ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

রাজধানীতে চুরির ঘটনা

দ্রুত শাস্তি কার্যকর জরুরি
রাজধানীতে চুরির ঘটনা

রাজধানীতে চুরির ঘটনা বাড়ছে। খোদ পুলিশই এ ব্যাপারে হতাশা প্রকাশ করেছেন। গত ১৮ জানুয়ারি ডিসেম্বর মাসের অপরাধ পর্যালোচনা এক সভা হয়। সভায় ডিএমপি কমিশনার বাসাবাড়িতে চুরির ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন। এ ধরনের চুরি প্রতিরোধে মাঠপর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তাদের তৎপর হতে বলেন। রাজধানীর এই চুরির ধরন- বারান্দা থেকে কাপড় চুরি, রান্নাঘরে ঢুকে হাঁড়িপাতিল চুরি বা জানালা দিয়ে ঘড়ি, মোবাইল ফোন চুরি নয়। এই চুরি হলো গ্রিল কেটে চুরি। ৯-১০ তলা থেকে গ্রিল কেটে সর্বস্ব চুরি করে নিয়ে যাওয়া।

২০২২ সালে এ ধরনের চুরি রেকর্ড করা হয়েছে ৭১৩টি, যা আগের বছরের তুলনায় ২৩ শতাংশ বেশি। চোরেরা খুবই পারদর্শী। দেয়াল বেয়ে ৯-১০ তলায় উঠে গ্রিল কেটে ভেতরে প্রবেশ করে সবকিছু লুটে নিয়ে যায়। এদের সংঘবদ্ধ দল আছে। এরা একজনের নেতৃত্বে কাজ করে থাকে। নেতৃত্বদানকারী যে, সে দেয়াল বেয়ে উঠতে পারে। এরা সাধারণত ঘরবাড়িতে যখন কেউ থাকে না এবং লম্বা ছুটিতে অন্যত্র চলে যায়, ঠিক তখনই সময়টা বেছে নেয় এবং সেই মতো কাজ করে। এরা পেশাদার চোর। এটাই এদের পেশা। লাখ লাখ টাকা আয় হয় এই চুরি করে। পুলিশই এসব তথ্য বের করেছে। এসব চোর ধরা পড়ে। কিন্তু তেমন কোনো শাস্তি হয় না। এক্ষেত্রে চুরির মামলায় তাই তেমন গুরুত্বও দেয়া হয় না। তদন্ত কাজে তেমন গুরুত্ব পায় না। ফলে যেনতেন ধরনের চার্জশিট দিয়ে মামলা দুর্বল করা হয় এবং আগাম খালাস পেয়ে আবার একই কাজ শুরু করে। তাছাড়া দীর্ঘদিন ধরে চুরির মামলা চলতে থাকায় এমনিতেই গুরুত্ব হারায়। সাক্ষীর অভাবে প্রমাণ করা কষ্টকর হয়ে পড়ে বিধায় শাস্তি দেয়া যায় না। অনেক সময় গ্রিল কেটে চুরি করতে গিয়ে বাধার সম্মুখীন হলে তাকে হত্যা পর্যন্ত করা হয়। এমন ঘটনাও ঘটেছে।

চুরি করা অপরাধ, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। আর এটা যখন অপরাধ, তখন তার শাস্তিও পেতে হবে। তাই আমরা মনে করি, চুরির মামলা হলে দ্রুত বিচার কাজ শেষ করতে হবে। কোনো চুরির মামলা হলে তা একমাসের মধ্যে শেষ করে ফেলা দরকার। এই এক মাস চুরির মামলার জন্য অনেক সময়। এ নিয়ে বছরের পর বছর মামলা চালালে কোনো লাভ হবে না। চুরি হলে পুলিশ সহজেই তা শনাক্ত করতে পারে। আধুনিক প্রযুক্তির ফলে আজকাল চোর শনাক্ত করা অনেক সহজ হয়ে গেছে। পুলিশ শনাক্ত করছেও। তাই বিচারকাজ দ্রুত শেষ করতে কোনো সমস্যা আছে বলে মনে হয় না। দ্রুত বিচার করতে গিয়ে যদি চোরেরা ছাড়া পেয়ে যায় যাক, কেউ না কেউ তো শাস্তি পাবে। ১০টা মামলায় দেখা গেল পাঁচজন শাস্তি পেল পাঁচজন ছাড়া পেল। পাক না। পাঁচজন তো পেল। আর এখন যে ব্যবস্থায় মামলা চলে, তাতে তো একজনও শাস্তি পায় না। বিষয়টি পুলিশ ও বিচার বিভাগ উভয়কেই ভেবে দেখতে হবে।

আমরা মনে করি, বিচারকাজ দ্রুত শেষ করার জন্য যা ব্যবস্থা নেয়া দরকার সব ব্যবস্থাই নেয়া হবে। কিছু কিছু বিষয় আছে, যা অপরাধ করার সঙ্গে সঙ্গেই বোঝা যায় যে, সে অপরাধ করেছে। সেই মামলা দীর্ঘদিন টেনে লাভ কী? সঙ্গে সঙ্গেই অর্থাৎ দ্রুত বিচার করে রায় দিলে শাস্তিও নিশ্চিত হবে এবং মামলার জটও কমবে। আমরা বিশ্বাস করি, বর্তমান সরকার নানাবিধ উন্নয়ন কাজের সঙ্গে জড়িত। সেই সঙ্গে মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির ব্যবস্থাটা নিশ্চিত করতে পারলে জাতি উপকৃত হবে এবং অপরাধপ্রবণতা কমে আসবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত