ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

সারাহ ইসলামকে স্যালুট

আরও অনেকে এগিয়ে আসবেন
সারাহ ইসলামকে স্যালুট

সারা ইসলাম নামের এক মহিলা ও তার মা দেশের জন্য এক উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন। সারা ইসলাম তার চোখ দুটি এবং দুটি কিডনি দান করেছেন আর এই দানে উৎসাহ জুগিয়েছেন তার মা। দানকৃত ২ চোখ এবং ২ কিডনি অন্য ৪ জনের শরীরে প্রতি স্থাপন করা হয়েছে সফলভাবে। তারা সবাই এখন ভালো আছেন। বলাবাহুল্য যে, দেশে এই প্রথমবারের মতো মৃত ঘোষিত কোনো ব্যক্তির অঙ্গ প্রতিস্থাপন করা হয় অন্যের শরীরে। গত ১৯ জানুয়ারি ঘটনাটি ঘটে। এ এক যুগান্তকারী ঘটনা।

জীবিত অবস্থায় শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দান করা অনেক পুরোনো ব্যাপার। বিদেশে অনেক আগে থেকে এ ব্যবস্থা চলে আসলেও আমাদের দেশে এ মনোভাব তৈরি হতে অনেক সময় লেগেছে। নানা বাধা-বিপত্তি কাটিয়ে আজকাল অনেকেই অঙ্গ দান করার কথা বলছেন। এদিক থেকে চক্ষু দানই বেশি হয়ে থাকে এবং তা সাফল্যের সঙ্গে ব্যবহার করাও হয়। অনেকেই দান করা চক্ষু নিয়ে দিব্যি দৃষ্টিশক্তি ফিরে পেয়েছেন। অন্যান্য অঙ্গের মধ্যে চোখের পরেই আসে কিডনি। একের কিডনি অন্যের শরীরে প্রতিস্থাপন করা হয়। এক্ষেত্রে কিডনি নিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্যের অভিযোগও পাওয়া যায়। তারপরেও অনেক আপনজনরা অন্যের জন্য কিডনি দান করে থাকেন। জানা যায়, মৃত ঘোষিত অর্থাৎ ব্রেন ডেথ যাবে বলা হয়, তাদের শরীরের অঙ্গ সহজের সাফল্যের সঙ্গে অন্যের শরীরে স্থাপন করা যায়। তেমনই এক রোগী ছিলেন সারাহ ইসলাম। তিনি বুঝতে পেরে ছিলেন আর বাঁচবেন না। এ অবস্থায় তিনি তার দুটি চোখ ও দুটি কিডনি দান করে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। তার মাও কাজে তাকে উৎসাহিত করলে তিনি তাই করেন এবং তার ব্রেনডেথ হলে সঙ্গে সঙ্গে তার কর্নিয়া ও কিডনি পৃথক করে অন্য ৪ জনের শরীরে প্রতিস্থাপন করেন চিকিৎসকরা সাফল্যের সঙ্গে। একজন মারা গিয়ে ৪ জনকে বাঁচিয়ে রাখার ব্যবস্থা করে গেলেন সেই মানুষটি হলেন- সারাহ ইসলাম, যাকে সমর্থন করেছেন তারই মা।

সারাহ ইসলাম যে কত বড় কাজ করেছেন তা বর্ণনা করা যায় না। সারাহকে স্যালুট করি তার মাকেও। আমরা আশা করি, এই ঘটনায় অনেকেই উদ্বুদ্ধ হবেন সারাহের মতো হতে। অনেক মাও এ ব্যাপারে এগিয়ে আসবেন, ঠিক যেমন সারাহের মা এগিয়ে এসেছেন। এরা এগিয়ে এলে যারা আত্মার কাছ থেকে কিডনি পান না এবং বাজার থেকে কেনার সামর্থও থাকে না, তারা হাসপাতাল থেকে কিডনি পেয়ে নতুন জীবন শুরু করতে পারবেন। সবাই এ ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ হলে কিডনি ব্যবসাও কমে যাবে।

এই ঘটনাটি যেমন আমাদের দানের মানসিকতা বৃদ্ধির প্রমাণ করেছে, অন্যদিকে আমাদের চিকিৎসা বিজ্ঞানের ব্যাপক উন্নতির কথাও বলে দিয়েছে। এখন আমাদের দেশেই অঙ্গ প্রতিস্থাপন হচ্ছে এটা কম পাওয়া নয়। আশা করব, এই পাওয়া উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাবে। অঙ্গ প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে যাওয়ার প্রয়োজন হবে না।

সারাহ ইসলাম ও তার মাকে আমরা আবার স্যালুট করছি। বীর কন্যা ও বীর মাতা হিসেবে তাদের আমরা স্মরণ করব। তারা যে পথ দেখালেন এই পথে বাকিও হাঁটবেন এই বিশ্বাস নিয়েই আমরা তাদের স্মরণে রাখব। সারা ইসলামের ডাক নাম ঐশ্বর্য। ঐশ্বর্যই তিনি। শুধু নামে নয়- কর্মেও। এমন ঐশ্বর্য ঘরে ঘরে জন্ম নেবেন- এই কামনা।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত