মানব পাচার

একটি স্থায়ী সমস্যা!

প্রকাশ : ৩০ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

মানব পাচার বাংলাদেশের এক স্থায়ী সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ থেকে যেন মুক্ত হওয়াই যাচ্ছে না। থামানো যাচ্ছে না পাচার। দারিদ্র্য থেকে উত্তরণের লোভ দেখিয়ে পাচারকারীরা দুর্বল মানুষগুলোর সরলতার সুযোগ নিচ্ছে। অন্যদিকে অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতায় মানুষের মধ্যে প্রবলভাবে কাজ করছে বিদেশে যাওয়ার ইচ্ছা। সরকার নানাভাবে চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে, তবুও কমানো যাচ্ছে না মানব পাচার। যারা পাচার হয়, তারা যে শুধু বিদেশে গিয়ে চাকরি পান তাই নয়। নানা ঝুঁকিপূর্ণ কাজে তাদের ব্যবহার করা হয়। কাউকে পালিয়ে থাকতে হয়, কাউকে কারাগারে নির্যাতন ভোগ করতে হয়। যারা লোভ দেখিয়ে পাচার করে দেয়, তাদের আর খুঁজে পাওয়া যায় না। কোনো কোনো ক্ষেত্রে অল্প জায়গায় পাচার করে বিদেশে আটকে রেখে তাদের ওপর নির্যাতন করা হয় এবং তাদের আত্মীয়স্বজনের কাছে অর্থ চাওয়া হয়। অর্থ না দিলে আরও বিপদ হবে বলে জানায়। আত্মীয়রা যে যেমন পারে অর্থ দিয়ে দেয়। তার পরেও মুক্তি মেলে না।

এই এক নিষ্ঠুর ব্যবসা। এ ব্যবসা যারা করে, তারা বড় অপরাধী। অপরাধী হলেও তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার অভাব দেখা যায়। এমন কোনো অপরাধীর দৃষ্টান্তমূলক কোনো শাস্তি হয়েছে বলে আজ পর্যন্ত জানা যায়নি। বিদেশে যাওয়ার প্রবণতা আমাদের দেশে অনেক বেশি। সরকারি ব্যবস্থাপনায় যারা যাচ্ছে, তাদের কোনো সমস্যা নেই। এরা বিদেশে কাজ নিয়ে বৈধভাবেই যাচ্ছে। অনেকে এজেন্টের মাধ্যমেও যাচ্ছে। সেখানেও মোটামুটি সাফল্য বেশি হলেও সেখানেও কিছু অনিয়ম পাওয়া যায়। এক কাজ বলে বিদেশে নিয়ে গিয়ে অন্য কাজে লাগিয়ে দেয়া হয়। অনেক চূড়ান্ত ব্যবস্থা না করেই লোক নিয়ে গিয়ে তাদের একখানে আটকে রেখে এক এক করে কাজের ব্যবস্থা করা হয়- এমন ঘটনাও ঘটছে। তবে সরকার নজরদারি করায় এইসব এজেন্টের সংখ্যা কমে গেছে। একেবারে না কমা পর্যন্ত এ ব্যাপারে সুফল পাওয়া যাবে না। আর একেবারে কমানো পুরোপুরি সম্ভব নয় বলেই সবার ধারণা। মানুষ বিদেশে যাবে। নিশ্চয়ই যাবে। পৃথিবীজুড়ে বাংলাদেশিদের সংখ্যা প্রায় ১ কোটি। তারা কাজ করছে। অর্থ পাঠাচ্ছে। আমাদের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের একটা বড় মাধ্যম এই আয়। সুতরাং আমরা যত পারব লোক পাঠাব বিদেশে। কিন্তু তা হতে হবে বৈধভাবে, যাতে যারা যাবে তাদের কোনো কষ্ট না হয় এবং কোনো প্রতারকের পাল্লায় পড়ে সব কিছু না হারায়।

আমরা মনে করি, লোক পাঠাব তবে পাচার করে নয়। পাচার সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করতে হবে। পাচার বন্ধের জন্য দেশের মানুষকে সচেতন হতে হবে। তাদের বুঝতে হবে, একমাত্র সরকারি ব্যবস্থাপনা ছাড়া তারা কেউ বিদেশে যাবে না। পুলিশকে আরও তৎপর হতে হবে। পাচার রোধে পুলিশ যে কাজ করছে না, তা নয়। এর পরেও তো পাচার হচ্ছে। তাই পাচারকারীদের চেয়ে পুলিশকে আরও বেশি স্মার্ট হতে হবে, যাতে পাচারকারীদের সব তৎপরতা পুলিশ নস্যাৎ করে দিতে পারে। পাচার রোধে সবচেয়ে বড় উদ্যোগ নিতে হবে পাচারের মামলায় গতি আনা। পাচারের জন্য যে মামলা শুরু হবে, তা অতি দ্রুত শেষ করে মীমাংসা করতে হবে। এতে পাচারকারীরা একটু চিন্তা করতে পারবে- পাচার করবে কি-না। আমাদের বিশ্বাস, সবাই আন্তরিকভাবে তৎপর হলেই পাচার রোধ সম্ভব।