ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

নারী শ্রমিকের লাশ হয়ে ফেরা

এর সমাধান কী?
নারী শ্রমিকের লাশ হয়ে ফেরা

নারী শ্রমিকরা কয়টা পয়সার জন্য বিদেশে যান কাজ করতে। সেখানে গিয়ে কী কাজ করেন, কত আয় করেন, তার চেয়ে বেশি ঘটনা ঘটে তাদের লাশ হয়ে ঘরে ফেরা। ২০১৬ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ৭১৪ নারী লাশ হয়ে ঘরে ফিরেছেন। বিদেশে বাংলাদেশি নারী শ্রমিকের মৃত্যু নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। যদিও মৃত্যুর কোনো না কোনো কারণ দেখানো হয়। তবে সে কারণগুলো কতটুকু যুক্তিসঙ্গত, তা কি পরে তদন্ত করে দেখা হয়েছে? নানা কারণে তা সম্ভব হয়নি। মৃত্যুর কারণে যা বলা হয়, তাই মেনে নিতে হয়।

নারী শ্রমিকরা সাধারণত মুসলিম দেশগুলোতে গিয়ে থাকেন। সবচেয়ে বেশি যান সৌদি আরবে। মৃত্যু সংখ্যাও সেখানে বেশি। ৭১৪ জনের যে মৃত্যু সংবাদ পাওয়া গেছে, তার মধ্যে সৌদি আরবেই ২০২ জন। বাকিগুলো অন্যান্য দেশে যেমন- জর্ডান, নেবানন, ওমান। নারী শ্রমিকের এমন মৃত্যুহার ধারণা দেয়, তাদের ওপর নির্যাতন চালানো হয়। এক কাজের নাম করে নিয়ে গিয়ে অন্য কাজ করানো হয়। তাদের সঙ্গে কেউ কেউ ক্রতদাসীর মতো আচরণ করেন। নির্যাতন সইতে না পেরে কেউ আত্মহত্যার পথ বেছে নেন। স্বাভাবিক অসুখেও অনেকের মৃত্যু হতে পারে। তবে তার সংখ্যা নিতান্তই কম। তথ্যে জানা যায় যে, এই সব মৃত্যুর ৩১ শতাংশই অস্বাভাবিক। মৃত্যু যদি অস্বাভাবিক হয়, তাহলে তার তদন্ত ও বিচারও তো হতে হবে বা হওয়া দরকার। কিন্তু এ ক্ষেত্রে তা হয় না। সাধারণত কারও বাড়িতে কাজ করার জন্য নারীদের নেয়া হয়। নারীদের ওপর যৌন হয়রানির অভিযোগও পাওয়া যায়। অসহায় আমাদের নারী শ্রমিকরা। আমরা কিছুই করতে পারি না।

বিষয়টি বেশ স্পর্শকাতর। এ ক্ষেত্রে যা করণীয় তা আমাদের অবশ্যই করতে হবে। যেমন- যেসব নারী বিদেশে যাবেন বা তাদের বিদেশে পাঠানো হবে, তাদের বিষয়ে ভালোভাবে খোঁজখবর নেয়া দরকার। অনেক সময় পাচারকারীরা এর সঙ্গে জড়িত থাকে। নানা প্রলোভন দেখিয়ে তাদের এক কাজের জন্য পাঠিয়ে অন্য কাজ করানো হয়। নারীদের শুধু সরকারি তত্ত্বাবধানে পাঠাতে হবে। কোনো বেসরকারি এজেন্টকে এ কাজটি করতে দেয়া যাবে না। যেসব নারী লাশ হয়ে ফিরেছেন, তাদের কেউ কেউ পাচারকারীর কবলে যে পড়েননি, তাও নয়। আগে থেকে সাবধান হলে পাচারকারীদের হাত থেকে রক্ষা করা সম্ভব।

একটি বড় অভিযোগ পাওয়া যায় যে, বিদেশে চাকরি নিয়ে যেতে হলে সরকারের একটি সংস্থা ‘জনশক্তি রপ্তানি’-এর কাছ থেকে অনাপত্তিপত্র বা একটি কার্ড করতে হয়। অভিযোগ আছে, এই অনাপত্তিপত্র বা কার্ড করতে নির্দিষ্ট পরিমাণ ঘুষ লাগে। অনেকে ঘুষ দিয়ে কার্ড তৈরি করে বিদেশে চলে যান। এরাই সাধারণত পাচারকারীদের হাতে পড়েন। এ বিষয়ে সতর্ক থাকা দরকার। তা ছাড়া যেসব দেশে নারীরা যাচ্ছেন কাজ করতে, সেই সব দেশে আমাদের দূতাবাস আছে। দূতাবাসের কাজ হবে নারী শ্রমিকদের বিশেষভাবে খোঁজ রাখা। তাদের কোনো সমস্যা হলে দূতাবাস হস্তক্ষেপ করবে। তাদের কোনো সমস্যা হলে দূতাবাস তার মীমাংসা করবে। এ ক্ষেত্রে কোনো নারী শ্রমিকের মৃত্যু হলে দূতাবাস সেই দেশের প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করে মৃত্যুর কারণ বের করবে এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে।

সব শ্রমিকই আমাদের অর্থনীতির প্রাণ। দীর্ঘদিন ধরে পুরুষ শ্রমিক আমাদের অর্থনীতিতে ভূমিকা রেখে আসছেন। সেই সঙ্গে পরে হলেও নারী শ্রমিকরা যুক্ত হয়েছেন। এটা গর্বের কথা। এই গর্ব যেন ব্যর্থ না হয়। নারী শ্রমিক বিদেশে যাবেন সব রকম নিরাপত্তার সঙ্গে। আমাদের বিশ্বাস, এর একটা সুষ্ঠু ব্যবস্থা করা সম্ভব হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত