ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

পাঁচ ঝুঁকির মুখে দেশের অর্থনীতি

ভবিষ্যৎ কী হতে যাচ্ছে?

এম এ খালেক, অর্থনীতি বিষয়ক লেখক, সাবেক ব্যাংকার
ভবিষ্যৎ কী হতে যাচ্ছে?

ইন্টারন্যাশনাল মানিটারি ফান্ড (আইএমএফ) ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর (ডিএমডি) অ্যান্তইনেত সায়েহ ৫ দিনের এক অফিসিয়াল সফরে বাংলাদেশে এসেছেন। তিনি ১৪ জানুয়ারি বাংলাদেশে আসেন এবং তার এ সফর ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত স্থায়ী হয়। আইএমএফের ডিএমডি অ্যান্তইনেত সায়েহের বাংলাদেশ সফর নানা কারণেই বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ ছিল। উল্লেখ্য, বাংলাদেশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আইএমএফ বাংলাদেশকে ৪৫০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ প্রদানে নীতিগতভাবে সম্মত হয়েছে। অ্যান্তইনেত সায়েহ বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন বাংলাদেশকে প্রদেয় ৪৫০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণের শর্তাবলি নির্ধারণের জন্য। আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে আইএমএফের পরবর্তী সময়ে বোর্ড সভায় বাংলাদেশকে ঋণদানের বিষয়টি চূড়ান্ত হবে। অ্যান্তইনেত সায়েহ যদি বাংলাদেশকে ঋণদানের অনুকূলে সুপারিশ করে তাহলে এই ঋণ প্রাপ্তিতে আর কোনো প্রতিবন্ধকতা থাকবে না। এর আগে আইএমএফের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠিত একটি প্রতিনিধ দল বাংলাদেশ সফর করে। সবকিছু ঠিক থাকলে এবং আইএমএফের আগামী বোর্ড সভায় অনুমোদিত হলে মার্চ মাসে এই ঋণের প্রথম কিস্তি ছাড় করা হতে পারে। স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত বাংলাদেশ মোট ১২ বার আইএমএফ থেকে ৯৮ কোটি ৭০ লাখ মার্কিন ডলার ঋণ গ্রহণ করেছিল। প্রথম ঋণ নেয়া হয়েছিল ১৯৭৪ সালে। ২০১২ সালে সর্বশেষ আইএমএফ’র কাছে থেকে ঋণ গ্রহণ করা হয়েছিল। এরপর থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ আইএমএফের কাছে থেকে কোনো ঋণ গ্রহণ করেনি। কথায় বলে, কোনো দেশ একান্ত বিপদে না পড়লে আইএমএফ থেকে কোনো ঋণ গ্রহণ করে না। কারণ আইএমএফের প্রতিটি ঋণই শর্তযুক্ত। এসব শর্ত সাধারণত গ্রহীতা দেশের স্বার্থের অনুকূলে হয় না। কিন্তু তা সত্ত্বেও আর্থিক কারণে সংশ্লিষ্ট দেশগুলো আইএমএফ’র কাছে থেকে ঋণ গ্রহণ করে থাকে। যেহেতু বাংলাদেশ ২০১২ সালের পর আইএমএফের কাছে থেকে কোনো ঋণ গ্রহণ করেনি। তাই সরকার আইএমএফের শর্ত না মেনেই দেশের অর্থনীতি পরিচালনা করতে পারছে। অবশ্য আইএমএফের সব শর্তই যে খারাপ তা নয়। কোনো কোনো শর্ত আছে যা জাতীয় প্রয়োজনেই পরিপালন করা প্রয়োজন। কিন্তু আমাদের দেশের সরকার সেই সব অবশ্য পালনীয় শর্তাবলি যে কোনোভাবেই হোক এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। আইএমএফের শর্ত পরিপালন করতে হলে আর্থিক খাতে ব্যাপক সংস্কার সাধন করতে হবে। সংস্থাটির ডিএমডি অ্যান্তইনেত সায়েহ বাংলাদেশ সফর করেন সংস্থাটির দেয়া শর্তাবলি কীভাবে পরিপালন করা হবে তার পথ বাতলে দেওয়ার জন্য। আইএমএফ বাংলাদেশকে যে ৪৫০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ দিতে যাচ্ছে তা একবারে দেয়া হবে না। দেয়া হবে ৭ কিস্তিতে। প্রথম কিস্তিতে দেয়া হবে ৪৪ কোটি ৭৮ লাখ মার্কিন ডলার। প্রস্তাবিত ঋণের প্রথম কিস্তি ছাড়করণের জন্য কোনো শর্ত পরিপালন করতে হবে না। কিন্তু দ্বিতীয় কিস্তির অর্থ ছাড় করার আগেই সংস্থাটি তাদের দেয়া শর্ত পরিপালনের অবস্থা এবং বাংলাদেশের আগ্রহের বিষয়টি পর্যালোচনা করবে। যদি বাংলাদেশ তাদের দেয়া শর্ত পরিপালনে উৎসাহি না হয়, তাহলে মাঝ পথে ঋণের কিস্তি ছাড়করণ বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

বিশ্বব্যাংক তাদের সাম্প্রতিক এক গবেষণা প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, বিশ্ব অর্থনীতি ভয়াবহ মন্দার খুব কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। যে কোনো সময় অর্থনৈতিক মন্দা শুরু হতে পারে। গ্লোবাল ইকোনমিক প্রসপেক্টাস শিরোনামে প্রকাশিত এ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত জুন মাসে তারা পূর্বাভাস দিয়েছিল যে, ২০২৩ সালে বিশ্ব অর্থনীতির গড় প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৩ শতাংশ। এখন তারা সেই পূর্বাভাস কমিয়েছে। তারা বলছে, ২০২৩ সালে বিশ্ব অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি হতে পারে ১ দশমিক ৭ শতাংশ। অর্থাৎ প্রবৃদ্ধি এক দশমিক ৩ শতাংশ হ্রাস পেতে পারে। উচ্চ মূল্যস্ফীতির প্রভাব রোধ করার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক নীতি সুদ হার বাড়িয়েছে। এর অনিবার্য ফলশ্রুতিতে বিশ্ব অর্থনীতি আগের চেয়ে মন্তর হয়ে পড়েছে। নতুন বিনিয়োগ এবং কর্মসংস্থানের হার কমেছে। কিন্তু নীতি সুদ হার বাড়িয়েও উচ্চ মাত্রার মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। বিশ্বের প্রতিটি দেশই মূল্যস্ফীতির ভারে জর্জরিত হয়ে পড়েছে। উন্নত দেশগুলো নীতি সুদ হার কমানোর প্রভাবে দ্রুত অর্থনৈতিক মন্দার দিকে ধাবিত হচ্ছে। স্বল্পোন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোর অর্থনীতিতে মন্দার লক্ষণ সুস্পষ্ট না হলেও তারা উন্নত দেশের অর্থনৈতিক মন্দার দ্বারা প্রভাবিত হবে। মূলত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলো এবং চীনের অর্থনীতি সংকুচিত হয়ে পড়ার কারণেই বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দা অনিবার্য হয়ে উঠেছে। ২০২০ সালে বিশ্বের বেশির ভাগ উন্নত দেশের অর্থনীতি সংকুচিত হয়ে পড়ে। পরের বছর অর্থাৎ ২০২১ সালে বিশ্ব অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোর পর্যায়ে চলে যায়। এ সময় উন্নত দেশগুলোর প্রবৃদ্ধির গড় হার দাঁড়ায় ৫ দশমিক ৩ শতাংশ। ২০২২ সালে এদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হ্রাস পেয়ে ২ দশমিক ৫ শতাংশে নেমে আসে। ২০২৩ সালে এদের প্রবৃদ্ধির হার শূন্য দশমিক ৫ শতাংশে হ্রাসপ্রাপ্ত হতে পারে। বিশ্বব্যাংক মনে করছে, এ অবস্থার অর্থ হচ্ছে, বিশ্ব অর্থনীতি মন্দার দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে। ২০২২ সালে বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতির গড় হার ছিল ৭ দশমিক ৬ শতাংশ। বিশ্ব ব্যাংকের মতে, ২০২৩ সালে মূল্যস্ফীতির হার কিছুটা কমে ৫ দশমিক ২ শতাংশে নেমে আসতে পারে।

বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা ধেয়ে আসছে। এ অবস্থায় বাংলাদেশের অবস্থা কি হতে পারে। যারা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সাফল্য নিয়ে বিভিন্ন গল্প বলছেন তারাই বা কি ভাবছেন এ সম্ভাব্য অর্থনৈতিক মন্দা এবং তার প্রতিক্রিয়া নিয়ে? আইএমএফের ডিএমডি অ্যান্তইনেত সায়েহ তার বাংলাদেশ সফরকালে বাংলাদেশের অর্থনীতি এবং তার সম্ভাব্য পরিণতি নিয়ে বেশ কিছু কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশ অর্থনীতি সংকটের প্রান্ত সীমার অবস্থান করছে। অর্থাৎ যে কোনো সময় বাংলাদেশের অর্থনীতি বিপর্যস্ত হয়ে পড়তে পারে। বাণিজ্য ঘাটতি, ক্রমবর্ধমান জ্বালানি ব্যয় বৃদ্ধি, মূল্যস্ফীতির অস্বাভাবিক ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা এবং বৈদেশিক আশঙ্কাজনকভাবে কমে যাওয়ার কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতির সংকটের খুব কাছাকাছি রয়েছে। বৈশ্বিক মহামারি এবং রুশ-ইউক্রেন সংকটের আগে বাংলাদেশের অর্থনীতি বেশ ভালোভাবেই চলছিল। বাংলাদেশের অর্থনীতি ছিল দ্রুতবর্ধনশীল অর্থনীতিগুলোর মধ্যে অন্যতম। তিনি আরও বলেছেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি সংকটের প্রান্ত সীমায় অবস্থানের কারণে ভোক্তাদের আচরণে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটেছে। ভোক্তারা আগের মতো তাদের চাহিদাকৃত পণ্য ক্রয়ের জন্য অর্থ ব্যয় করতে পারছেন না। এতে আগামীতে দেশটিতে ভোক্তা শ্রেণির মাঝে হতাশা সৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। এতে অর্থনীতির অবস্থান ক্ষুণ্ণ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। মূল্যস্ফীতি সহনশীল রাখতে বাংলাদেশ সরকার যেসব ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে আইএমএফ তা সমর্থন করে। ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর (ডিএমডি) অ্যান্তইনেত সায়েহ বলেন, সংস্থাটি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহযোগিতা করতে চায়। রাষ্ট্রীয় তহবিল এবং বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ বৃদ্ধির পাশাপাশি এ ঋণ সহায়তা বর্ধিত মূল্যস্ফীতি মোকাবিলায় এ ঋণ সহায়তা করবে। সংস্থাটির মতে, এ ৪৫০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ সহায়তা বাংলাদেশে স্বল্প মেয়াদে জিনিষপত্রের মূল্য বৃদ্ধির চাপ প্রশমনে সহায়তা করবে। একই সঙ্গে আইএমএফের পরামর্শ অনুসারে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণেও দেশটিকে সহায়তা করবে।

এদিকে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম (ডব্লিওইএফ) তাদের এক প্রতিবেদনে বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছে। সংস্থাটি বলেছে, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে নানা ধরনের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। তারা প্রধানতম ৫টি ঝুঁকির প্রতি বেশি গুরুত্বারোপ করেছে। এর মধ্যে সবার শীর্ষে রয়েছে অস্বাভাবিক উচ্চমাত্রার মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি। মূল্যস্ফীতির অসহনীয় ঊর্ধ্বমুখী যাত্রার কারণে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা অস্বাভাবিক পরিস্থিতির মধ্যে পতিত হয়েছে। বিশেষ করে মানুষ তাদের প্রয়োজনীয় খাদ্য ক্রয় করতে পারছে না। বাজারে খাদ্য পণ্যের অভাব না থাকলেও মানুষ সেই খাদ্য পণ্য ক্রয় করতে পারছে না। অন্য যেসব ঝুঁকি দেশটির অর্থনীতিকে বিপর্যস্ত করে তুলেছে তা হচ্ছে ঋণ সংকট, ব্যাপকহারে পণ্য এবং ইউটিলিটির মূল্যবৃদ্ধি, মানব সৃষ্ট পরিবশেগত সমস্যা এবং সম্পদের জন্য ভূরাজনৈতিক প্রতিযোগিতা। বারবার জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির ফলে মূল্যস্ফীতি সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। গত আগস্ট মাসে মূল্যস্ফীতির ছিল সরকারি হিসেবে ৯ দশমিক ৮৬ শতাংশ, যা আগের ১৩৫ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। অবশ্য সরকারের দেয়া পরিসংখ্যান অনেকেই মানতে নারাজ। তারা মনে করেন, সরকার পরিস্থিতি অনুকূল দেখানোর জন্য মূল্যস্ফীতির হার বাস্তবের চেয়ে কমিয়ে দেখায়। বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য এ মুহূর্তে সবচেয়ে জটিল এবং বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে ক্রমবর্ধমান উচ্চ মূল্যস্ফীতিকে সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনা। অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, ২০২৩ সালেও বাংলাদেশের অর্থনীতি পুরোটা সময়জুড়েই ঊর্ধ্বমুখী থাকবে। কোনোভাবেই মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। বাংলাদেশ ব্যাংক মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য নীতি সুদ হার বাড়িয়েছে দু’দফা। আগামীতে নীতি সুদ হার আরও বাড়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে। নীতি সুদ হার বাড়ানোর মাধ্যমে বাজারে অর্থ সরবরাহ কমিয়ে আনা হয়। নীতি সুদ হার বাড়ানো হলে সিডিউল ব্যাংকগুলোকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণের সময় আগের তুলনায় বেশি সুদ প্রদান করতে হয়। বেশি সুদে সংগৃহীত অর্থ উদ্যোক্তা এবং ব্যক্তি পর্যায়ে ঋণদানের ক্ষেত্রে সিডিউল ব্যাংকগুলো আগের তুলনায় বেশি সুদ আরোপ করে। এতে উদ্যোক্তা এবং ব্যক্তি পর্যায়ে ঋণ গ্রহণের ব্যয়ভার বৃদ্ধি পায়। বিশ্বব্যাপী এ প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এর উল্টোটিই ঘটেছে। কারণ বাংলাদেশ ব্যাংক নীতি সুদ হার বাড়ালেও ব্যাংক ঋণের আপার ক্যাপ তুলে দেয়নি। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বলেছেন, এ মুহূর্তে ব্যাংক ঋণের আপার ক্যাপ তুলে দেয়ার কোনো পরিকল্পনা নেই। আপার ক্যাপ তুলে না দেয়ার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিডিউল ব্যাংকগুলো। তারা আগের তুলনায় বেশি সুদ দিয়ে ফান্ড কালেকশন করছে। কিন্তু সেই অর্থ উদ্যোক্তা এবং ব্যক্তি পর্যায়ে ঋণ দানের ক্ষেত্রে সুদের হার বাড়াতে পারছে না। ফলে তাদের মুনাফার হার এবং পরিমাণ কমে যাচ্ছে। আর উদ্যোক্তা এবং ব্যক্তি পর্যায়ের ঋণ গ্রহীতারা এ উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণেও আগের মতোই ৯ শতাংশ সুদে ঋণ গ্রহণ করতে পারছেন। জুলাই-জানুয়ারি সময়ের মুদ্রানীতিতে ব্যক্তি খাতে ব্যাংক ঋণের প্রবৃদ্ধি প্রত্যাশা করা হয়েছিল ১৪ দশমিক ১ শতাংশ। আগের মুদ্রানীতিতে ব্যক্তি খাতে ব্যাংক ঋণের প্রবৃদ্ধি প্রত্যাশা করা হয়েছিল ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ। সেই সময় ব্যক্তি খাতে ঋণ অর্জিত হয়েছিল ১১ শতাংশ। কিন্তু জুলাই-জুন মুদ্রানীতিতে ব্যক্তি খাতে ব্যাংক ঋণের প্রবৃদ্ধি এক পর্যায়ে ১৪ দশমিক ৭ শতাংশে উন্নীত হয়েছিল। কিন্তু এ ঋণের অর্থ শিল্পে বিনিয়োজিত হয়নি। তাই আশঙ্কা করা হচ্ছে ব্যক্তি খাতের উদ্যোক্তারা শিল্পের নামে ঋণ নিয়ে তা অন্য খাতে প্রবাহিত করেছেন। এমনকি এই ঋণের একটি বড় অংশই বিদেশে পাচার করেছেন।

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে অর্থ পাচার একটি বড় ধরনের সমস্যায় পরিণত হয়েছে। ব্যাংক ঋণ নিয়ে অনেকেই খেলাপি হয়েছেন। এসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান তাদের গৃহীত ঋণের একটি বড় অংশই বিদেশে পাচার করেছেন। অর্থমন্ত্রী কয়েক দিন আগে বলেছেন, বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনা অত্যন্ত কঠিন কাজ। অর্থমন্ত্রীর এ অসহায়ত্ব কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ এই অর্থমন্ত্রী দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে ব্যাংকিং সেক্টরের জন্য যেসব আইনি পরিবর্তন সাধন করা হয়েছে তার অধিকাংশই ঋণখেলাপিদের অনুকূলে ব্যবহারের সুযোগ করে দিয়েছে। অর্থনীতিবিদের আপত্তি সত্ত্বেও গত জাতীয় বাজেটে সামান্য কর প্রদানের মাধ্যমে বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ দেশে ফেরত আনার সুযোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই সুযোগ কেউ গ্রহণ করেনি। অর্থাৎ অর্থ পাচারকারিরা ভালো করেই জানেন তাদের ক্ষমতার উৎস কোথায় এবং তাদের যে কেউ কিছু করতে পারবে না তাও তারা অবগত আছেন।

বাংলাদেশ অর্থনীতি আজ যে দুর্গতির মুখোমুখি দাঁড়িয়েছে আছে তার পেছনে এ অর্থ পাচারকারিদের ভূমিকা রয়েছে। আমরা যদি দৃঢ়হস্তে রাজনৈতিক বিবেচনা বাদ দিয়ে দুর্নীতিবাজ ও ব্যাংক থেকে ঋণগ্রহণ করে সেই অর্থ বিদেশে পাচারকারিদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে না পারি, তাহলে আগামীতে অর্থনীতি বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে- এটা অনেকটাই নিশ্চিত করে বলা যেতে পারে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত