং একই সঙ্গে বাংলাদেশকে বিশ্বের বুকে আরও মর্যাদা ও গৌরবের আসনে অধিষ্ঠিত করবে- এটাই আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস।

আলোকিত বাংলাদেশ
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত