ঢাকা ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

পরিবেশ বাঁচাতে গ্রিন মার্কেটিংয়ে নজর দেয়া প্রয়োজন

মো. তাজুল ইসলাম
পরিবেশ বাঁচাতে গ্রিন মার্কেটিংয়ে নজর দেয়া প্রয়োজন

পৃথিবী মানুষের আবাস্থল। সৃষ্টিকর্তা পৃথিবীকে মানুষের বাসযোগ্য করতে সব উপাদান দিয়েছেন। নদী-নালা, খাল-বিল, বন-জঙ্গল, বায়ুমন্ডল, সমুদ্র সবকিছুর সমন্বয়ে পৃথিবী মানবজাতির বাসযোগ্য হয়ে উঠেছে। মানুষ নিজের প্রয়োজনে পৃথিবীর প্রাকৃতিক সম্পদকে কাজে লাগিয়ে তৈরি করেছে কলকারখানা, দালান, বিশাল অট্টালিকা। মানবসৃষ্ট এসব জিনিস জীবনযাত্রায় যেমন গতি দিয়েছে, তেমনি অজ্ঞতাবশত পরিবেশকে ঢেলে দিয়েছে চরম বিপর্যয়ে। ১৮ শতকের মাঝামাঝি থেকে শুরু হওয়া শিল্প বিপ্লবের ফলে বিশ্বে নতুন প্রযুক্তির সূচনা হয় যা উৎপাদন ব্যবস্থায় আনে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। গড়ে উঠে বৃহদাকার উৎপাদন, তৈরি হয় বড় কলকারখানা, শ্রমিকরা কাজের জন্য নির্দিষ্ট অঞ্চলে ভিড় জমাতে থাকে। উৎপাদনে ব্যবহৃত কয়লাচালিত বাষ্প ইঞ্জিন দ্বারা সৃষ্ট ধোঁয়া বায়ুদণ্ডলের সঙ্গে মিশে শুরু হয় পরিবেশ দূষণের। দ্বিতীয় শিল্প বিপ্লবের কয়েক দশক পর ওজন স্তরের অবক্ষয়, ক্ষতিকারক অতিবেগুনি রশ্মির বিরুদ্ধে পৃথিবীর প্রাকৃতিক সুরক্ষা নিয়ে ১৯৮০-এর দশকে বিজ্ঞানীরা উপলব্ধি করতে শুরু করে। এছাড়া পণ্য প্যাকেজিংয়ে প্লাস্টিকের লাগামছাড়া ব্যবহার পরিবেশ দূষণের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে কয়েক গুণ। ফলে উৎপাদন বিপণন ব্যবস্থায় উদ্ভব হয় নতুন মতবাদ ‘গ্রীন মার্কেটিং’-এর। গ্রীন মার্কেটিং বলতে পরিবেশবান্ধব প্রোডাক্ট তৈরি ও সেগুলো গ্রাহকের কাছে পৌঁছানোর প্রক্রিয়াকে বুঝায়, যেখানে পরিবেশের যাতে কোনো ধরনের ক্ষতি না হয়, সেদিকে বিশেষ দৃষ্টি দেয়া হয়। ১৯৮০ সাল থেকে গ্রীন মার্কেটিং ধারণাটি জনপ্রিয়তা লাভ করতে থাকে। গ্রীন মার্কেটিং ধারণার উদ্ভবের পর থেকে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে বিপণন কার্যক্রমে ব্যাপক পরিবর্তন আসে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো বিপণন কার্যক্রম পরিচালনার পাশাপাশি পরিবেশের দিকেও বিশেষ নজর দিতে শুরু করে। এখানে পরিবেশ বলতে প্রাকৃতিক পরিবেশ, যেমন-নদণ্ডনদী, জলবায়ু, বন, গাছ-পালা, জীবজন্তু ইত্যাদিকে বোঝানো হচ্ছে। একই সঙ্গে মানবসৃষ্ট সামাজিক পরিবেশ, যেমন রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ইত্যাদির সমষ্টিকে তুলে ধরা হয়েছে। গ্রীন মার্কেটিংয়ে প্রাকৃতিক ও সামাজিক উভয় ধরনের পরিবেশের প্রতি সচেতন থেকে বিপণন কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। গ্রিন মার্কেটিংয়ে বিপণনকারী বিপণন কার্যক্রমের সব কাজের ক্ষেত্রে পরিবেশ সংরক্ষণ ও রক্ষার জন্য কাজ করে। যেমন-পণ্য প্রস্তুত করার সময় পরিবেশবান্ধব উৎপাদন পদ্ধতি ব্যবহার, পণ্য পরিবহন, প্যাকেজিং, সংরক্ষণ এবং প্রচারণার সময় পরিবেশের যেন ক্ষতি না হয়, সেদিকে বিশেষ খেয়াল রাখা হয়। বিশ্বের নামি-দামি ব্র?্যান্ডগুলো গ্রিন মার্কেটিংয়ে তাদের ইনভেস্টমেন্ট বাড়িয়েছে ম্যাকডোনাল্ডস তাদের রেস্টুরেন্টে যে ন্যাপকিন, প্যাকেজিং ব্যাগ ব্যবহার করে তা কাগজ দিয়ে তৈরি এবং রিসাইকেল করা সম্ভব। পেপসি বিশ্বের প্রথম প্লাস্টিকের গ্রিন বোতল তৈরি করেছে এবং এটি শতভাগ পুনর্ব্যবহারযোগ্য। ইউনিলিভার ঘোষণা করেছে যে তারা উৎপাদন কেন্দ্রগুলোতে কার্বন নিঃসরণ কমাতে যাচ্ছে। টেসলা পরিবেশ দূষণের কথা মাথায় রেখে বাজারে এনেছে পরিবেশবান্ধব ইলেকট্রিক কার। ভোক্তাও এখন পরিবেশ নিয়ে সচেতন, তাই তারাও পরিবেশ দূষণকারী পণ্য বাদ দিয়ে পরিবেশের জন্য অনুকূল পণ্য ব্যবহার শুরু করেছে। ইলেকট্রিক গাড়ির ব্যাপক চাহিদা তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ। গ্রীন মার্কেটিং ব্যয়বহুল একটি প্রক্রিয়া। উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার, রিসাইকলিং, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, পরিবেশবান্ধব প্যাকেজিংয়ে কোম্পানিগুলোকে প্রচুর খরচ করতে হয়। যা পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি করে এবং লভ্যাংশ কমিয়ে দেয়। তবুও পৃথিবীকে বাসযোগ্য রাখতে, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, জলবায়ু পরিবর্তন, গ্রীন হাউজ ইফেক্ট থেকে বিশ্বকে বাঁচাতে সব কোম্পানিকে গ্রীন মার্কেটিংয়ের দিকে নজর দেয়া প্রয়োজন।

শিক্ষার্থী

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া

[email protected]

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত