ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

কোটার চক্রে আবদ্ধ মেধাবীরা

মো. আনোয়ার হোসেন
কোটার চক্রে আবদ্ধ মেধাবীরা

শিক্ষাই শক্তি, শিক্ষাই মুক্তি- অর্থাৎ দেশের অগ্রগতির মূল চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করে শিক্ষা। আর উচ্চ শিক্ষার সূতিকাগার বলা হয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে। এখানে গবেষণা ও নতুন নতুন আবিষ্কার হবে, হবে মেধাবীদের মিলন মেলা। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে মেধাবীদের উচ্চ শিক্ষার এক স্বপ্নের জায়গা। কারণ এখানে পড়াশোনার মান ভালো এবং পড়াশোনার খরচ তুলনামূলকভাবে কম। হাজারো স্বপ্ন, কঠোর পরিশ্রম এবং অর্থ ব্যয় করে ভালো পরীক্ষা দিয়েও এখন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়া অনিশ্চিত। এর প্রধান কারণ ভর্তিতে কোটা পদ্ধতি। প্রতিযোগিতামূলক ভর্তি পরীক্ষায় একজন শিক্ষার্থী অন্যদের চেয়ে শূন্য দশমিক শূন্য শূন্য এক নম্বর কম পাওয়ার কারণে যেখানে ভর্তির সুযোগ পাচ্ছে না; সেখানে কোটার কারণে অনেক কম নম্বর পেয়েও বহু শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ নিচ্ছে। এমন অনেক দৃষ্টান্ত আছে ভর্তি পরীক্ষায় ফেল করেও কোটার ভিত্তিতে চান্স পেয়েছে।

এর অকাট্য উদহারণ হলো, ২৭ জানুয়ারি ২০২২ সালে ‘দৈনিক ইত্তেফাক’ পত্রিকায় প্রকাশিত, পাস করলেই পোষ্য কোটায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বহু শিক্ষার্থীর ভর্তির সুযোগের কথা। ৮ নভেম্বর ২০২২, ‘কালের কণ্ঠ’ পত্রিকায় প্রকাশিত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক ভর্তি পরীক্ষায় পোষ্য কোটায় ৭১ জন প্রার্থী অকৃতকার্য হয়েও ভর্তির সুযোগ পেয়েছে।

সংবিধানে যেখানে বলা আছে, কোটা অনগ্রসর ব্যক্তিদের জন্য রাখা হয়। তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যে পোষ্যকোটা রাখা হয়েছে; বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকা, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কোন দিক দিয়ে অনগ্রসর, সে প্রশ্ন এড়িয়ে যাওয়ার মতো নয়। অথচ কোটা পদ্ধতি ব্রিটিশ এবং পাকিস্তান আমলের। কিন্তু তা ছিল সীমিত পর্যায়ে উচ্চতর পদেই আর সীমিত আকারে। সম্প্রতি ‘প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ’ ২০২০ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ৩৭ হাজার ৫৭৪ জন প্রার্থীকে ১৪ ডিসেম্বর ২০২২ তারিখে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করা হয়। এ পরীক্ষার নিয়োগে ৬০ শতাংশ নারী কোটা, ২০ শতাংশ পোষ্য কোটা, ২০ শতাংশ পুরুষ কোটা প্রয়োগ করে, যেখানে এই কোটার ওপর ২০ শতাংশ বিজ্ঞান কোটা রাখা হয়।

অভিযোগ, অদৃশ্যমান এই কোটা ব্যবস্থার বাতাবরণে সুবিধাবাদীরা রাজনীতির ধূম্রজাল বুনে আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে অযোগ্যদের চাকরির সুযোগ করে দেন। ফলে যোগ্যরা হারাচ্ছে, তাদের কর্মসংস্থান এবং তৈরি হচ্ছে, অযোগ্যদের এক বিশাল বলয়। এ দৃশ্যমান এবং অদৃশ্যমান কোটা ব্যবস্থার রোষানলে পরে প্রতি বছর কাঙ্ক্ষিত শিক্ষা এবং চাকরি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী।

সম্প্রতি, পোষ্য কোটা বাতিলে ডিসিদের সুপারিশ নজরকাড়ার মতো। কিন্তু অধিকাংশ কোটা ব্যবস্থা এখনও রয়েই গেছে। কোটা ব্যবস্থা একটা জাতির জন্য ইতিবাচক নয়। দেশের কল্যাণার্থে কোটা পদ্ধতি নিয়ে সবার ভাবা দরকার।

শিক্ষার্থী

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত