ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ব্যবসায় বড় বাধা দুর্নীতি

সুশাসন নিশ্চিত করা জরুরি
ব্যবসায় বড় বাধা দুর্নীতি

আমাদের অনেক অর্জনই দুর্নীতির কারণে প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। সরকারের অনেক সদিচ্ছাও দুর্নীতির রাহুগ্রাস থেকে মুক্ত থাকতে পারছে না, যা আমাদের উন্নয়ন অগ্রগতির ধারায় বড় ধরনের ক্ষত তৈরি করে চলেছে। একইভাবে জনগণ ভুক্তভোগীতে পরিণত হচ্ছে। বলাবাহুল্য, দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে দুর্নীতির মাত্রা একটু বেশিই, যা উদ্যোক্তা ও ভোক্তা উভয়ের জন্যই ভোগান্তি তৈরি করছে। অথচ বর্তমান উন্নয়ন ধারায় ব্যবসায় উত্তম পরিবেশ প্রত্যাশিত। বাস্তবে ক্রমেই পরিস্থিতি ঋণাত্মক দিকেই ধাবিত হচ্ছে। এ বিষয়টি সবারই জানা। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সদ্য প্রকাশিত বাংলাদেশ ব্যবসায় পরিবেশ ২০২২ : উদ্যোক্তা জরিপেও বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, দেশে ব্যবসার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিতে দুর্নীতিই প্রধান বাধা। অধিকন্তু ২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালে দেশে ব্যবসায় পরিবেশের উন্নতি হয়নি। ব্যবসা পরিচালনা সংক্রান্ত কোনো কোনো সূচকের অবনতি হয়েছে। কোনোটি স্থবির রয়েছে। ব্যবসায় বড় বাধা দুর্নীতির কারণে বিভিন্ন সেবা পেতে বাড়তি ব্যয় গুনতে হয়। এ কারণে অভ্যন্তরীণ কিংবা রপ্তানি উভয় ধরনের পণ্যের উৎপাদন ব্যয় বাড়ছে। পণ্য ও সেবার মূল্য বা মূল্যস্ফীতির চাপ আরও বেড়ে যায়। এতে সাধারণ মানুষ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

উল্লেখ্য, দেশের প্রধান ব্যবসাকেন্দ্র ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জের ৭৪ জন শিল্প উদ্যোক্তা এবং শীর্ষ কর্মকর্তাদের মতামতের ভিত্তিতে জরিপের ফলাফল নির্ধারণ করা হয়। এতে অংশ নেওয়া উদ্যোক্তাদের মধ্যে বৃহৎ, মাঝারি ও ক্ষুদ্র- তিন ক্যাটাগরির প্রতিনিধি রয়েছেন। গত বছরের এপ্রিল থেকে জুলাইয়ের মধ্যে জরিপটি পরিচালনা করা হয়। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম (ডব্লিউইএফ) এতে সহায়তা দিয়েছে। জরিপে দুর্নীতির মতো বড় বাধার পাশাপাশি ব্যবসায় আরও কিছু প্রধান সমস্যা চিহ্নিত করা হয়েছে। সেগুলো হলো- অপর্যাপ্ত অবকাঠামো, ব্যাংক থেকে ঋণ পাওয়া এবং অদক্ষ আমলাতন্ত্র। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে মূল্যস্ফীতি, বৈদেশিক মুদ্রার অস্থিতিশীলতা এবং নীতির ধারাবাহিকতার অভাব। এসব কারণে দেশের ব্যবসায়িক পরিবেশের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি বলে জরিপে জানিয়েছে সিপিডি। প্রতিবেদন অনুযায়ী, বড় ব্যবসায়ীরা ব্যবসা-বাণিজ্যের সব ক্ষেত্রে আধিপত্য খাটাচ্ছে। সরবরাহ চেইনের সব পর্যায়েই তাদের প্রাধান্য। পাইকারি, খুচরা সব ব্যবসা তারাই করছে। এতে ক্ষুদ্র এবং মাঝারি মানের ব্যবসা উদ্যোগগুলো সংকুচিত হচ্ছে, যা বৈষম্য তৈরি করছে। সার্বিকভাবে বলা যায়, দেশের ব্যবসায়িক পরিস্থিতি অস্বস্তিকর। এদিকে করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে ৩ বছরের বেশি সময় লাগবে বলে মনে করেন ব্যবসায়ীরা। জরিপে অংশ নেয়া ব্যবসায়ীরা আরও বলেছেন, অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়ায় খরচ কমাতে শ্রমিক ছাঁটাই করতে হচ্ছে তাদের। পাশাপাশি জরিপে অংশ নেয়া ব্যবসায়ীরা, আগামী দুই বছরে অর্থনীতিতে বেশ কিছু ঝুঁকির কথাও বলেছেন।

উপরিউক্ত জরিপ ফলাফলে দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যবসায়িক পরিস্থিতির পাশাপাশি এ খাতের একটি সামগ্রিক চিত্র ফুটে ওঠেছে, যা আমাদের জন্য অস্বস্তিকর। সংগত কারণেই এখানে কর্র্তৃপক্ষের তীক্ষè দৃষ্টি প্রত্যাশা করা যায়। সরকারের নীতিনির্ধারকরাও প্রায়ই দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সের প্রত্যয় ব্যক্ত করে থাকেন, এখন তা বিশ্বাসযোগ্যভাবে বাস্তবায়নের সময় এসেছে। এর ব্যত্যয় ঘটলে অনেক প্রত্যাশা ও আকাঙ্ক্ষা থেমে যাবে, অনেক অর্জন মøান হয়ে পড়বে। দেশে আয়বৈষম্য বাড়ার পাশাপাশি বিপুল জনমানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই সম্মিলিতভাবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। এক্ষেত্রে অবশ্যই সর্বত্র সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত