ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

কত ছবি কত কথা

সুষ্ঠ নির্বাচন নিশ্চিত বিএনপি বাধা হবে না

কাজী রশীদুল হক পাশা
সুষ্ঠ নির্বাচন নিশ্চিত বিএনপি বাধা হবে না

রাজনীতির মাঠ এখন গরম। গরমের কারণ আগামী সাধারণ নির্বাচন। পাঁচ বছর পরপর এই নির্বাচন হয়ে থাকে এবং এই নির্বাচনেই ক্ষমতা বদল হয়। অতীতে বিভিন্ন উপায়ে ক্ষমতা বদল বা ক্ষমতা দখলের ইতিহাস আছে। অগণতান্ত্রিক সেই ইতিহাসের আর পুনরাবৃত্তি হতে দেয়া যাবে না। একমাত্র নির্বাচনের মাধ্যমেই সরকার বদল হবে এবং সেই নির্বাচন সরকারের অধীনেই হবে, নির্বাচন পরিচালনা করবে নির্বাচন কমিশন, সরকার তাকে সহযোগিতা করবে। বাংলাদেশে এই পদ্ধতি অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে অনেক ত্যাগ-তিতিক্ষার মাধ্যমে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ তা প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছে। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে স্বাধীনতা অর্জনের পর নানা বাধা-বিপত্তির সম্মুখীন হতে হয়। পরাজিত শত্রুরা বারবার আঘাত হানে স্বাধীনতাকে বিপদে ফেলতে এবং আওয়ামী লীগ নামের দলটিকেও নিশ্চিহ্ন করে দিতে। কোনো চেষ্টাই সফল হয়নি। মাটি থেকে উঠে আসা, দেশের সাধারণ মানুষের হৃদয়ে গাঁথা এই দলটিকে সরানো যায়নি। সব বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে আবার সামনে চলে এসেছে। আর পেছনে যাবে না।

জাতীয় নির্বাচন সামনে। দল হিসেবে আওয়ামী লীগও নির্বাচনের জন্য তৈরি হচ্ছে। অপর একটি বড় দল জাতীয় পার্টিও নির্বাচনের দিকেই এগোচ্ছে। আর একটি বড় দল বিএনপি, যারা পরাজিত শক্তি হিসেবে পরিচিত। এরা কি করবে, এখনও তা ঠিক করতে পারছে না। সে এক বছর আগে থেকেই বর্তমান সরকারকে বিদায় করার আন্দোলন শুরু করেছে। এতদিনে তাদের তেমন কোনো অগ্রগতিও লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। তারা বলছে, আন্দোলনে গণজোয়ার তুলে সরকারের পতন ঘটাবে তারপর কেয়ারটেকার সরকার হবে এবং সেই সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে। সেই নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে। বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে তারা যাবে না। তারা বারবার একই কথা বলছে যে, নির্বাচনে যাবে না বর্তমান সরকারের অধীনে। সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। তাদের এই দাবির সমর্থনে জনগণকে এখনও সম্পৃক্ত করতে পারেনি। আন্দোলনই গড়ে তুলতে পারেনি, গণঅভ্যুত্থান তো দূরের কথা। বিএনপি আন্দোলনে ব্যর্থ হলেও তা তারা স্বীকার করতে চাচ্ছে না। তাদের মতে, সরকারকে ঠেলে ফেলে দেয়ার মতো শক্তি তারা সঞ্চয় করেছে এবং যেকোনো সময় সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করা সময়ের ব্যাপার মাত্র। জনসমাগমে বারবার একই কথা বললেও আওয়ামী লীগ তাকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে উড়িয়ে দিচ্ছে। জনগণও বিএনপির কথা বিশ্বাস করে উড়িয়ে দিচ্ছে। জনগণ বিএনপির কথা বিশ্বাস করছে না। বিএনপিও তাদের কথা জনগণকে বিশ্বাস করাতে পারছে না। একের পর এক কর্মসূচি দিয়ে যাচ্ছে, কিছুতেই কিছু হচ্ছে না। জনগণ সম্পৃক্ত হচ্ছে না। কারণ হলো, জনগণ কোনো অশান্তি পছন্দ করে না। আগে অনেক সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড তারা দেখেছে। আবার তেমন কোনো ঘটনা ঘটুক, তা তারা কিছুতেই চায় না। জনগণের ধারণা, সরকারকে নির্বাচন ছাড়া হটাতে হলে সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালাতে হবে। তা ছাড়া সরকারকে সরানো যাবে না। জনগণের এমন মনোভাব বুঝতে পেরেই বিএনপি ২০১৩ সালের মতো আগুন সন্ত্রাসে যায়নি। ভবিষ্যতে যাবে বলেও মনে হয় না। আন্দোলনে সরকারকে সরিয়ে কেয়ারটেকার সরকার গঠন করবে-এমন কথা জোরের সঙ্গে বলা হচ্ছে কর্মীদের চাঙা রাখার জন্য। কর্মীরা যদি জেনে যায় যে, বিএনপি কোনোভাবেই সরকার বদলাতে পারবে না। এবং সরকার বদলাতে হলে নির্বাচন ছাড়া অন্য কোনো পথ নেই, তা হলে কর্মীরা আন্দোলন থেকে সরে আসবে। এ কথা যদি সত্যি হয়, তাহলে পরে কি হবে?

কর্মীরা তো একসময় জানবেই এবং দেখবে যে, বিএনপি সরকারকে হঠাতে পারল না। তখন কী হবে? বিএনপি তখন কী করবে? আন্দোলন করে যদি সরকারের পতন না ঘটাতে পারে, তাহলে বিএনপির অবস্থা কী হবে? তাহলে কি আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে শেষে নির্বাচনে অংশ নেবে?

এদিকে সরকার আগামী সাধারণ নির্বাচনে সুষ্ঠু ও অবাধ করার সব ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। নির্বাচন কমিশন এই মতোই কাজ করে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী জেলা প্রশাসকদের সম্মেলনে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতিও জেলা প্রশাসকদের একটি সুষ্ঠু নির্বাচন করার ইঙ্গিত দিয়েছেন। আওয়ামী লীগের নেতারাও সভা-সমাবেশে বলছেন সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। সেই ক্ষণে বিএনপিকে আহ্বান জানাচ্ছে, নির্বাচনে অংশ নিতে এখন থেকে প্রস্তুত হতে। সেদিকে না গিয়ে তথাকথিত আন্দোলন নিয়েই আছে বিএনপি। সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করবেই সে যেভাবেই হোক। বিএনপির এমন আচরণ কেউ বুঝতে পারছে না। এমনকি যারা এমন বক্তব্য দিচ্ছেন তারাও নয়। কেউ বলছেন, বিদেশ থেকে যা বলতে বলা হচ্ছে এখানকার নেতারা তাই বলছেন, কেন বলছেন-সে প্রশ্ন করার ক্ষমতাও তাদের নেই। ২০১৩ সালে সন্ত্রাসের কারণে বিএনপি ব্যর্থ হয়। পরে ২০১৮ সালে সেই ব্যর্থতার জেরে আবার ব্যর্থ হয়। এরপর তারা ভাবতে থাকে নির্বাচন করে কোনো লাভ হবে না। নির্বাচন করে জনগণের ভোট পাওয়া যাবে না। যতদিন তারা ক্ষমতায় ছিল ততদিনে দেশের জন্য দেশের মানুষের জন্য কিছুই তারা করতে পারেনি। এ কথা জনগণ জানে। এ জন্য নানা মিথ্যা কথা একের পর এক বললেও তারা দেশ ও দেশের মানুষের জন্য কিছুই করতে পারেনি। একথা জনগণ জানে। এজন্য তারা নানা মিথ্যা কথা একের পর এক বললেও দেশ ও দেশের মানুষের জন্য কী করেছে তা মিথ্যা করেও বলতে পারে না। সুতরাং জনগণ কেন তাদের ভোট দেবে? পরপর দুটি ভোটে তারা বঞ্চিত হয়েছে। এরপর এমন কী কাজ করল যে, জনগণ তাদের ভোট দেয়ার জন্য এগিয়ে আসবে? দেশের যা কিছু উন্নয়ন তার সবটাই করেছে এককভাবে আওয়ামী লীগ। বিএনপির ন্যূনতম অবদান নেই। তাহলে তাদের পক্ষে মানুষ কেন এগোবে। কেন তাদের আন্দোলনে সম্পৃক্ত হবে। কেন তাদের ভোট দেয়ার জন্য মুখিয়ে থাকবে? এসব কারণেই বিএনপি নির্বাচনে যেতে চায় না। কেয়ারটেকার সরকার অর্থাৎ অনির্বাচিত সরকারের অধীনে নির্বাচনে যেতে চায়। তাদের ধারণা, অনির্বাচিত সরকার হলে নানাভাবে প্রভাবিত করে হয়তোবা ভোট পাওয়া যেতে পারে। একটা সম্ভাবনা তো থেকেই যায়। কিন্তু আওয়ামী লীগের কথা হলো, পাঁচ বছর ধরে একটি নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় থাকল আর নির্বাচনের আগে ক্ষমতা ছেড়ে দিয়ে কোনো অনির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা দিয়ে দেবে-তা কখনোই মেনে নেয়া যায় না।

সুতরাং এই ব্যাবস্থা কোনোভাবেই চালু করা যাবে না। আওয়ামী লীগ এ ব্যাপারে অটল। বিএনপিও তাদের দাবিতে অনড়। এই হলো প্রধান দুই দলের বর্তমান অবস্থান।

আওয়ামী লীগ টানা ক্ষমতায় আছে তিন মেয়াদ। এক বছর বাকি থাকতে বিএনপির হঠাৎ মনে হলো, তারা যেন হারিয়ে যাচ্ছে। তাই সরব হতে আন্দোলন শুরু করে। ইতোমধ্যে প্রচুর অর্থ ব্যয় করে বিদেশে লবিস্ট নিয়োগ করে। স্থানীয় বিদেশি কূটনীতিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে সরকারবিরোধী কিছু কাজকর্ম চালানোর চেষ্টা করে। কিছু কূটনীতিক তাদের কথায় সাড়াও দেন। পরে অবশ্য সরকার বিষয়টি সামলাতে সক্ষম হয়।

বিদেশ থেকে কিছু স্যাংশন আনতে সফল হয় বিরোধী দল বিএনপি ও তাদের জামায়াত সঙ্গীরা। এতে এতই খুশি হয় বিএনপি যে, তারা ভাবতেই শুরু করে এবার তারা বিদেশিদের সহায়তায় ক্ষমতায় যেতে পারবে। বলা দরকার যে, আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের পর মুক্তিযুদ্ধের সময় যে প্রধান দেশটি আমাদের বিরোধিতা করেছিল তারাই বিএনপির সঙ্গে হাত মিলিয়ে একটা কিছু করার চেষ্ট করে। অবশ্য কিছু পরে তারাই আবার তাদের ভূমিকা থেকে দূরে সরে যায়। বিএনপি প্রায় নিশ্চিত হয়ে যায় যে, বিদেশিদের চাপে আওয়ামী লীগ সরকার পদত্যাগ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিতে বাধ্য হবে। এর ওপর ভরসা করে এগোতে থাকে বিএনপি। এখানেও বাধাপ্রাপ্ত হয়, যখন দেখল একটি দেশের কর্মকর্তা ভারত সফর শেষে বাংলাদেশে এসে ঘুরে গেল-অথচ তেমন কিছু বলে গেল না। কোনো উৎসাহও দিল না। এতে হতাশ হয়ে গেল বিএনপি। এই হতাশা প্রকাশ করতেও লজ্জাবোধ হলো। মুখে কিছু বরতে পারল না, তবে আচার-আচরণে কিছুটা নমনীয় বলে মনে হলো। সে পর্যায়েই আছে এখনও। এখন দেখার বিষয়, এর পর বিএনপি কোন পথে যায়। এখন কি সরকার পতনের আন্দোলন অব্যাহত রাখবে, না-কি কোনো বাহানায় নির্বাচনের দিকে এগোবে বিএনপি-এটাও শিগগির বোঝা যাবে।

বিএনপি যে আন্দোলন করে বর্তমান সরকারকে সরাতে পারবে না-সেটা নিশ্চিত। তাই যদি হয়, তাহলে বিএনপি কী করবে? এখন নির্বাচনে যাওয়াও একটা লজ্জার ব্যাপার। যদিও রাজনীতিতে লজ্জা বা শেষ কথা বলে কিছু নেই। যে কোনো সময় যে কোনো ঘটনা ঘটতে পারে। তেমনই হয়তো বা বিএনপি ঘোষণা দিয়ে নির্বাচনে অংশ নেয়ার কথা বলবে। আবার এমনও হতে পারে, জেদ করে নির্বাচনেও গেল না। সরকারকেও সরাতে পারল না; অথচ নির্বাচন হয়ে গেল এবং অবাধ ও সুষ্ঠুই হলো। আওয়ামী লীগ আবার ক্ষামতায় এবং পার্লামেন্টে বিরোধী দল জাতীয় পার্টি। এরপর কি বিএনপির কোনো অস্তিত্ব থাকবে? বিএনপি কী ভাবছে এবং কী করবে, তার ওপরই সব প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে।

এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগ তার নিজ পথে ঠিকমতোই এগোচ্ছে। গত ১৪ বছরে আওয়ামী লীগ সরকার এমন কিছু করেনি, যে জন্য তার ভোট কমে যাবে। সরকারের সমালোচনা তো করাই যায়। সব সরকারেই সমালোচনা করার অনেক ক্ষেত্র থাকে। সবাই সমালোচনা করতেই পারে। বিএনপিও তেমনি সমালোচনা করলে কোনো সমস্যা ছিল না। কিন্তু তারা তো দেশ ও দলের সার্বভৌমত্ব নিয়ে টান দেয়, যা কোনো নাগরিক মেনে নিতে পারে না। আমাদের মুক্তিযুদ্ধে যারা বিরোধিতা করেছিল তারাই পরবর্তীকালে বিএনপি নামে আত্মপ্রকাশ করে। আর এ জন্যই দেশের মাটির, দেশের সাধারণ মানুষের দল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারেনি। অবশ্য এমন চেষ্টাও করেনি তারা। কেননা, মাটি থেকে উঠে আসা দল তো আওয়ামী লীগ। তাদের যারা বিরোধিতা করবে, তারা মাটি থেকে উঠে আসতে পারে না। যা হোক, দেশের দুটি বড় রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বর্তমান অবস্থান অনেক আগে-পিছে। আওয়ামী লীগ যদি ১ নম্বরে থাকে সেখানে বিএনপি আছে ১০ নম্বরে। পার্থক্য এতটাই। দেখা যাক সময় কী বলে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত