ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ধুলোর নগরী

রাজধানীর বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা নিন
ধুলোর নগরী

জনঅধ্যুষিত রাজধানী ঢাকা নগরী এখন রীতিমতো ধুলোর নগরীতে পরিণত হয়েছে। নগরীর অনেক এলাকাতেই ধুলোর পরিমান ভয়ংকর আকার ধারণ করেছে। সড়কে ধুলোর আস্তরণ পড়ছে, গাছের পাতা ধুলোয় বিবর্ণ হয়ে উঠেছে, ধুলোবাতাসে জনজীবনে অস্বস্তি তৈরি করছে। তথ্য অনুযায়ী, ধুলোময় এই শহর টানা ৫ দিন বায়ুদূষণে বিশ্বে শীর্ষে ছিল। গত বুধবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে পাকিস্তানের লাহোরকে টপকে ঢাকা শীর্ষে উঠে আসে। বায়ুদূষণ সূচকে ঢাকার মান ছিল ২৪৩, দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা লাহোরের ছিল ২৩৪। গত বুধবার ও মঙ্গলবার- এই দুই দিন বায়ুদূষণের সূচকে খুব অস্বাস্থ্যকর অবস্থানে ছিল ঢাকা। এর আগের তিন দিন এই নগর ছিল ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে। উল্লেখ্য, বৈশ্বিক বায়ুমান পর্যবেক্ষণকারী সুইজারল্যান্ডভিত্তিক ওয়েবসাইট আইকিউ এয়ার বিশ্বের প্রায় ১০০টি বড় শহরের বায়ুদূষণ নিয়ে লাইভ প্রতিবেদন প্রকাশ করে থাকে। সাধারণত অতিমাত্রায় বায়ুদূষণ এলাকায় রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়। এ ছাড়া অধিক সতর্কতার জন্য সাধারণের চলাচল সীমিত করার সুপারিশ করা হয়। সার্বিকভাবে ঢাকার মান ৩০০-এর নিচে থাকলেও রাজধানীর মহাখালী এলাকার বাতাস খুব ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। বুধবার মহাখালীর বাতাসের সূচকে অবস্থান ছিল ৩৪৯। বায়ুদূষণে এমন হাল জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ।

পরিবেশ বিশ্লেষকরা বলছেন, সাধারণত কলকারখানা ও যানবাহনের কারণে বায়ু অতিমাত্রায় দূষিত হচ্ছে। অন্যদিকে বন ধ্বংসের ফলে অক্সিজেন ও কার্বন ডাই-অক্সাইডের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। শীতাতপ নিয়ন্ত্রক যন্ত্র থেকে নির্গত সিএফসি বাতাসে মিশে ওজোন ধ্বংস করছে। এতে বায়ুদূষণ বাড়ছে। আবার বায়ুদূষণে ধুলার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে গাড়ি ও শিল্প-কারখানার ধোঁয়া। বাতাসে ধূলিকণা আগের চেয়ে অনেক বেশি বেড়েছে। আগে এত মেগা প্রজেক্ট ও গাড়ি ছিল না। পাশাপাশি ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার জলাশয় ভরাট হওয়ায় ধুলার নতুন উৎস তৈরি হয়েছে। সূত্রমতে, বিভিন্ন সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোগত উন্নয়নমূলক কাজের জন্য রাজধানীর ১৫টি এলাকা এখন ধুলার হটস্পটে পরিণত হয়েছে। এ ধুলায় ঢেকে যাচ্ছে ঢাকা।

প্রকাশ, এসব এলাকার মধ্যে রয়েছে শ্যামলী থেকে পঙ্গু হাসপাতাল হয়ে আগারগাঁও, ফার্মগেট থেকে কারওয়ান বাজার, যাত্রাবাড়ী থেকে শনির আখড়া, ধানমন্ডি থেকে বিডিআর গেট, আজিমপুর থেকে পিলখানা, বঙ্গবাজার থেকে ফুলবাড়িয়া, মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে বছিলা, মোহাম্মদপুর তিন রাস্তা থেকে ওই এলাকার বাসস্ট্যান্ড, ফার্মগেট থেকে হলিক্রস ও বিজ্ঞান কলেজ এলাকা এবং তেজগাঁও ট্রাক স্ট্যান্ড ও রেলগেট। অন্যদিকে এয়ারপোর্ট থেকে টঙ্গী, ভাটারা থানা থেকে ১০০ ফিট রাস্তা হয়ে বালু নদ পর্যন্ত এলাকার ধুলোবালিতে জনজীবন অতিষ্ঠ।

ধুলোবালি রাজধানীবাসীর জন্য নীরব ঘাতকে পরিণত হচ্ছে। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ধূলিকণা সহজেই ফুসফুসে ঢুকে মারাত্মক ক্ষতি করে থাকে। বায়ুদূষণ ও ধুলোবালির কারণে চুলকানি, অ্যাজমা বা শ্বাসকষ্টজনিত রোগ বাড়ছে। শিশুরা নতুন ধরনের অ্যাজমা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। শিশু, বয়স্ক মানুষ এবং যাদের ডাস্ট অ্যালার্জি আছে, তারা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে। এ অবস্থায় তিলোত্তমা কিংবা স্মার্ট নগরীর ধারণা হাস্যস্পদ। সংগত কারণেই ধুলো নিয়ন্ত্রণে যথাযথ পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন জরুরি। উন্নয়ন কর্মকাণ্ড নিয়ে কারও প্রশ্ন নেই; কিন্তু কাজের অগ্রগতি ধীরলয়ে হলে তা সমস্যার কারণ হয়। ধুলোবালি কমানোর জন্য সিটি করপোরেশনের নিয়মিত পানি ছিটানো দরকার। এই নিয়ে জনসচেতনতাও জরুরি।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত