সন্তানকে নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত করুন

দেলোয়ার হোসেন রনি

প্রকাশ : ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

শিক্ষা একটি মানুষকে করে তোলে মহান। সমাজ কে প্রতিষ্ঠিত করে গড়ে তুলতে শিক্ষিত ব্যক্তির বিকল্প নেই; কিন্তু সেখানে যদি নৈতিক শিক্ষার অভাবটা থেকেই যায়, তাহলে সেই মানুষটি দ্বারা সমাজ কতটুকুই বা প্রতিষ্ঠিত হবে? সে কি ভাবনার বিষয় নয়? একটি শিশু তখনই সঠিক মানুষ হিসেবে গড়ে উঠে, যখন তার মধ্যে নৈতিক শিক্ষার বীজ বুনন হয়।

বর্তমান সমাজ আজ অস্থিরতায় ভরপুর। প্রতিমুহূর্তে কী ঘটতে চলেছে বলা মুশকিল। প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে ধর্ষণ, খুন, চুরি, ছিনতাইসহ নানা অপরাধ। টিভির পর্দায় প্রতিদিনের খবরের শিরোনামে চোখ বুলাতেই ভেসে উঠছে অপরাধের চিত্র। কেন এই অবস্থা? ধর্ষণের হাত থেকে বাঁচতে পারছে না শিশুরাও।

অধপতন ঘটেছে চরিত্রের, ধ্বংস হচ্ছে মনুষ্যত্বও! শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেমন নিরাপদ নয়, শিক্ষার্থীরা তেমনি মায়ের কোলেও নিরাপদ নয় সন্তান। যখন তখন ঘটে যায় অনাকাক্সিক্ষত দুর্ঘটনা।

অপরাধ করেও অপরাধীর কোনো অনুশোচনা নেই। হয়ে উঠছে আরও বেপরোয়া, উচ্ছৃঙ্খল। যারা এ ঘটনাগুলো ঘটাচ্ছে তারাও আমার, আপনার মতো কোনো না কোনো মানুষ। কি বলবেন এদের? নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত এরা?

লক্ষ্য করলেই দেখা যাবে, আমাদের নৈতিক শিক্ষার অবস্থান একেবারে তলানিতে ঠেকেছে। দিনের পর দিন সবাই ছুটে চলেছে সন্তানকে নিয়ে বিশাল বিশাল প্রতিষ্ঠানে বড়োসড়ো ডিগ্রি অর্জন করানোর চেষ্টায়। যেখানে নৈতিক শিক্ষার বালাই নেই বললেই চলে। যার ফলশ্রুতিতে নিজের সন্তানই হয়ে দাঁড়ায় কাল। যেমনটি পরিলক্ষিত হয় নিজের বাবা-মাকে খুন করা বালিকা ঐশীর হত্যাকাণ্ডে। শুধু ঐশী নয়, নৈতিক শিক্ষার অভাবে সমাজের কিছু কিট নৃশংসভাবে হত্যা করেছে, বুয়েট ছাত্র আবরার ও নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র তৌহিদুলকে।

এজন্য প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি শিশুদের নৈতিক শিক্ষার চর্চা করানো অতীব জরুরি। জীবনকে সুন্দর ও সুশৃঙ্খল করতে এই শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। নৈতিক শিক্ষার অভাবে পরিবার ও সমাজে নানা সমস্যার সৃষ্টি হয়, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। আরেক দিক বিবেচনা করলে দেখা যায়, পরিবারে গড়ে উঠছে না নৈতিক মূল্যবোধের পরিবেশ অথচ পরিবারে যদি নৈতিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধের সন্নিবেশ ঘটত তবে, কোনোদিন সে পরিবারের সন্তান লম্পট আর খারাপ চরিত্রের অধিকারী হতে পারত না। পরিবার এবং সমাজের পরিবেশ অনৈতিকতায় ভরে থাকবেই বা না কেন, যেখানে হাতের কাছেই পাওয়া যাচ্ছে অপরাধের সব উপকরণ।

যে সমাজে অশ্লীলতা, অনৈতিকতা, মদ, জুয়া, নেশাজাতীয় দ্রব্য ইত্যাদি বৃদ্ধি পাবে, সে সমাজ তো ধ্বংস হওয়ারই কথা। বিলুপ্ত হবে শ্রদ্ধাবোধ, সম্মান ইত্যাদি। সেখানে জেঁকে বসবে অপরাধ। অশ্লীলতা আর অনৈতিকতা যেন দিন দিন স্বাভাবিকভাবেই মর্যাদা পাচ্ছে। সেগুলো যেন কোনো অপরাধই নয়। অবৈধ এসব কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের বাঁচানোর জন্যও দাঁড়িয়ে যায়, একদল পশু যা দেখে সংখ্যালঘু সচেতন মানুষ হয় ক্ষুব্ধ, হতাশ। প্রতিবাদের ভাষা হারিয়ে মুখ বুঝে সহ্য করা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকে না তাদের।

সম্পদশালী হলেই কী সন্তানকে প্রশ্রয় দিয়ে মাথায় তুলতে হবে? তাকে কী নৈতিক ও ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিত করার কোনোই দরকার নেই? এসব নিয়ে প্রত্যেক পিতাণ্ডমাতা, অভিভাবককে ভাবতে হবে। যে সন্তান নেশা আর অশ্লীলতার দিকে ঝুঁকবে, সে সন্তান বড় হলে কোনোভাবেই আর নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। দিন দিন অধপতনের দিকে ধাবিত হওয়া এ সমাজকে রক্ষা করতে জন্মের পর থেকেই একটি শিশুকে নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে হবে। রক্ষা করতে হবে দেশকে। বাড়াতে হবে সচেতনতা। রাষ্ট্রের সবাইকেই এগিয়ে আসতে হবে অনৈতিকতা ও অশ্লীলতামুক্ত পরিবেশ তৈরিতে। আর বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের শাস্তির জন্য কঠোর আইন প্রয়োগ করে তা বাস্তবায়ন করতে হবে, যাতে করে পরবর্তী সময়ে এমন কোনো অপরাধ করতে দ্বিতীয় কেউ সাহস না পায়।

তাই মা-বাবা, অভিভাবক, সচেতন সব মানুষসহ সরকারকেও এসব অনৈতিকতা ও অশ্লীলতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদী অবস্থান নিয়ে সমাজের সবাই মিলে যৌথ প্রচেষ্টায় নিজের ঘর থেকেই নৈতিক শিক্ষা চর্চার মাধ্যমেই শুধু একটি সুন্দর ও শাস্তিপূর্ণ দেশ গড়ে তোলা সম্ভব।

শিক্ষার্থী

জাতীয় কবি কাজী নজরুল

ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়