ঢাকা ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ভয়ংকর বিপদ মাইক্রোপ্লাস্টিকে

সচেতন হওয়া জরুরি
ভয়ংকর বিপদ মাইক্রোপ্লাস্টিকে

দেশের নদণ্ডনদীগুলোতে মাইক্রোপ্লাস্টিক ভয়াবহ দূষণ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। স্মর্তব্য, পাঁচ মিলিমিটারের কম দৈর্ঘ্যরে প্লাস্টিকের টুকরোগুলোকে মাইক্রোপ্লাস্টিক বলা হয়, যা মাছ বা শেলফিশ সহজেই গিলে ফেলতে পারে। মাছের গিলে খাওয়া ওইসব প্লাস্টিকের কণা এক পর্যায়ে মানুষের খাদ্যশৃঙ্খলে প্রবেশ করে উচ্চ স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে। বর্তমানে আমাদের নদীগুলো মাইক্রোপ্লাস্টিকে বিপদে রয়েছে। সম্প্রতি ‘সায়েন্স অব দ্য টোটাল এনভায়রনমেন্ট’ জার্নালে প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদনে এ বিষয়ক কিছু তথ্য উঠে আসে। সেখানে বলা হয়, বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনের তিনটি প্রধান নদী পশুর, রূপসা ও মোংলার পানিতে বিপজ্জনক মাইক্রোপ্লাস্টিক ছড়িয়ে পড়েছে। এ জন্য এ তিন নদীর অন্তত ১৭ প্রজাতির মাছ ও তিন প্রজাতির শেলফিশ সংক্রমিত হয়ে পড়েছে মাইক্রোপ্লাস্টিকে। উল্লেখ্য, এর আগে বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামের হৃৎপি-খ্যাত কর্ণফুলী নদীতেও এ বিষয়ে প্রায় অভিন্ন তথ্য পাওয়া গিয়েছিল। গবেষণা থেকে বলা হয়-প্লাস্টিক বর্জ্য কর্ণফুলীকে পরিণত করেছে চরম মাত্রায় দূষিত নদীতে। এ নদীতে চট্টগ্রাম শহরের প্রায় ৪০ শতাংশ প্লাস্টিকের ঠাঁই হয়। এর পরই রয়েছে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমে রূপসা নদী, যেখানে ফেলা হয় প্রায় ৩১ দশমিক ৭ শতাংশ পর্যন্ত প্লাস্টিক বর্জ্য। অন্তত ৭ মিটার উঁচু পলিথিনের বিশাল আস্তরণের কারণে সম্প্রতি চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষকে একটি ড্রেজিং প্রকল্প অর্ধসমাপ্ত রেখেই থামতে হয়েছে।

এদিকে সম্প্রতি ‘সিপিডি-গ্রিন সিটিস ইনিশিয়েটিভ’ রিসার্চের অংশ হিসেবে একটি সেকেন্ডারি ডাটা বিশ্লেষণ প্রকাশ করেছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। শুধু পশুর, রূপসা, মোংলা, কর্ণফুলী নদীই নয়, রাজধানীর আশপাশসহ অধিকাংশ নদীতে এ ধরনের দূষণের খবর নতুন নয়। ফলে ওই নদীগুলোর মাছ ও মানুষ ভয়াবহ স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে। গবেষণায় দেখা যায়, টক্সিন কার্সিনোজেন তৈরি করে এমন ১০টি পণ্যের মধ্যে রয়েছে পলিথিন ও প্লাস্টিক আইটেম। মানুষ যদি তা সেবন করে, তাহলে খুব বেশি ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এ ধরনের মাছ খাওয়ার মাধ্যমে মানুষের পেটে মাইক্রোপ্লাস্টিক যায়। যদি এটি পেটে জমতে থাকে, তবে পাঁচনতন্ত্র ধীরে ধীরে কাজ করা বন্ধ করে দেবে। যদি এটি রক্ত সঞ্চালন ব্যবস্থায় প্রবেশ করে, তবে লিভার ও কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আর তথ্য অনুযায়ী, এক প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি প্রতি সপ্তাহে ৩০০ গ্রাম মাছের পেশি গ্রহণ করে থাকলে বছরে তিনি ৭৪ হাজার ২৮২টি মাইক্রোপ্লাস্টিক কণা গ্রহণ করছেন। আর শিশুরা সপ্তাহে ৫০ গ্রাম মাছের পেশি গ্রহণ করে থাকলেও বছরে ১২ হাজার ৩৮০টি কণা গ্রহণ করছে। সারকথায়, মাইক্রোপ্লাস্টিকের কারণে দেশের বিপুল সংখ্যক মানুষ এখন ভয়াবহ ঝুঁকিতে রয়েছে।

স্পষ্টত, মাইক্রোপ্লাস্টিক খাদ্যশৃঙ্খলে প্রবেশ করে মাছ-মানুষ সবারই ক্ষতি করছে। মাছের পেট কাটলে প্লাস্টিক পাওয়া যাচ্ছে। সেই মাছ মানুষ খাচ্ছে। নদীগুলোতে টনে টনে প্লাস্টিকের বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। মানুষের তৈরি করা এই ভয়াবহ বিপদের ফলও ভোগ করবে মানুষই। তাই আমাদের যত্রতত্র প্লাস্টিক ফেলা বন্ধ করতে হবে। অভ্যাস বদলাতে হবে। দেশের নীতি-নির্ধারকদেরও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কথা ভেবে করণীয় ঠিক করতে হবে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সুষ্ঠু সমাধান করতে হবে। এ ছাড়া একক ব্যবহার্য বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বিষয়ে জনসচেতনতা বাড়াতে হবে। সমন্বিত কর্মসূচি ও সচেতনতার মাধ্যমে এই বিপদ সুরক্ষায় উদ্যোগী হতে হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত