ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

সমৃদ্ধ জাতি গঠনে চাই পারিবারিক সম্প্রীতি

জিন্নাত আরা
সমৃদ্ধ জাতি গঠনে চাই পারিবারিক সম্প্রীতি

‘পরিবার’ জন্মলগ্নের পর যে বটচ্ছায়ায় আমরা পরম মমতায় ও নিরাপদে বেড়ে উঠি। পরিবার হলো মানবসমাজের মূলভিত্তি এবং গোষ্ঠীজীবনের প্রথম ধাপ। কারণ এই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পরিবার নিয়েই সমাজ, সুবিশাল রাষ্ট্রের সৃষ্টি। তাই পরিবারকে সমাজ ও রাষ্ট্রের আয়না বলা হয়। পরিবার-ই হচ্ছে সবচেয়ে প্রাচীন সামাজিক প্রতিষ্ঠান, কারণ একটা সময় যখন রাষ্ট্রের উৎপত্তি হয়নি পরিবারই ছিল তখন মানুষ কে ঐক্যবদ্ধ করার একমাত্র হাতিয়ার। পারিবারিক জীবন ব্যতীত মানবসভ্যতা বহু আগেই বিলীন হয়ে যেত।

একজন শিশুজন্মের পর থেকে মা-বাবা, ভাই-বোন পরিবারের অন্যসব সদস্য থেকেই তার নৈতিকতা ও অন্যান্য চারিত্রিক গুণাবলি লাভ করে। শিশুরা অনুকরণ প্রিয়, তারা যা দেখে তাই শেখে। পরিবারের মধ্যকার পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ, সৌহার্দ্য, সহমর্মিতা, ভালোবাসা ও সহনশীলতার মাধ্যমেই একটি শিশু সামাজিক মানুষ হয়ে ওঠে এবং তার মধ্যে ওইসব গুণাবলির পরিস্ফুটন ঘটে। পরিবারই একজন মানুষের সর্বপ্রথম ও সর্বশ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ। কিন্তু পারিবারিক দ্বন্দ্ব-কলহ একজন মানুষের ওপর ভীষণ নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

পারিবারিক সহিংসতার প্রধান শিকার হয় নারীরা। বিশেষ করে বাংলাদেশের আর্থসামাজিক অবকাঠামোর ভিত্তিতে এ সহিংসতার পরিমাণ অনেক বেশি। যার পরবর্তী পর্যায়ে থাকে শিশুরা। পারিবারিক বিশৃঙ্খলা, অমিল একটি শিশুর মানসিক বিকাশে বাধার সৃষ্টি করে। শিশুরা পারিবারিক অশান্তি, দ্বন্দ্ব ও সহিংসতার ভেতর বড় হওয়ার পর তাদের আচরণেও ওইসব নেতিবাচক মানসিকতা পরিলক্ষিত হয়। যেসব শিশুরা পারিবারিক অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির মধ্যে বড় হয় তারা শারীরিক ও মানসিক দিক দিয়ে বিপর্যস্ত থাকে, তাদের মধ্যে বিষণ্নতার সৃষ্টি হয়। ভবিষ্যতে এরা বাবা-মা এমনকি নিজেদের পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গেও খারাপ আচরণ করে, অশান্তির সৃষ্টি করে এবং সমাজের মানুষের সঙ্গেও তারা দ্বন্দ্বে জড়িত হয়, যা অবশ্যই অনাকাঙ্ক্ষিত ও সভ্যতাবিবর্জিত। সমাজ জীবনের মূল্যবোধের যত অবক্ষয় ঘটেছে তার অধিকাংশেরই কারণ দুর্বল পারিবারিক ব্যবস্থা।

যদি পরিবারের স্বামী-স্ত্রী, বাবা-মা, ভাই-বোন ও অন্যসব সদস্যের মধ্যে মমত্ববোধ, শ্রদ্ধাবোধ, প্রীতি-ভালোবাসা বিদ্যমান থাকে, তবে তা শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশ সাধন করে এবং তা উন্নত সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনে সহায়ক হয়। পরিবারে শান্তি-শৃঙ্খলা থাকলে জীবন সুখময় হয়ে ওঠে। পরিবারকে সমাজ জীবনের হৃৎপিণ্ডের সঙ্গে তুলনা করা চলে। কোনো কারণে হৃৎপিণ্ড দুর্বল হয়ে পরলে পুরো সমাজব্যবস্থা অচল হয়ে যায়। পরিবারের প্রতি গুরুত্ব ও সচেতনতা বৃদ্ধিতে তাই প্রতি বছর ১৫ মে আন্তর্জাতিক পরিবার দিবস পালন করা হয়। এজন্য আমাদের উচিত পারিবারিক সুখ-সম্প্রতি বজায় রাখতে সচেতনতা বৃদ্ধি করা। 

পারিবারিক সহিংসতা বন্ধ করে ভালোবাসা, সহমর্মিতা, শ্রদ্ধাবোধ, সহনশীলতা ও সৌহার্দ্য বজায় রেখে, শিশুদের নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে, তাদের মানসিক বিকাশে সহায়তা দান এবং ইত্যাদি সব ইতিবাচক গুণাবলি নিজেদের পরিবারে সৃষ্টি এবং অন্যদের এ বিষয়ে অবগত করার মাধ্যমে সুস্থ, সুন্দর, উন্নত সমাজ ও রাষ্ট্র গঠন সম্ভব। পারিবারিক সহিংসতার মতো সভ্যতাবিবর্জিত কাজ থেকে সবাইকে দূরে থাকতে হবে। সুখী-সমৃদ্ধ ও উন্নত সমাজ-রাষ্ট্র-জাতি গঠনে পারিবারিক শান্তির গুরুত্ব অপরিসীম।

* শিক্ষার্থী

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা 

zinnatarazerin@gmail

আলোকিত বাংলাদেশ
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত