ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

দূষণে ভারাক্রান্ত কর্ণফুলী

সুরক্ষায় ব্যবস্থা নিন
দূষণে ভারাক্রান্ত কর্ণফুলী

রাজধানী ঢাকার সঙ্গে যেমন বুড়িগঙ্গা নদী ওতপ্রোতভাবে জড়িত, তেমনি বাণিজ্যিক রাজধানী হিসেবে পরিগণিত বন্দরনগরী চট্টগ্রামের সঙ্গে জড়িত কর্ণফুলী নদী। ঐতিহাসিক এবং জনজীবনের প্রবাহের সঙ্গে অন্বিষ্ট উভয় নদীই আজ মানুষের সৃষ্টি নানা কর্মকাণ্ডে বিপর্যস্ত। তবে আশার কথা যে, বুড়িগঙ্গা নদী সুরক্ষায় সরকার এরই মধ্যে বেশ কিছু ইতিবাচক উদ্যোগ নিয়েছে, নদী দখল ঠেকানোর পাশাপাশি দখল পুনরুদ্ধারে ব্যবস্থা চলমান রয়েছে। এখন কর্ণফুলীর প্রতি কর্তৃপক্ষীয় সুদৃষ্টি ফেলার সময় এসেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দূষণের মুখে কর্ণফুলী নদীর জীববৈচিত্র্য এখন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। এই নদীতে বিচরণশীল মাছের অস্তিত্বও এখন চিরতরে বিলীন হওয়ার পথে। যেসব মাছ মিলছে, সেগুলোতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) নির্ধারিত মাত্রার চেয়েও বেশি হেভি মেটাল রয়েছে এবং অন্যান্য দূষিত পদার্থের মাত্রাও বহুগুণ বেশি। এসব মাছ খাওয়া জনস্বাস্থ্যের জন্য বেশ ক্ষতিকর। বিশেষজ্ঞরা আরও বলেন, কর্ণফুলীর পানিতে কর্দমাক্ততাসহ (টারবিডিটি বৃদ্ধি) দূষণ বৃদ্ধি এবং পানিতে অক্সিজেন কমে যাওয়ার কথা প্রায় ২০ বছর আগে চট্টগ্রাম পরিবেশ অধিদপ্তরের গবেষকরা তুলে ধরেছিলেন। প্রতিকারে যে প্রত্যাশিত পদক্ষেপ নেয়া হয়নি, তা বলাই বাহুল্য। পর্যবেক্ষকদের অভিযোগ, চট্টগ্রামের প্রাণ বলে অভিহিত কর্ণফুলী নদীর দূষণ রোধে এখন পর্যন্ত বলা যায় কোনো কাজই হচ্ছে না। বিষয়টি দুঃখজনক।

তথ্য অনুযায়ী, কর্ণফুলীর দূষণের জন্য চট্টগ্রাম মহানগরীর প্রতিদিনের বিপুল পরিমাণ বর্জ্য, যান্ত্রিক নৌযান, লাইটারেজ জাহাজ থেকে নিঃসৃত জ্বালানি বর্জ্য এবং নদীর দুই পাড়ের তিন শতাধিক কলকারখানা থেকে ফেলা বর্জ্য প্রধানত নদী দূষণে দায়ী। এদিকে দেশি-বিদেশি সংস্থার এক যৌথ গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কর্ণফুলীতে শুধু সার কারখানাগুলোই প্রতিদিন ১৪৫ ঘনমিটার দূষিত পানি, ৩৫ মেট্রিক টন চায়না মাটি, ৪ মেট্রিক টন সেলুলোজ এবং সোডিয়াম হাইড্রোক্সাইড ফেলা হয়। গত ৩০ বছর ধরে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে ক্রোমিয়াম, তামা, নিকেল, সিসা ও দস্তার মতো ভারী ধাতু জমে নদীর গভীরতা ব্যাপকভাবে কমে গেছে। পানিতে এসব ধাতুর উপস্থিতি নিরাপদ সীমা অতিক্রম করায় নদীর বাস্তুসংস্থান ও আশপাশের জনজীবনে বিপর্যয় ঘটছে। এই অবস্থায় বিশেষজ্ঞরা দূষণের ভয়াবহতা নিরূপণে হালনাগাদ জরিপের তাগিদ দিয়েছেন। কারণ দূষণের কারণে কর্ণফুলী থেকে ৩০ প্রজাতির মাছ হারিয়ে যাওয়ার যে কথা বলা হচ্ছে, তা অনেক আগের জরিপ। হালনাগাদ জরিপ হলে বোঝা যাবে বিলুপ্তির মাত্রাটা আরও কতটুকু বেড়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, একসময় কর্ণফুলী নদীতে প্রায় ১৪০ প্রজাতির মাছ পাওয়া যেত। প্রাপ্ত এক তথ্যমতে, দখল-দূষণে শুধু কর্ণফুলী নদী নয়, এর দুই পাড়ের উদ্ভিদ ও জীববৈচিত্র্যও সংকটাপন্ন। এর মধ্যে ৮১ প্রজাতির উদ্ভিদ বিলুপ্তির পথে এবং ৬১ প্রজাতির উদ্ভিদ বিপন্ন হয়ে পড়েছে। অর্থাৎ দূষণ ঠেকাতে কার্যকর উদ্যোগ না নিলে আরও ৬১ প্রজাতির উদ্ভিদ বিপন্ন হয়ে যাবে।

কর্ণফুলী অতি পরিচিত এক নদী। এই নদীকে ঘিরে রচিত হয়েছে অনেক পদ্য-কবিতা, গল্প-উপন্যাস, গান, উপাখ্যান ও লোককাহিনি। অববাহিকার মানুষের জীবন ও পেশায় রেখেছে অনবদ্য ভূমিকা। বর্তমানে এই নদীর পাড়ে গড়ে উঠেছে শিল্পপ্রতিষ্ঠান, নদীর নিচ দিয়ে নির্মিত হচ্ছে গাড়ি চলাচলের টানেল। সংগত কারণেই এই নদী সুরক্ষায় সর্বোচ্চ উদ্যোগ জরুরি। এ জন্য জনগণকে সম্পৃক্ত করে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর সমন্বিত পদক্ষেপ জরুরি। এটা যত দ্রুত করা যাবে, ততই মঙ্গল। দেশের অন্য নদীগুলোর বিপন্নতা রোধেও ব্যবস্থা থাকা আবশ্যক।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত