ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা

এক ভয়ংকর চিত্র
শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা

যারা লেখাপড়া শিখছে। জ্ঞান অর্জন করে ভবিষ্যতে মানুষ হিসাবে নিজেকে প্রকাশ করার জন্য এগিয়ে যাচ্ছে, সেই শিক্ষার্থীরা আত্মহত্যা করে নিজেকে শেষ করে দিচ্ছে। আঁচল ফাউন্ডেশন নামে একটি তারুণ্যভিত্তিক সংগঠন ২০২২ সালে আত্মহননকারী শিক্ষার্থীদের সংখ্যা খুঁজতে গিয়ে দেখতে পায়। সারা দেশে ৪৪৬ জন স্কুল, কলেজ ও মাদরাসার শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে আত্মহত্যা করেছে ৮৬ জন শিক্ষার্থী। এসব আত্মহননকারীদের মধ্যে নারীর সংখ্যা ৬০ শতাংশ এবং দেশের ৮টি বিভাগের মধ্যে ঢাকা বিভাগ শীর্ষে রয়েছে। এই চিত্রটি ভয়ংকর বলে মনে করাই স্বাভাবিক। আঁচল ফাউন্ডেশন মনে করে স্কুলপড়ুয়া থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় সর্বস্তরের শিক্ষার্থীদের মধ্যেই আত্মহত্যা সংক্রামক হারে বেড়ে চলেছে। মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে দেশে আত্মহত্যার সংখ্যা শূন্যে নামিয়ে আনার লক্ষ্যে কাজ করছে আঁচল ফাউন্ডেশন।

আমরা আঁচল ফাউন্ডেশনকে সাধুবাদ জানাই এই কর্মকাণ্ডের জন্য। তারা বের করতে পারবেন কেন শিক্ষার্থীরা আত্মহননের পথ বেছে নিচ্ছে। আমরা সাধারণত জানি কেউ যখন আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় বা আত্মহত্যা করে তখন সে স্বাভাবিক থাকে না। মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। স্বাভাবিক অবস্থায় থাকলে কেউ আত্মহত্যা করতে পারে না। অন্তত যখন এই কাজটি করে তখন মুহূর্তের জন্য হলেও তার মানসিক অবস্থা স্বাভাবিক থাকে না। এ জন্যই সে আত্মহত্যা করে। কোনো স্বাভাবিক মানুষ কখনোই মরতে চাইবে না। যেকোন মূল্যে সে বাঁচতে চাইবে। এমনকি সে যদি প্রচণ্ড যন্ত্রণায় কাতর হয়, এমন মনে হয় যে, এই যন্ত্রণার চাইতে মৃত্যুই ভালো তবুও সে মরতে চাইবে না। আশা করবে বেঁচে থাকতে। সুতরাং সেই ব্যক্তি আত্মহত্যা করে যে স্বাভাবিক থাকে না। মানুষ যাতে স্বাভাবিক থাকতে পারে সেই চেষ্টাই করতে হবে। শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে বিষয়টা একটু জটিল। কেননা, যারা লেখাপড়া জানে তারা কেন আত্মহননের পথ বেঁছে নেবে? তারা সব কিছু মেনে নেয়ার জন্য তৈরি থাকে। লেখাপড়া তো এ জন্যই শেখে তারা। তাদের মধ্যে এ প্রবণতা কেন? মানসিক ভারসাম্য হারানোর পেছনে অনেক কারণ থাকতে পারে। এর মধ্যে পারিবারিক সম্পর্ক অন্যতম। কারণ শিক্ষার্থী পরিবারেই বড় হয়। যা কিছু অর্জন সব পরিবার থেকেই পেয়ে থাকে। এখানে লালনপালনে ঘাটতি অনেক সময় মানসিক বিপর্যয় এতে দিতে পারে। একজন শিক্ষার্থী যখন লেখাপড়া করবে, তখন তার সব ধ্যান-ধারণা লেখাপড়ার দিকেই থাকতে হবে। লেখাপড়ার বাইরে অন্য কোনো চিন্তাভাবনা যদি প্রধান হয়ে ওঠে, তাহলেও মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। চরম হতাশা ও গ্লানি থেকেও এমন অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে। বড় বড় শহরে চাকচিক্য ও একে অপরের সঙ্গে প্রতিযোগিতার কারণেও মানসিক অবস্থা দুর্বল হতে পারে।

যাই হোক, আমরা মনে করি শিক্ষার্থী হোক বা অন্য কেউ হোক আত্মহত্যার প্রধান কারণ মানসিক অবস্থা। এ মানসিক অবস্থা যেন কখনও খারাপের দিকে না যায়, সেই চেষ্টা করতে হবে সবাইকে। সেই সঙ্গে নানা কারণে মানসিক স্বাস্থ্য খারাপ হলে সঙ্গে সঙ্গে তার উপযুক্ত চিকিৎসার ব্যবস্থা করাও দরকার। সময়মতো উপযুক্ত চিকিৎসা পেলে অনেকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে। আমরা বিশ্বাস করি, আঁচল ফাউন্ডেশনের মতো সরকারি সংস্থাও এনিয়ে গবেষণা করে কারণ ও করণীয় বের করে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। এতেই সুফল পাওয়া যাবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত