ঢাকা ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

প্রবাসীদের মৃত্যুর মিছিল ক্রমেই বড় হচ্ছে

মুনযির আকলাম
প্রবাসীদের মৃত্যুর মিছিল ক্রমেই বড় হচ্ছে

কর্মসংস্থানের জন্য বিদেশ গমনকারিদের সরকারি নিয়ন্ত্রণ এবং নীতিমালা বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা ও কার্যকর ব্যবস্থাপনা না থাকায় বিপুল পরিমাণ প্রবাসী শ্রমিকদের মৃত্যুর বিষয়টি আড়ালেই থেকে যাচ্ছে। ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তথ্য অনুযায়ী, প্রতিদিন গড়ে ৮ থেকে ১০টি লাশ আসে। তাছাড়া, দেশের ৩ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ২০০৮ থেকে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত ৪৫ হাজার ৩০১ জন প্রবাসীর লাশ এসেছে। এটি শুধু বৈধপথে বিদেশ যাওয়া এবং বিমানবন্দর দিয়ে লাশ ফেরত আসার তথ্য। এর সঙ্গে অবৈধ পথে যাওয়া প্রবাসীর সংখ্যা যোগ করলে বিদেশে প্রবাসীদের মৃত্যুর হার আরও অনেক বেশি বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন। অনেক সময় বিদেশে মারা যাওয়া অনেক প্রবাসীর লাশ দেশেও আনা হয় না, স্থানীয়ভাবেই সেগুলো দাফন করা হয়, বিশেষ করে সৌদি আরবে। বিমানবন্দরের প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের তথ্যে সবচেয়ে বেশি প্রবাসী মারা যাচ্ছেন স্ট্রোকে। এদের একটা বড় অংশই মধ্যবয়সি এবং তরুণ। এছাড়াও হৃদরোগসহ বিভিন্ন ধরনের অসুস্থতা, কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনা, সড়ক দুর্ঘটনা, আত্মহত্যা কিংবা প্রতিপক্ষের হাতেও খুন হন। বিশ্লেষকদের মতে, ভয়াবহ পরিশ্রম, সবসময় দুশ্চিন্তা, বিনোদনহীন একঘেয়ে জীবন, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে গাদাগাদি করে থাকা ও খাওয়া, দীর্ঘদিন স্বজনদের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন থাকা, এসব মিলিয়ে মানসিক চাপের কারণেই সাধারণত প্রবাসীদের স্ট্রোক বা হৃদরোগের মতো ঘটনা ঘটে। তবে প্রবাসীদের মৃত্যুর কারণ বাংলাদেশ থেকে যাচাই করা হয় না।

এ জন্য লাশের সঙ্গে আসা মেডিক্যাল রিপোর্টে মৃত্যুর কারণ হিসেবে যা উল্লেখ করা হয়, সেটাই মেনে নিতে হয়। শারীরিক কোনো জখম বা চিহ্ন দেখে মৃত্যুর কারণ নিয়ে প্রশ্ন জাগলে এ ব্যাপারে সঠিক উত্তর পাওয়ার কোনো সুযোগ থাকে না। লাখ লাখ প্রবাসী শ্রমিকের ঘাম ঝরানো কায়িক শ্রমের বিনিময়ে পাঠানো বৈদেশিক মুদ্রায় দেশের অর্থনীতি এবং সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের গতি সচল থাকলেও এসব প্রবাসী শ্রমিকের অধিকার ও নিরাপত্তার প্রশ্নে সরকারি কর্তৃপক্ষ আর দায়িত্বশীলদের ভূমিকা বরাবরই প্রশ্নবিদ্ধ। পরিবারের আর্থিক স্বচ্ছলতা ফিরানোর আশায় দেশান্তরি হওয়া অসহায় প্রবাসীদের জীবন যখন শেষ হয়ে যায়, তখন প্রবাসী পরিবারের আয়ের একমাত্র অবলম্বনকে হারিয়ে পুরো পরিবার পড়ে অকুল পাথারে। আবার হঠাৎ করে স্বামী হারিয়ে বিপাকে পড়েন স্ত্রী, বাবাকে হারিয়ে ভয়াবহ কষ্টে পড়েন সন্তানরা। সহায়-সম্বল বিক্রি করে কিংবা উচ্চসুদের ঋণ নিয়ে লাখ লাখ টাকা খরচ করে স্বজনদের বিদেশ পাঠানোর পর লাশ হয়ে ফেরত আসার পর, সেই সব পরিবারের কি অবস্থা দাঁড়ায় তা সহজেই অনুমেয়। প্রবাসীদের মৃত্যুহার ক্রমেই বাড়া দেশের ভাবমর্যাদা এবং বৈদেশিক কর্মসংস্থানের সম্ভাবনাকে আরও ঝুঁকির মধ্যে ঠেলে দিতে পারে। উদ্বেগের মৃত্যুহার রোধে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ মিশনগুলোকে প্রবাসীদের স্বার্থ রক্ষায় আরও বেশি দক্ষ ও সক্রিয় ভূমিকা পালন করার সঙ্গে বিদেশে গিয়ে দ্বিপক্ষীয়-বহুপক্ষীয় আলোচনা, শ্রমিকদের কর্মপরিবেশ, খাদ্য, বাসস্থান, ন্যায্য বেতন-ভাতা, প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা, নিরাপত্তা এবং মানবিক মর্যাদা নিশ্চিত করার কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। প্রয়োজনে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, আইএলওসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার সহযোগিতাও নেয়া যেতে পারে।

কোরপাই, বুড়িচং, কুমিল্লা

facebook.com/moonzeer

ahcklham

আলোকিত বাংলাদেশ
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত