চিকিৎসকদের ইনস্টিটিউশনাল প্র্যাকটিস

চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও ইতিবাচক

প্রকাশ : ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

প্রায় সব চিকিৎসকই নিজ বাসাবাড়ি কিংবা চেম্বারে রোগী দেখে থাকেন। এটা মোটামুটি ওপেন সিক্রেট। এর ভালোমন্দ নিয়ে মতানৈক্য রয়েছে, তবে তা অব্যাহতভাবে চলছে। অনেকের মত, সরকারি চিকিৎসকের প্রাইভেট রোগী দেখা অনৈতিক বিষয়, এখানে সেবা বাণিজ্যকেন্দ্রিক হয়ে পড়ে, এমন অভিযোগও রয়েছে। অধিকন্তু এভাবে চিকিৎসকের কাছে প্রাইভেট রোগী দেখা তার মূল কাজের চেয়ে বড় হয়ে ওঠে, রোগীর প্রতি মনোযোগ কমে যায়। অবশ্য এর বিপরীত মতও রয়েছে। অফিস সময়ের বাইরে কেউ যদি সেবা প্রদানের মাধ্যমে বাড়তি আয় করতে চায়, সেটাকে অনেকে অনৈতিক মনে করেন না। তবে শেষাবধি বিতর্ক থেকেই যায়, প্রাইভেট প্র্যাকটিস চিকিৎসকেরা চালিয়ে যান। এ অবস্থায় দেশের সরকারি হাসপাতালে কর্মসময়ের পর চিকিৎসকরা ব্যক্তিগত রোগী দেখতে পারবেন, সরকার এমন একটি সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে। প্রকাশ, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের নির্দেশনা অনুযায়ী, পাইলট প্রকল্প হিসেবে আগামী ১ মার্চ থেকে ৫০টি উপজেলা, ২০ জেলা ও পাঁচটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এ সেবা চালুর কথা রয়েছে। চিকিৎসকদের এ ধরনের ইনস্টিটিউশনাল প্যাকটিস মোটের ওপর ইতিবাচকই বলতে হবে। এর ফলে তাদের পক্ষে নৈতিক অবস্থানে থেকেই রোগীদের আরও কাছাকাছি যাওয়া সম্ভব হবে। আর রোগীর যত কাছাকাছি চিকিৎসক থাকবে, ততই ভালো।

উল্লেখ্য, বিএসএমএমইউএ ইনস্টিটিউশনাল প্র্যাকটিস মডেলে কর্মসময়ের পরে চিকিৎসকরা রোগী দেখছেন ২০১১ সাল থেকে। বহির্বিভাগে বিশেষায়িত চেম্বার সুবিধা চালু করে শুক্রবার ছাড়া প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা রোগী দেখেন। ২০০ টাকার টিকিট দিয়ে ২৪টি বিভাগের চিকিৎসকদের পরামর্শ নিতে পারে রোগীরা। সুতরাং বলা যায়, এই ধরনের সেবা প্রদানের একটি মডেল সামনে রয়েছে। এর আলোকে সরকারি হাসপাতালে এ ধরনের চিকিৎসা সেবা প্রদানের চ্যালেঞ্জগুলো দেখা যেতে পারে। দেশের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জেলা ও উপজেলায় চিকিৎসকদের ‘ইনস্টিটিউশনাল প্র্যাকটিস’ শুরু হলে চিকিৎসকদের তাদের কর্মস্থলে রাখা, তরুণ চিকিৎসকদের প্র্যাকটিসের সুযোগ, এর সঙ্গে অল্প খরচে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দেখানোর সুযোগ পাবে রোগীরা। সেই সঙ্গে ঢাকামুখী রোগীর চাপ কমবে। তবে দেখার বিষয়, বেশির ভাগ জেলা-উপজেলায় সরকারি চিকিৎসার অবকাঠামো পর্যাপ্ত নয়। পাঁচজনের বেশি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই। এ ছাড়া রয়েছে লোকবল সংকট ও যন্ত্রপাতির সমস্যা। এতে রোগীরা চিকিৎসকের পরামর্শ পেলেও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার জন্য অন্যত্র ছুটতে হবে। জানামতে, আমাদের দেশে একজন রোগীর ৬৪ শতাংশ খরচ হয় ওষুধের পেছনে। এরপর খরচ হয় ডায়াগনস্টিকের পেছনে। অর্র্থাৎ এখানে ডাক্তার খরচ প্রধান খরচ নয়। এজন্য সাশ্রয়ী সেবা পাওয়ার জন্য আরও কিছু বিষয় বিবেচনায় নিতে হবে।

ইনস্টিটিউশনাল প্র্যাকটিস অবশ্যই একটি ভালো উদ্যোগ। এক্ষেত্রে আমাদের অবকাঠামোগুলো যেগুলো অব্যবহৃত থাকে, সেগুলোকে ব্যবহার করতে পারলে সাশ্রয় হয় এবং জনগণেরও সুবিধা হয়। এ ছাড়া আমাদের বিশেষজ্ঞ বা চিকিৎসকদের নৈতিকভাবে প্র্যাকটিসের সুযোগ হয়। তবে এজন্য লোকবল, প্যাথলজি বিভাগ, মেশিনারি সব কিছু নিশ্চিত করতে হবে। আর সে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা খুব কঠিন হবে বলে মনে হয় না।