ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

আপনাদের ভাবনা

মানবতার জয় হোক

এম এ জিন্নাহ
মানবতার জয় হোক

‘আপনারে লয়ে বিব্রত রহিতে আসে নাই কেহ অবনী পরে,

সকলের তরে সকলে আমরা, প্রত্যেকে আমরা পরের তরে।’

মানুষের জন্যই মানুষের সৃষ্টি। একে অপরের উপকারের মধ্যেই মানবতার উদারতা প্রমাণিত হয়। কাউকে অপমানিত কিংবা অবহেলায় দূরে ঠেলে দেয়ার মধ্যে মানবতার সৌন্দর্য দৃপ্তময় হয়ে ওঠে না। আলোকিত মানুষ হওয়ার পাশাপাশি আলোকিত মানবতার ফেরিওয়ালা হওয়াও জরুরি। মানব সম্প্রদায় আর মানবতা দুটি পৃথককৃত শব্দ হয়ে থাকলেও এ দুটি শব্দ একই সুতোয় গাঁথা। পুষ্প যেমন করে আপনার তরে ফোটে না, মানুষকেও ঠিক সেরকম হতে হবে। একাকী বেঁচে থাকার মধ্যে তেমন কোনো প্রফুল্লতাময় স্বাদ নেই, তৃপ্তি নেই। ইচ্ছেশক্তির ওপর অনেক কিছুই ভর করে থাকে। মানবসম্প্রদায় ইচ্ছে করলে নিজেকে বিলিয়ে দিতে পারে মানবতার ভিড়ে। মানবতার উদারতার কারণে মানুষ মরেও অমর থাকে। এ শ্রেষ্ঠত্ব কতজনেই-বা অর্জন করে! গত কয়েকদিন আগে মানবসম্প্রদায় কে কীভাবে মানবতার মাঝে বিসর্জন দিতে হয় তা দেখিয়ে দিয়েছেন ঢাকা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সারাহ ইসলাম ঐশ্বর্য। তিনি মৃত্যুর আগে মাকে বলেছেন, তার শরীরের যেসব গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ মানব উপকারে আসে, সেগুলোকে যেন দান করা হয়। এরই মধ্যে তার মরণোত্তর কিডনি সফলভাবে মানবদেহে প্রতিস্থাপন করতে সক্ষম হয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল ডাক্তার। এ মহান দানে আরেকটি মানবজীবন বেঁচে রবে, আরেকটি অন্ধ মানুষ দৃষ্টি ফিরে পাবে। এ দান গোটা জগৎকে দেখিয়ে দিয়েছে, কীভাবে মানুষের উপকারে বিসর্জন হতে হয়। আমি মনে করি, সারাহ ইসলাম ঐশ্বর্য আপু ইতিহাসের পাতায় হাজার বছর বেঁচে থাকবে, বেঁচে রবে মানব এবং মানবতার মাঝে। প্রকৃষ্ট উদারতায় তিনি তার মরণোত্তর কিডনি এবং কর্নিয়া দান করে দিয়েছেন। এর থেকে পৃথিবীর মানুষের বহুকিছু শিক্ষণীয় আছে, বোঝার আছে, ভাবনার বিষয় আছে। আমরা সুস্থসবল এবং ঐশ্বর্যবান হওয়ার সত্ত্বেও মানব এবং মানবতাকে জীবিত করে রাখার জন্য এই পর্যন্ত কী করেছি? হিসাব করলে দেখা যাবে কিছুই করিনি। তাহলে আমাদের শ্রেষ্ঠত্ব কোথায়? ভোগবিলাসী জীবনযাপন শুধু ক্ষণিকের জন্যই থাকে, স্তব্ধ হয়ে গেলে কেউ আর খোঁজ নেয় না, খুঁজতে আসে না, ভাবে না। এমন জীবন কাননের সুউৎকৃষ্ট পুষ্পের মতোই অকেজো। জন্মালে জীবন সুন্দর হয়ে ওঠে না, গঠন করতে হয়। মানুষ হওয়ার পাশাপাশি মনুষ্যত্ব এবং মানবতাকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য নিজেকে তৈরি করে নিতে হবে। জীবন সুন্দর, যদি জীবনকে সুন্দর করে গড়ে তোলা যায়। প্রত্যেকে প্রত্যেকের অবস্থান থেকে উদারতা নিয়ে মানবতার অগ্রগতির মানোন্নয়নে কাজ করলে একটি সুশৃঙ্খল মানবসমাজ এবং আলোক রশ্মি জ্বলে থাকা পৃথিবী গঠন হবে।

পথ যে তৈরি করে তার হয়তো একটু কষ্ট হবে, পরে যারা সেপথে হাঁটবে তারা স্বস্তিবোধ করবে। তবুও বেদনা কিসের? আপনার পথ দেখানো পথ ধরে কত শত মানুষ এগিয়ে চলবে উৎকৃষ্ট প্রভা ছড়িয়ে দেয়ার জন্য।

বিশ্বের প্রতিটি মানুষ যদি একে-অপরের তরে এগিয়ে আসে, তাহলে দুষ্ক্রিয়া বলতে আর কিছুই থাকবে না, থাকবে না দাঙ্গামা-হাঙ্গামা, রক্তপাত, অর্থ-ঐশ্বর্যের নানাবিধ লোভ-লালসা ক্ষোভ। মানুষের একটাই পরিচয় থাকা জরুরি, তা হলো সে মানুষ। আর এ মানুষ হওয়ার যেসব দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে তা যথারীতি পালন করার জন্য আপনা থেকে স্পৃহা জাগ্রত হবে।

মহান সৃষ্টিকর্তা পৃথিবীতে ১৮ হাজার জীব সৃষ্টি করেছেন, এত জীবের ভিড় থেকে মানবসম্প্রদায়কে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন। অথচ, উদাসীন মানবজাতি ভুলেই গিয়েছে শ্রেষ্ঠত্বের মর্ম ভাণ্ডার। মানুষের মাঝে মানবতার জন্ম নেবে এটা খুবই একটি সহজসাধ্য বিষয়। অথচ, কেমন জানি অস্পষ্ট হয়ে ধূসর হয়ে পড়েছে মানবতা নামক শব্দটির গায়। কবে আমরা মানবজাতি মামবতাকে সাজিয়ে তুলব? সময় যেন এখনই এসেছে জেগে উঠবার তরে। তবে, তবে তাই হোক।

কলামিস্ট, কবি ও ছড়াকার

[email protected]

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত