দুর্ঘটনায় ভরা দেশ

ব্যবস্থা নেয়া দরকার

প্রকাশ : ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

চলতি বছরের প্রথম মাস অর্থাৎ জানুয়ারিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে ৬৫০টি দুর্ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে এবং এতে নিহত হয়েছেন ৬৪২ জন ও আহত হয়েছেন ৯৭৮ জন। দুর্ঘটনাগুলো ঘটেছে সড়কে, রেলে ও নৌপথে। এর মধ্যে সড়কেই সবচেয়ে বেশি ৫৯৩টি আর এতে নিহত ৫৮৫ জন। আহত ৮৯৯। একই সময়ে রেলপথে ৪৪টি দুর্ঘটনায় ৪৬ জন নিহত ৭৮ জন আহত হন। নৌপথে ১০টি দুর্ঘটনায় ১১ জন নিহত ও ১ জন আহত, ৬ জন নিখোঁজ রয়েছেন। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

বাস, ট্রাক, মোটরসাইকেল, লঞ্চ, ট্রেন সবখানেই দুর্ঘটনা। বাদ যাচ্ছে না কোনো যান। দুর্ঘটনা ঘটবে। সব দেশেই ঘটে থাকে। যাতে দুর্ঘটনার হার কমানো যায় সে ব্যবস্থা নেয়া হয় সব খানেই। হয়তো আমাদের দেশেও নেয়া হয় বা নেয়ার চেষ্টা করা হয়। তবে বিদেশে গৃহীত ব্যবস্থাগুলোতে বেশ কাজ হয় বলে জানা যায়। কেননা, দুর্ঘটনা কমাতে যেসব ব্যবস্থা নেয়া হয়, তা চালকরা মানতে বাধ্য হয়। যারা মানতে চায় না, তাদের ক্ষেত্রেই দুর্ঘটনা কমানো সম্ভব হয় না। আমাদের দেশে হয়তো তেমনই অবস্থা। দুর্ঘটনা কমানোর জন্য যেসব নিয়ম আছে, যেসব নির্দেশনা আছে, তার কতটুকু আমাদের দেশের চালকরা পালন করে, তা রীতিমতো গবেষণার বিষয়। বিশেষ করে সড়কে যারা যান চালান তাদের অধিকাংশই কোনো আইনের তোয়াক্কা করেন না। ফলে যা হওয়ার তাই হচ্ছে। সড়কেই দুর্ঘটনা বাড়ছে। চালকরা যে কোনো কিছুই মানতে চান না, তা ঢাকা শহরেই লক্ষ্য করলে বোঝা যায়। যে যেমন পারছে গাড়ি চালাচ্ছে। কে আগে যাবে এমনই এক প্রতিযোগিতা লক্ষ্য করা যায়। বিশেষ একশ্রেণির বাস আছে, যারা দুটি বেশি পয়সার জন্য বিশৃঙ্খলাভাবে বাস চালান। রাস্তার মাঝখানে বাস দাঁড় করিয়ে যাত্রী ওঠা-নামা করানোর ফলে যেমন যানজটের সৃষ্টি হয়, তেমনি ওই বাসকে অতিক্রম করার সময় দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। এ তো গেল ঢাকা শহরের কথা। বাইরের অবস্থা আরও ভয়াবহ। ঢাকার বাইরে সারা দেশে যেভাবে যানগুলো চলাচল করে, তাতে মনে হয় দেশে যান চলাচলের জন্য কোনো আইনই নেই এবং থাকলেও তা কেউ জানে না অথবা কেউ তা মানে না। দেশের অধিকাংশ দুর্ঘটনাই ঘটছে বেপরোয়া গাড়ি চালানোর জন্য। ব্যাপক জানমালের ক্ষতি হচ্ছে; কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। চালকদের নিয়ন্ত্রণে আনাই যাচ্ছে না। কেন যাচ্ছে না, কেন তারা নিয়ম মানতে চাচ্ছেন না, তা নিয়েও গবেষণা প্রয়োজন। জনযানে দুর্ঘটনা হয় চালকের খামখেয়ালির কারণে। হয়তো প্রয়োজনের বেশি যাত্রী ধারণ, এখানেও আগে যাওয়ার একটা প্রবণতা থাকতে পারে। অনেক সময় যাত্রার আগে সবকিছু পরীক্ষা না করার কারণেও দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। আর রেলের দুর্ঘটনার মূল কারণ হলো দুর্বল লাইন। দেশের অনেক স্থানেই লাইনগুলো খুবই দুর্বল। যার ওপর দিয়ে ট্রেন চলাচল খুবই ঝুঁকিপূর্ণ হলেও তা চালানো হচ্ছে। ফলে ঘটছে দুর্ঘটনা। ট্রেন লাইন থেকে পড়ে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটাচ্ছে।

অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, দেশ ক্রমেই দুর্ঘটনায় ভরে উঠছে। এর স্থায়ী সমাধান দরকার। এখানে কর্তৃপক্ষকে যেমন কঠোর হতে হবে, তেমনি যারা যান চালান তাদেরও সব আইন মেনে চলতে হবে। আমাদের বিশ্বাস, যান চলাচলের যে আইনগুলো রয়েছে, তা হুবহু সবাই পালন করলে দুর্ঘটনার হার অনেক কমে আসবে। এখন যে দুর্ঘটনা ঘটবে তা নেহাতই দুর্ঘটনা। আমাদের বিশ্বাস, দুর্ঘটনার সব কারণ দূর করে আইন মেনে সুষ্ঠুভাবে যান চলাচলেই এত দুর্ঘটনা আর ঘটবে না।