ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

পণ্যমূল্য কমানোয় উদ্যোগ চাই

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা নিন
পণ্যমূল্য কমানোয় উদ্যোগ চাই

আন্তর্জাতিক বাজারে কিছু পণ্যের দর কমছে। আবার দেশেও উৎপাদন বাড়ছে। দুইয়ে মিলে মূল্যস্ফীতি কমার কথা হলেও বাস্তবে তা দৃশ্যমান নয়। বরং সামনে মূল্যস্ফীতি বাড়ার আরও আশঙ্কা রয়েছে- এমন বার্তা পাওয়া যাচ্ছে। এতে সাধারণের ক্রয়ক্ষমতা আরও সংকুচিত হবে বলে ধারণা করা যায়। তথ্য অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক প্রায় সব পর্যবেক্ষণই বলছে, এ বছরও অর্থনীতির প্রধান চ্যালেঞ্জ হবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ। এ কারণে দেশে দেশে নেয়া হচ্ছে নানা কৌশল। বাংলাদেশও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে অগ্রাধিকার দেয়ার কথা বলছে। তবে কয়েক মাসের মধ্যে জ্বালানি তেল, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়িয়েছে সরকার, যা জিনিসপত্রের দাম বাড়ার প্রবণতাকে আরও উসকে দিচ্ছে। উল্লেখ্য, সরকার গত আগস্টে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায়। আর ওই মাসেই গত একযুগের মধ্যে সর্বাধিক মূল্যস্ফীতি হয়। এরপর এই জানুয়ারিতে ফের বাড়ানো হয় বিদ্যুতের দাম। আগামী ফেব্রুয়ারি থেকে বাড়ছে গ্যাসের দাম। এদিকে, মূল্যস্ফীতির চাপ বজায় থাকার ইঙ্গিত দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকও। অন্যদিকে, জ্বালানি পণ্যের দাম বাড়ানোর প্রভাব তো রয়েছেই। সারকথায়, আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যমূল্য কমে এলেও স্থানীয় বাজারে মূল্যস্ফীতির চাপ আরও বাড়তে পারে।

স্মর্তব্য, দেশে নিত্য ভোগ্যপণ্যের সিংহভাগই আমদানিনির্ভর। ছোলা, ডাল, চিনি, ভোজ্যতেলসহ প্রধান কয়েকটি পণ্যের সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয় রমজান মাসে। তবে এলসি সংকটে আমদানি কমে যাওয়ায় আসন্ন রমজান অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে কঠিন হতে যাচ্ছে দেশের ভোক্তাদের জন্য। এখনই উদ্যোগ নেয়া না হলে রোজার আগে পণ্যবাজার নতুন অস্থিরতার দিকে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন খোদ ব্যবসায়ীরাই। অর্থাৎ মূল্যস্ফীতির শ্লথ হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। আরেকটি লক্ষণীয় বিষয় যে, খাদ্যের তুলনায় খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি এখন বেশি। গত মাসে খাদ্য সূচকে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৭ দশমিক ৭১ শতাংশ। অথচ খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৯ দশমিক ৯৬ শতাংশ। এর মানে পরিবহন, চিকিৎসা, শিক্ষাসহ বেশিরভাগ খাদ্যবহির্ভূত সূচকে মূল্যস্ফীতির চাপ বেড়েছে। বিষয়টি উদ্বেগেরও। সরকার এবং বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন সময়ে অনেক দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতির উদাহরণ দিচ্ছে। এখানে সত্যতা যেমন রয়েছে, তেমনি বিপরীত চিত্রও বিদ্যমান। সাম্প্রতিক সময়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেরেছে, এমন দেশের উদাহরণও রয়েছে। ভারতে গত মাসে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৫ দশমিক ৭২ শতাংশ, যা গত ১ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। ভিয়েতনামে ডিসেম্বরে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৪ দশমিক ৫৫ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়ায় ছিল সাড়ে ৫ শতাংশ।

দেখা যায়, বিশ্ববাজারে পণ্যের ঊর্ধ্বগতির অজুহাতে পণ্যের দাম বাড়ালেও পরে কমলে আর সমন্বয় করা হয় না। এক্ষেত্রে নিয়মিত তদারকির মাধ্যমে বাইরে দর কমলে দেশেও কমাতে হবে। পাশাপাশি বাজারে প্রতিযোগিতা উৎসাহিত হচ্ছে কি-না, পণ্যের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম বাড়ানো হচ্ছে কিনা- এসব জায়গায় জবাবদিহির ব্যবস্থা করতে হবে। আর দরিদ্র এবং নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য কম দামে খাদ্য সরবরাহ ব্যবস্থা চালু কিংবা প্রয়োজনে জোগান বাড়াতে হবে। বিশেষজ্ঞরা এমনও বলছেন, অর্থ পাচার বন্ধ করা গেলে কিংবা কমানো গেলে ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রবাসীদের অর্থ পাঠানো বাড়বে। সে ক্ষেত্রে ডলারের মূল্য বেড়ে যাওয়ার প্রবণতা ঠেকানো যাবে এবং পণ্য আমদানিতে বৈদেশিক মুদ্রার ব্যয়জনিত খরচ কমবে। যাপনচর্চা স্বস্তিদায়ক করতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকার কার্যকর পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করবে- এটা এখন একটি জরুরি জনগুরুত্বপূর্ণ প্রত্যাশা।

আলোকিত বাংলাদেশ
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত