ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

রমজান নিয়ে হইচই নয়

নীরবে কাজ করুন
রমজান নিয়ে হইচই নয়

প্রতি বছর রমজান মাস এলেই একটা হইচই শুরু হয়। এবারও তার ব্যতিক্রম দেখা যাচ্ছে না। এবার বরং বেশ আগে থেকেই রমজান নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু হয়েছে। প্রতি বছরই রমজান এলে নানা কথাবার্তা বলতে শোনা যায়। কথার মূল উদ্দেশ্য থাকে, রমজান মাসে যেন কোনো পণ্যের অভাব না হয় এবং দ্রব্যমূল্য যেন না বাড়ে। এ ব্যাপারে নানা কথা হলেও কাজের কাজ কিছুই হয় না। পণ্যমূল্য বাড়তেই থাকে এবং পণ্যের অভাবও দেখা দেয়। অনেকে অভিযোগ করেন, রমজান মাসে পণ্যের দাম বাড়িয়ে অতিরিক্ত আয় করার জন্য বা করানোর জন্যই হইচই করা হয়।

রমজান মাসে পণ্যের দাম বাড়বে, তা জনগণ মেনেই নিয়েছে। কারণ তারা কখনোই দেখেনি যে, পবিত্র এই মাসে অন্যান্য মাসের তুলনায় কম দামে এবং খুব সহজেই পণ্য পাওয়া যায়। এই মাসে একটা ক্রাইসিস থেকেই যায়। যদিও আমরা আশা করি, বছরের অন্যান্য মাসের চেয়ে রমজান মাসটাই হবে সবচেয়ে স্বাভাবিক। এই মাসে ব্যবসায়ীরা কম মুনাফা করে কম দামে পণ্য বেচবেন এবং সরকার তাদের সম্ভাব্য সহায়তা দেবে। কিন্তু তা কখনোই হয় না। আগে থেকে ঢাকঢোল পিটিয়ে সবাইকে জানান দেয়া হয়, এবারের রমজানে একটা কিছু করা হবে। জনগণ আশ্বস্ত হয়। পরে দেখা যায়, জনগণ আর আশ্বস্ত হতে পারে না। যা বলা হয় বাজারের অবস্থা তেমনটা থাকে না। এবারও দেখা যাচ্ছে দুই মাস আগে থেকেই বড় বড় কথা বলা হচ্ছে। কথাগুলো কেন বলা হচ্ছে, তা পরিষ্কার নয়। যে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলা হচ্ছে, তা কি ব্যবসায়ীদের সুবিধা দিতে নাকি গ্রাহকদের আশ্বস্ত করতে- বোঝা যাচ্ছে না। বোঝা যাবে রমজান মাস এলে। আশার কথা, বাণিজ্যমন্ত্রী আগে থেকেই সাবধান করেছেন সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দাম বাড়ানোর ব্যাপারে। কঠোর শাস্তির কথাও বলেছেন। অভিজ্ঞতা থেকে বলা সহজ; কিন্তু কার্যকর করা সহজ নয়। আগেও অনেকবার সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে অনেক কিছু বলা হয়েছে। সিন্ডিকেট কি ভাঙা সম্ভব হয়েছে? হয়নি এবং সিন্ডিকেটের জন্য কোনো শাস্তির ব্যবস্থার কথা জানা যায়নি। সিন্ডিকেটের কারণে অভ্যন্তরীণ দ্রব্যমূল্য বাড়ে- এটাই জনগণ বিশ্বাস করে।

রমজান মাসে অতিরিক্ত মুনাফা করে ব্যবসা করার জন্য সবাই এই মাসটির জন্য অপেক্ষা করে- বাস্তবতাও তাই। বছরের একটি মাসে ভালো মুনাফা হবে, তাতে আপত্তি নেই। তবে এই মুনাফা সহনীয় পর্যায়ে থাকতে হবে। গ্রাহকরা স্বাচ্ছন্দ্যে পণ্য কিনতে পারছে কি-না, সেটাও একটা বিষয়। বিশেষ করে খাদ্যপণ্য তো বটেই; রমজান মাসে বিশেষ কিছু খাদ্যপণ্যের চাহিদা অনেক বেড়ে যায়। সে সুযোগটাই ব্যবসায়ীরা নিয়ে থাকেন। এখানে ব্যবসায়ীদেরও কিছু কর্তব্য আছে। ব্যবসায়ীরা নিজেরই পরিকল্পিতভাবে ব্যবস্থা নেবেন, যাতে রমজান মাসে সাধারণ মানুষের ওপর অতিরিক্ত চাপ না পড়ে। ব্যবসায়ীরা মনে করতে পারেন যে, তারা এই মাসে অতিরিক্ত মুনাফা না করে সারা বছরের মতো স্বাভাবিক মুনাফা করবেন- তাতেও জনগণ উপকৃত হবে এবং ব্যবসায়ীদের কোনো শাস্তি হবে না। এটা মনোভাবের ব্যাপার।

আমরা আশা করব, সরকারের পক্ষ থেকে আগাম কিছু না বলে, কোনো হইচই না করে, নীরবে কাজ করতে হবে। রমজান মাসে যেন বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকে, সে ব্যবস্থা করার পর কোনো সিন্ডিকেট কিছু করার চেষ্টা করলে, সেখানে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। আগে থেকে হইচই করার কোনো দরকার নেই। কেননা, এসব জনগণ বিশ্বাস করে না।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত